হে মানব!
আমি একটি নদী,
যার দুই কোল জুড়ে আছে, ঘর-বাড়ী, হাওর-বিল আর বন-বনানীর মিলন মেলা
গাঁয়ের মানুষগুলো তাই, আমার এই দৃশ্য দেখিতে দেখিতে পার করে দেয় সারাবেলা।
এ যেন প্রকৃতির প্রেমে তোমাদের হারিয়ে যাওয়ার নিঃস্বর্থ ভালবাসার এক খেলা।


হে মানব!
সারা বাছর জোড়ে আমি বয়ে চলি এক নিলাঞ্জনার স্বর্গীয় জল
আজ এই ভরা বর্ষায়, তবো কেন নেই মোর যৌবনের মতো পলিমাটির ঢল?
সামান্য বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি, আমি আজ করিতে পারি না স্বাচ্চন্দে নির্গত
কেনইবা বন্দ করে রেখেছ আমার স্বাভাবিক বয়ে চলার পথগুলো যত্রতত্র!


হে মানব!
আমিতো তমাদেরই সেবক, যার ঘুম নেই দিবা কিংবা রাতে
একাধারে বয়ে চলি প্রভাতের সূর্য থেকে রাতের জুৎনার আলোতে।
আমার মিলনের প্রধান মোহনা ছিল প্রিয়তমা কোশীয়ারা নদ
তোমাদের কারসাজীতে আজ সেখানে গড়ে উঠেছে বড় বড় দালান কোঠা,
এ যেন এক বিশাল অট্টালিকার হ্রদ।


হে মানব!
আমার তটনে বয়ে চলা চাষের জমিগুলো কেন আজ ধু ধু মরুভূমি?
ভালবাসী বলেই কি, প্রতিদানে আমায় করিলে তোমরা বদনামী!
কেন আজ কৃষকের মুখে নেই সেই দিনের সুণা ফলা ফসলের গল্প?
বন্ধ দোয়ার টপকে আজ যে উরর্বর মাটি বয়ে আসে, ইহা পরিমানে খুবই অল্প।  


হে মানব!
এখন ও কি তুমি রহিয়াছ ধাঁধার মাঝে!
তোমার হৃদয়ে কি আমার সুরের ঝংকার একবারের জন্যেও নাহি বাঝে?
আমি হচ্ছি তুমারই গাঁয়ের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা একটি ছোট নদ, যার নাম কোঁড়া!
এই জন্মে আমি আর হইব নাকো কক্ষনই বোড়া।
কবিতার মাঝে কবি গাইলেন আমার স্বাম্মের গান
তুলিয়া ধরিলেন হরেক তথ্য, অনেকরই কাছে হইতে পারে বেমানান।  


বিঃ দ্রঃ সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার একটি ঐতিয্যবাহি গ্রামের নাম ভাদেশ্বর যার বুক চীরে বয়ে চলেছে অত্যান্ত সু-প্রাচীন একটী নদী ইহার নাম "কোঁড়া নদী"। কালের পরিবর্তনে আর নদীগ্রাসীদের আগ্রাসনে আজ থেকে প্রায় ২০/২২ বছর পূর্বে এই নদীর প্রধান মোহনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আজ এই মোহনায় গড়ে উঠেছে দালান কোঠা, ঘর-বাড়ী যা দেখে বুঝার কোন উপায়-ই নেই যে একদিন এখানেই ছিল কোঁড়া নদের মূল মোহনা যা মিশে গিয়েছিল অন্য আরো একটি অত্যান্ত প্রাচীন নদের সাথে যার নাম "কোশীয়ারা নদী"। কোশীয়ারা নদের মূল নদ ইন্ডিয়ার বোরাক নদী। এই বোরাক বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে দিয়ে প্রবেশ করে দু ভাগে বিভক্ত হয়েছে, যার একটি  কোশীয়ারা ও অন্যটি সুরমা নদী নামে পরিচিত। কোঁড়া নদে সারা বছর জোড়ে পানি থাকলেও ঐ পানি কৃষি কাজে সেঁচের জন্য যথেস্ট নয়। তার প্রধান কারন, নদের মুল মোহনা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে কোশীয়ারা নদ থেকে এখন আর কোন পানি আসতে পারে না এবং বন্যা চলে যাওয়ার পরে নদীর পানি ইহার পার থেকে এতটাই নীচে নেমে যায় যে, ঐ পানি চাষের জমিতে ব্যবহার করতে হলে পাম্প ব্যবহার করা ছাড়া অন্য কোল বিকল্প ব্যবস্থা নেই। আবার সেই পাম্প ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন জ্বালানি যা একজন দরিদ্র কৃষকের পক্ষে বহন করা প্রায় অসম্বব। যদিও প্রধান মোহনা বন্ধ করে দেওয়ার পর কয়েকজন সচ্ছল কৃষক যৌতভাবে পাম্প ক্রয় করে কয়েক বছর চাষাবাদ করেছিলেন। কিন্তু পরপর কয়েক বছর বন্যার পানি জমিতে প্রবেশ করতে না পারার কারণে দিন দিন  জমির উর্বরতা হ্রাস পায়। ইহাতে ফসল উৎপাদন একই সাথে হ্রাস পেতে থাকে। যারফলে বহু কৃষক প্রায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই এই পেশা ছেড়ে দেন। আজ থেকে ২০/২২ বছর পূর্বে যখন নদীর মোহনা খোলা ছিল তখন প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি কোশীয়ারা নদের পানির সাথে এই নদী তথা এর আশপাশের জমিতে ঢুঁকে পড়ত। জমিতে এই পলিমাটি ঢুঁকে পড়ার কারণে প্রচুর পরিমাণে চাষাবাদ হত। তাতে কৃষকের মুখে সারা বছর জোড়ে হাঁসি লেগে থাকত। কিন্তু আজকের বাস্তবতা হচ্ছে, কেবল মাত্র বন্যার সময় কোশীয়ারা নদের দুই কোল ডুবে গেলে ঐ পানি এই নদে আসতে পারে। এক সময় এই নদীতে জেলেরাও প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরতে পারত। ইহার কারণ ছিল, বন্যায় ভেসে আসা উজানের পানির সাথে যেমনটি পলিমাটি ভেসে আসত, তার সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণে মাছ ও ভেসে আসত। এই নদীর কোল জোড়ে জেলেদের কয়েকটি গ্রাম গড়ে উঠেছিল যা আজও বিদ্যমান। নদীতে পূর্বের ন্যায় মাছ না থাকার কারণে আজ জেলে পল্লীর বহু জেলে এই পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।
এই নদের সাথে রয়েছে আমার হৃদয় মাখামাখী, ফেলে আসা যৌবনের বহু সৃতি। আমার অনেক দিনের বাসনা ছিল এই নদকে নিয়ে একটি সুন্দর কবিতা লিখব। জানি না আমি কবিতা লিখতে পেরেছি কি না, তবে কবিতার ভাষার এই নদের অনেক কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।
আমার এই মহৎ প্রয়াস যদি আপনাদের সামান্যতম আনন্দ দিয়ে থাকে তবে নিজে কে ধন্য মনে করব।