আসলে কবিতা কি?


কবিতা কী ভোরের সূর্য, গোধূলীর আবির, রাত্রির গান, ভরা পূর্ণিমার স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, দিনের আলোয় ব্যস্ততা, আকাশের নীল, সাগরের ঢেউ কল্লোল, বৃষ্টির সজীবতা, বিস্তৃত মাঠে সবুজের ঢেউ খেলা, দিগন্তের চোখ, নিঃসঙ্গ দ্বীপ, পাহাড়ের নীরব-দৃঢ়তা, হিমাচলের দুর্গমতা, নির্জন অরণ্য, বাতাসের শব্দ সুর, পাখিদের কুজন, মেঘের গর্জন, ঝরা পাতার গান, নিসর্গ নৈঃশব্দের ছন্দ,‌ ‍ঋতুর আবর্তনে প্রকৃতির অপরূপ সাজ, ঝর্ণার উচ্ছলতা, নির্ঝরের স্রোতধারায় বহতা নির্ঝরিণী, নাকি প্রকৃতির রুদ্ররূপ-চোখ রাঙানি, কালবৈশাখী, ভয়ানক জলোচ্ছ্বাস, প্রচন্ড ঝাকুনি, অনাকাঙ্খিত বন্যা-খরা।


কবিতা কী অন্তর নৈঃশব্দের স্পন্দন, প্রগাঢ় বিশ্বাস-উপলব্ধির উর্বরভূমি, অসীম প্রত্যাশা, প্রত্যাশা ভঙ্গ, মানুষ-সমকাল-সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, লাঞ্ছনা-হিংস্রতা, যুদ্ধ, মৃত্যু, লাশের মিছিল নাকি শান্তির কথন গাথামালা।


কবিতা কী ইতিহাস, ভূত, বর্তমান, ভবিষ্যতের অবলোকন, কবিতা কী বিশ্বায়ন, পৃথিবীর সংকট-বিপর্যয়; কবিতা কী জীবনচর্চা, জীবনের নিগূঢ় রহস্য চৈতন্য, মানব সত্তার গভীর মূল্যায়ন, জীবনের অসঙ্গতি, মানব মানসের স্বরূপ ও সঙ্কট, জীবনের সম্ভাবনা, সৃষ্টি রহস্য, শিকড়ের সন্ধান, প্রেম-বিরহ, ভালবাসা-মমত্ব।


কী বিষ্ময়! কবিতার কী এত বিশাল সংজ্ঞা হতে পারে!
আসলে কবিতার কোন সীমারেখা-পরিসীমা নেই। কবিরা কিছু শেখায় না, শুধু মানুষকে স্পন্দিত করে - অনুপ্রাণিত করে। কেউ কেউ বলে থাকেন কবিতা হলো শিল্পের শিল্প।


তাইতো বলতে হয়, কবির নিজস্ব স্বাধীন অন্তর জগতে ক্ষণকালের স্পন্দিত নিগূঢ়-আত্মিক ভাবনা বা উপলব্ধিগুলো বর্ণ, শব্দ আর ভাষার পাখনায় ভর করে ছন্দ বা উপমার শিল্পীত চোখে দিগন্তে তাকিয়ে উড়ে উড়ে পাঠক-শ্রোতার সন্মূখে বিমূর্ত বা প্রমূর্ত হয়ে হাজির হয় কবিতা।