হ্যাঁ গৌরী, তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
তোমাকে ভালো না বেসে পারা যায় না,
তোমাকে ভালো না বেসে বাঁচা অসম্ভব।
আমার প্রতি নিঃশ্বাসে, প্রতিটি হৃৎস্পন্দনে
তোমার বসতি।
কী ক’রে আমি পথ হাঁটবো, আকাশের দিকে
দৃষ্টি মেলে দেবো সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত দেখার জন্যে,
কী ক’রে আমি আঁজলায় ভরে নেবো শান্তির জলধারা,
কী ক’রে আমি কবিতা লিখবো
তোমাকে ভালো না বেসে?
হ্যাঁ, গৌরী, তোমাকে ছাড়া আমার জীবন
অচল মুদ্রা বৈ তো নয়।
হ্যাঁ, গৌরী, তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
সুন্দরবনের আরণ্যক শোভার শপথ,
গারো পাহাড়ের আর্ত নিস্তব্ধতার শপথ,
উত্তরবঙ্গের রাঙামাটির পথের শপথ,
পার্বত্য চট্রগ্রামের পাকদন্ডি, ঝর্ণা আর
পাহাড়ি যুবার অপার বেদনার শপথ,
মেঘনার অজস্র ঢেউয়ের শপথ,
পদ্মার ঝলসে ওঠা চকচকে ইলিশের শপথ,
পরিযায়ী পাখিদের অনলস রঙিন ডানার শপথ,
তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।


হ্যাঁ গৌরী, তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
মসজিদের কবুতরময় গম্বুজ আর উঁচু মিনারের শপথ,
মন্দিরের সন্ধ্যাপ্রদীপ আর ঘন্টাধ্বনির শপথ,
নির্জার আইকনের, অর্গানের প্রার্থনা-মন্দ্রিত সঙ্গীতের শপথ,
বৌদ্ধ বিহারের নিরলঙ্কার সৌম্য কান্তির শপথ,
তোমাকে, হ্যাঁ শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।


নীল পদ্মের উন্মীলন, সরোবরের জ্যোৎস্নাঝলসিত আহ্বান,
হরিণের চোখের মায়া, উদাস দুপুরে ঘুঘুর ডাক,
সন্ধ্যামগ্ন ঝোপঝাড়ে জোনাকির জ্বলে-ওঠা আর নিভে যাওয়া,
সাঁঝ-লাগা গাঁয়ের পথে রাখালের ঘরে ফেরা,
ঘাটে-ভেড়া নৌকার মৃদু আলো আর
নূর হোসেন স্কোয়ারের জাগরণের শপথ,
অপশাসন-বিরোধী প্রতিবাদী মিছিলের শপথ,
তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।


পেত্রার্কার সনেট, কাতাল্লুসের প্রেমের কবিতা,
রবীন্দ্রনাথের
গীতবিতান, রুমির মাসনভি, গালিবের পাথরের বুকে
ফুল-ফোটানো গজল, ওস্তাদ আবদুল করিম খাঁর
‘যমুনা কে তীর’
চাইকোভস্কির রাজহংসী শোভিত হ্রদের অলৌকিক
বিচ্ছুরণ,
বাংলার অজানা মাঝির মেদুর গলার ভাটিয়ালী,
উত্তরবঙ্গের এবড়ো-থেবড়ো পথে গাড়িয়াল ভাইয়ের ভাওয়াইয়া
এবং আমার সকল লেখা এবং না-লেখা কবিতার শপথ,
তোমাকে, আজ শুধু তোমাকেই ভালোবাসি, গৌরী,


   (তুমিই নিঃশ্বাস তুমিই হৃৎস্পন্দন কাব্যগ্রন্থ)