প্রতিদিনের পেয়ালা থেকে তুলে নেই ফোটা ফোটা আনন্দরস।
যেন অমৃতের বিশালকায় মহাসমুদ্র
আকন্ঠ পানে কমে না একটুকুও।
সোমরস আছে সে পাত্রে
সিসিলির বা স্পার্টার লাল মদিরা তার কাছে নস্যি।
এক ঢোক গলায় চালান দিলে
সমস্ত ক্লান্তি উবে যায় নিখাদ কর্পূরের মতো।
পেয়ালায় প্রতিনিয়ত যোগ হয় নতুন স্বাদ গন্ধ স্পর্শ।
কখনো বলাকার উড়ন্ত ছায়া
কখনো শ্বেত শুভ্র দোলনচাঁপা
কখনো বা নিষ্পাপ ফোকলা হাসি
কখনো নীরব আশীর্বাদ
কখনো আষাঢ়ের শ্রাবণধারা
কখনো বা সচকিত সাবধান বাণী।
ভাদ্রের তীব্র দাহকালে
একমুঠো শান্তি ছুড়ে দেয়
কাঁচের জানালার ওপাশে বসা শালিক।
পেয়ালা আমার পূর্ণ হয় ফেনিল মদিরায়।
যখন কানে ভেসে আসে
মৃত লেকের ধারে ছাপড়া ঘরের থেকে
বিষন্ন বাঁশির আকাংখিত প্রেম।
পেয়ালা আরও ভরে যায়
কালসাপের চেয়ে বিষাক্ত মানবের উগরানো বিষে।
তখন নীলকন্ঠ হই
টেনে নিই মহোল্লাসে সমস্ত বিষ।
সারা শরীর নীলে নীলাক্ত হয়ে ওঠে।
ইচ্ছে হয় শেতলা দেবীর মত
উজাড় করি বিষাক্ত মানবের জাত
বিষ শূণ্য করি বসুন্ধরা।
এখনো হয়ে ওঠেনি -
অপেক্ষায় আছে মন সময়ের আহ্বানের।
সোমরস আবার উপচে পড়ে পাত্রে আমার
নীল ডুবে যায় মদিরার মাঝে।
হঠাৎ নাকে আসে ছাতিম গাছের নেশাধরা ঘ্রাণ
চেয়ে দেখি সবুজ ঘাসের বেড়ে ওঠার সংগ্রাম
ছেঁড়া বই আর ছেঁড়া খাতা হাতে অমলিন হাসি।
যুথবদ্ধ আনাগোনা মুষ্টিবদ্ধ পেশীহীন হাত
দেখি পরিবর্তনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ
সেই সব তরুণী আর তরুণ
যাদের মনে করা হয় ফার্মের মুরগীর দল।
চেতনা পাঁজরে লিখে মুছে ফেলা যায় শ্রেণিসংগ্রাম
নিয়নবাতির আলোতে ঢেকে রাখা যায় অভুক্ত মুখ
জাতীয়তাবোধ আর ধর্মের আফিমে
টুটি চাপা যায় স্বকীয় ভাবনা আর প্রগতিশীলতা।
এসবই খড়কুটো দিয়ে ঢেকে রাখা দাবানল
একটা স্ফুলিঙ্গ ছারখার করবে সাজানো সাম্রাজ্য।
আমি শুধু পেয়ালা ভরে চলি
সোমরস আর বিষে
রাজহংসের মতো টেনে নেই খুদ কুড়ো
কাকর বিছানো নতুন পথের বাঁকে।
সমস্ত পৃথিবী আজ আমার খুটে খাওয়া উঠোন
মদিরা পাত্র ভরে উছলায় যখন তখন।


০৭.০৮.২০১৭