তাকাও আমার দিকে,
বলো কি দেখতে পাও ...


চোখ ?
... নেই তো!
... সেই কবেই ওরা কেড়ে নিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে ল্যাবরেটরিতে।


ওরা বলে,
আমার নাকি দেখার অনেক সাধ,
খুব নাকি দৃষ্টিপাতের বদঅভ্যেস,
আর যেখানে সেখানে নজরদারীর চুলকানি।


ওরা বলে, আমার নাকি  
দৃষ্টিজুড়ে কৌতুহল, প্রশ্ন, অন্বেষণ আর সন্ধানের তীব্র ক্ষুধা,
দিন বদলের স্বপ্ন, বিভাজনহীন ঐক্যের ভয়ঙ্কর পিপাসা,
আর জীবনের গান গাইতে থাকার দুর্বিনীত স্পৃহা ...


কদাপি দ্রোহের উত্তাপ, প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ, বিগ্রহের আগুন,
নিয়ম ভাঙার উন্মাদনা, উড়াল দেয়ার অভিলাষ,
দেয়াল ভেঙে চুর করার নিরেট আবেগ ...


অথবা কখনও আবিষ্কারের নেশা, মঙ্গল কামনার বাতিক,
প্রেমের সুরা, মমতার বর, চারুতা কবজ ...
আর ভালোবাসার অতল সায়র।


জানো ...
এসবে ওদের খুউব অস্বস্তি, ভীষণ শঙ্কা,
আর একেবারে অপরিমেয় উদ্বেগ।
তাই বাইফোকাল চশমা দিয়ে বলেছিলো,
“দূরদৃষ্টি বেশ ঘোলাটে,  
আর ক্ষীণদৃষ্টিতে দেখছো না ভালোমন্দের তফাত।”


কালচে সেই বাইফোকালে চলে বায়োস্কোপ ...
রঙচঙে অবয়বে রেটিনাতে আলোকপাত করে
ওদের সাজানো দৃশ্য, সুবিধা-তত্ত্বের প্রতিপাদিত জীবন,
নিয়ণ্ত্রিত স্বপ্ন, ঝকমকে মোড়কে অনৈতিক দর্শন,
বিরচিত আনুগত্যের বিজ্ঞাপণ, ফরমালিন-দুষ্ট খবর,
বোঝাপড়া-যজ্ঞের জয়জয়কার, নিরূপিত সুখের টোটকা,
আর চোখ ফেরানোর তাগিদ ...
অথবা লোভ ... অথবা ভয়!


চশমা খুলে ফেলার অপরাধে ওরা
নিয়ম-কাঁটা দিয়ে আমার দুচোখ উপড়ে ফেলেছে ...
ল্যাবরেটরিতে নিয়ে এটা সেটা মিশিয়ে
মৃত রেটিনার ময়না তদন্ত চলছে প্রতিদিন।
স্বপ্ন, পিপাসা, স্পৃহার ধমনী কেটে
উন্মাদনা-অভিলাষ-আবেগ কর্নিয়ার ব্যবচ্ছেদে খোঁজা হচ্ছে
দ্রোহ-প্রতিবাদ-বিগ্রহ-প্রেম-মমতা-ভালোবাসার মতো
অবিশ্বাস্য, বিকট, সর্বগ্রাসী আস্পর্ধা ...
অথবা অবাধ্যতার উত্স।


জানো ...
ইদানীং ওদের ল্যাবরেটরি ভরে যাচ্ছে
অবাধ্য এমন জোড়াচোখের যোগানে!


তাকাও আমার দিকে,
তাকিয়ে থাকো ...
ওরা তোমাকেও চশমা দেবে।


এরপর তোমার দুঃসাহসী চোখও জমা পড়বে
ল্যাবরেটরিতে।