আমার ‘মা’ বয়স আশি হবে অথবা তার চেয়ে কিছু কম বা বেশি।
হালকা পাতলা মানুষটা সুস্বাস্থ কখনো দেখিনি তবে সুস্থ দেখেছি।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদিন প্রজাপতির মতন
ছুটাছুটি করে সংসারের কাজ শেষ করতো,
আর আমাদের জন্য খাবার তৈরী করতো।
শত ব্যস্ততায়ও নামাজ পড়তো নিয়মিত।
নিজে লেখাপড়া বেশি করেনি তবে আমাদেরকে!
মক্তবে ও স্কুলে পাঠাতে কত যে বকুনি আর তাড়া দিত।


বাবার একটা তিন ব্যাটারির থ্রি ব্যান্ড রেডিও ছিলো
আর তাতেই ছিলো আমাদের সকল বিনোদন
রাতে আমি বাবা ও মায়ের মাঝখানে শুইতাম।
বাবা রেডিওতে খবর নাটক শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরতো
আর ‘মা’ নানা ধরনের গল্প আর কবিতায় আমাকে ঘুম পাড়াতো।
সেই দিনগুলি আজো হৃদয়ের কেনভাসে ছবির মতো ঝলমল করে।


১৯৮৮ সালে বাবা মারা গেলেন, সাথে নিয়ে গেলেন মা'য়ের সব স্বপ্ন।
‘মা’ বউদের কাছে সংসারের চাবি ছেড়ে দিয়ে যেন দায় মুক্ত।
সুখ দুঃখ হাসি কান্না আনন্দ বেদনায় এতটা বছর কেটে গেলো।
দিনদিন ‘মা’র স্মৃতি শক্তি কমে যাচ্ছে কিছুই মনে রাখতে পারেনা।


এখন আমার বয়স ৪২, দুটো ছেলেমেয়েও আছে, কিন্তু মায়ের স্মৃতিতে!
আমি কখনো তার কোলের বাচ্চা আবার কখনোবা সদ্য যুবক।
প্রায়ই ঘুমে থেকে উঠে তার বিছানায় আমাকে খুঁজে, আর
একে ওকে জিজ্ঞাসা করে “আমার আবুইদ্দাটা কই”? “আবুইদ্দাটা কই”?
আমি হারিয়ে গেছি এই ভয়ে আবার হাউমাউ করে কান্নাও করে।


আবার মাঝে মাঝে সবাইকে বলে আমাকে বিয়ে করাতে হবে
এমনকি আমার বউকেও বলে আমার জন্য মেয়ে দেখতে।
‘মা’য়ের ভাবনায় সারাক্ষণ শুধুই তার বাচ্চা, যে কিনা
কখনো শৈশব কখনো কৈশোর আবার কখনোবা
সদ্য যুবক হিসেবে স্মৃতিতে ভেসে উঠে।


হে দয়াময় এমন করে হলেও মা’কে
আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখো দীর্ঘদিন।
তাকে তুমি সেই কঠিন যন্ত্রণার স্বাদ দিওনা।
আমাদের সকল সুখের বিনিময়ে হলেও তাকে তুমি সুস্থ রাখো।
*****


রচনাকাল: ০১ অক্টোবর ২০১৭


*আবুইদ্দাটা=বাচ্চা