কালো মেয়ের গল্প


একটা সাধারণ মেয়ের গল্প লিখবেন রবিবাবু
খুব সাধারণ, অতি সাধারণ মেয়ের গল্প।
না দেখতে রুপসী নয়, পড়াশোনায় ও বিদূষী নয়।
গুনবতী কি না, বলা মুশকিল।
আমি বোধ হয় সমস্যায়​ ফেললাম, রবিবাবু
রসদ নেই , উপকরণ নেই, কেমন করে লিখবেন
মেয়েটি ছিল কালো, রঙ না বলে উপায় নেই।
জীবন যে তার ওখান থেকেই শুরু
ছেলে বেলা থেকেই শুনে আসছে
কালো মেয়ের গতি কি হবে
গল্প , কথায়,গানে মা তাকে তৈরি করেন নিজের মনে।
একদিন ঘটা করেই হয়েছিল বিয়ে
কালো মেয়ের গতি হলো বটে
শশুড় বাড়ী  সারাটা দিন খেটে মরে
দিন ফুরোলে ভাবে বসে , জীবন কাকে বলে ?
সকাল  বিকাল একটি কথাই কানে তার বাজে
কালো মেয়ের এমন ভাগ্য মেলে
স্বামী তার বেজায় ভালো
পণের পর পণ নিয়ে ও মন ভরেনি
অফিস থেকে ফিরে এসে
প্রতি দিনই মনে করায়
বুঝেছো, আমি মহৎ বলেই করেছি এ বিয়ে।  
দিনের পর দিন চলে যায় এভাবেই,
এরপর নেমে আসে ঘোর অমানিশা
স্বামী তার মারা যায় সড়ক দূর্ঘটনায়।
বাইশ বছরে শেষ হলো জীবনের প্রথম অধ্যায়,
অপয়া, অলক্ষী, কালো মেয়ের ঠাঁই হলো বাবার ঘরে। অবস্থা দেখে বাবা পারি দিলেন  স্বর্গে
দিন রাত অবিরাম শুনতে পায়
দাদার কাছে, বৌদির কাছে
সে আর মা দুজনা এ বাজারে ভারী বোঝা।
মেয়েটি এবার বুঝতে পারে
নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
ভাগ্য তাকে পথ দেখায়
স্কুলের চাকরি আর দুই চারটা​ গানের টিউশনি
বেশ ভালো ভাবেই কাটল কিছু দিন।
এবার তার শেষ সম্বল মা ও গত হলেন,
এখন শুধু সাদা রঙের শাড়ি আর দীর্ঘ সময় পারি,
সাদা শাড়ির​ এত শুভ্রতা চোখে পড়েনি আগে কখনো
কি ভীষণ পবিত্র আর শুভ্রতায় প্রস্ফুটিত চোখ,
এত সুন্দর, এত আনন্দ যেন মুক্তির আকুলতা।
বাইশ বছর বয়সে জীবন দেখে ফেলা,
রবিবাবু, তোমার হৈম কিংবা কুড়াঁনি নয়,
একটু খানি ভালো,কলমে তোমার শক্তি কতো
এবার ওকে বাঁচিয়ে তোল, জীবন মানে বোঝাও
দীর্ঘ সাগর পাড়ি দিবে, কেমনে ওকে শেখাও
রবিবাবু জেগে উঠো, কলমখানি ধরো
খুব সাধারণ গল্প লেখো, কালো মেয়ের গল্প।