ফিরে দেখা
মায়ের হাতটি ধরেই প্রথম বর্ণমালা শেখা
শব্দ করে গহীন চরে, শব্দ গঠন করা
মা, বা-বা, দা-দা সবই তখন মধুর সুরে বলা।
কি অানন্দে, নবীন প্রানে নব প্রান জেগে ওঠা।
মায়ের খুশী রাজ্য জয়ের
খুশীর শব্দ শেখা।
একটু ভেবে দেখা,
এরপরেতে শক্ত করে মায়ের হাতটি চেপে ধরে
প্রথম মোদের স্কুলেতে যাওয়া।
স্কুলের মাস্টার মশাই শব্দগুলো সাজিয়ে নিলেন
যেন যাদুকর, শেখান মোদের।
অ-তে অজগরটি ঐ অাসছে তেড়ে
অা-তে অামটি অামি খাবো পেড়ে।
এমন করে দিন চলে যায় দিনান্তরে।
স্বপ্ন জয়ের তরী বেয়ে। এখন অামরা অনেক বড়,
মাস্টার মশাইর স্বপ্ন যেমন, বোধকরি তার চেয়েও বড়,
কেউবা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা অফিসার,
ভুলেই গেছি পিচ্ ঢালা এই পথ চলাতে
সেইসব দিনের কথা।
একটু ফিরে দেখা,
ছেলের অামার অনেক জ্বর
সারা রাত্র মাথায় ব্যাথা
মায়ের মন অস্থিরতায়
তাই যথারীতি মধ্যবিত্তের রীতি মেনে
ডাক্তার বন্ধুকে ফোন করা
বললাম, শোন অামার ছেলের ভীষন জ্বর
একটু সময় দিবি?
বন্ধু অামার বলে উঠল নিশ্চয়ই, কেন এত ভনিতা,
শীঘ্রই নিয়ে অায়।
সময় যেন কাটেনা, তাই নির্ধারিত সময়ের অগেই
ডক্টরস্ চেম্বারে ঢুকে পড়লাম
বৃদ্ধা লোক রুমাল দিয়ে চোখ মুছছেন ।
ওকেও দেখলাম বিরক্ত
পি, এস, কে ডেকে বকলো অনর্গল।
বললো, কতদিন তোমায় বলেছি
এসব patient এখানে নয়, হাসপাতালে পাঠাবে।
ইত:স্তত অামি জিজ্ঞাসিলাম কি হয়েছে?
অার বলিসনা দোস্ত,
গ্রামের এসব লোক কোথা থেকে যে reference নিয়ে অাসে,
জানিস, ফিস পর্যন্ত দিতে পারে না।
চেক অাপ তো দূরের কথা।
অাহা! মনটা ভীষণ ভারী হল, বেচারা।
ইতিমধ্যেই ছেলেকে নাড়ী টিপে দেখে বললো
তেমন কিছু নয়, ঠাণ্ডা জ্বর
বুকে একটু কফ বসেছে
ওষুধ দিচ্ছি লিখে।
তারপর বেরিয়ে এলাম ছেলেকে কোলে নিয়ে
হঠাৎ দেখি, সেই লোকটি না
ও-মা চিনলাম উনি তো অামাদের মাস্টার মশাই
দ্রুতপায়ে ছুটে গেলাম কাছে
শুধোলাম, স্যার অামি নীরুপমা
কেমন অাছেন?
না চেনার ভান করলেন, দুর্বল পায়ে হেটে চললেন
অামি নাছোড়বান্দা।
পিছু নিলাম,স্যার অামায় চিনতে পারছেন না?
কি ভেবে থামলেন, বললেন হ্যাঁ পেরেছি।
তুমি নীরুপমা, তাইনা?
অংকে তুমি ভীষণ কাঁচা, বলেই হাসলেন।
অামি বুঝলাম, অনেক কথা হলো এরপর
স্যারকে বললাম, স্যার বাড়ী অামারপাশেই
যদি একটি দিন থাকেন।
স্যার বললেন, সে কি করে হয়?
তোমরা এত ব্যস্ত মানুষ
সময় কোথায় সময় নষ্ট করার।
তাছাড়া যেতে হবে অামায় অনেক দূর।
কষ্টটুকু বুঝতে পারলাম।
ফিরে এলাম গাড়ির কাছে।
ছেলে অামার বলে উঠলো,
কাঁদছ কেন মা?
জ্বর অামার সেরে যাবে।
অাচ্ছা বেশ, বড় হয়ে ডাক্তার হবো
তুমি কেঁদো না।
বললাম না, , ডাক্তার নয়, ইঞ্জিনিয়ার নয়,
বড় হয়ে মানুষ হয়ো। অামার মতো নয়।
মনে মনে বলি
স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টি বড় হলে
প্রলয় হবে নিশ্চয়ই।।