নব জীবন স্বর্গের মতন চিন্তা নাহি মনে
নিজের মত দাপিয়ে বেড়াই মাতৃ দুগ্ধ স্তনে।
আমার মত আমার জীবন দুঃখ বাড়ির পিছে
মায়ের কোলে লাফিয়ে উঠি কাদি মিচে মিচে।
হেসে হেসে সময় যত মায়ের নরম কোলে
ঘুমিয়ে বেলা পার করে সব অন্ন যাই ভুলে।
মা বলতেন লক্ষি বাবা ঘুমিয়ে তুমি থেকে
সময় হলে জেগে উঠবে খাবার দিবো মুখে।
মায়ের মুখের মিষ্টি হাসি আদর দেয় মাখি
আজও আমি মায়ের মুখে স্বর্গের চোখ রাখি।


বাল্য সময় কাটতে থাকে বাড়ির উঠোনে
বন্ধু সবি আসতো বাড়ি, খেলবো শোধনে।
কত খেলা খেলতাম সবে, নিজের ভুবনে
নতুন নতুন খেলার ভাবনা ভাবায় মননে।
দুষ্টুমিতে মারামারি অষ্টাদশীর খেলা
সময় দেখার ঘড়ি নাহি কেটে যায় বেলা।


সন্ধ্যা হলে ঘরে ঘরে পড়তে সবি যায়
তা না হলে মায়ের হাতে বেতটা করে দায়।
কুপি জ্বেলে পড়তে বসি, শব্দ করে পড়ি
এই বাড়ির পড়ার শব্দ যাচ্ছে ঐ বাড়ি,
ঐ বাড়ির পড়া শব্দ আসছে এই বাড়ি
এই ভাবেতে লড়াই করে পড়ছে কাড়াকাড়ি।
এভাবেতে চলতে থাকে রাতের আটটা অব্দি
এমন করে পড়ে সবাই মনের জোরে শব্দি।
আটটা হলে খাওয়া দাওয়া, ঘুমে ডোলে মাথা
খাটের উপর লাফিয়ে পরে গায়ে দিয়ে কাঁথা।
ঘুমের দেশে কত স্বপ্ন হবো রাজা বাদশাহ
আমার হবে এই দুনিয়া বন্ধু বান্ধব সব শাহ্।
স্বপ্নের রাজ্যে ভোর হলো, স্বপ্ন গেলো ভেঙে
মায়ে এসে ঝাঁকিয়ে তুলে কাঁথা নিলো কেড়ে।
তাড়াতাড়ি উঠ, ‘হাত মুখ ধুয়ে মাদ্রাসাতে যাবি’
পকেট ভরে মুড়ি খানিক, সাথে নিয়ে যা ‘খাবি’।


মাদ্রাসাতে বড় বেত রয়েছে হুজুরের কাছে
একটু খানি হলেই ভুল ‘পিটিয়ে লাল পাছে’।
ভয় আতংক মনে মনে, পড়া নাহি আজ পারি
পকেট ভর্তি মুড়িতে হাত, মুখে দেই বার ভরি!
কি পড়তে কি পড়ে পড়ে, বেন বেন যাই করে
হুজুর একটুও বুঝতে পারেনি ‘ভন্ডামি মোর তরে।
অনেকেরে রৌদ্রে নিয়ে, ইট দিয়েছে মাথায়
কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে, মাইর দিয়েছে পাছায়।


এমন করিয়া মাদ্রাসাতে কেটে যায় সকাল বেলা
বাড়িতে এসে হামতামি, খেতে দেও খাবার মেলা।
মা, নানি মিলে বানিয়েছে পিঠা, দিলো মোরে খেতে
এত অল্প খাবো নাকো, দেও আরো বেশি যেঁতে।
কান্নাকাটি করে করে, পিঠা দেও মোরে বেশি
ভাঙচুর ঘরে মারামারি পুলছে মাংসপেশি।
নানি এসে আরো দিলো, কাঁদিস নারে তুই
ইচ্ছে মত খেয়ে এবার শান্ত—হরে ফুল জুঁই!


ইচ্ছে মত, মনের সুখে, খেলাম কেঁদে কেঁদে
তখনও আমার চোখের কোনে অশ্রুজল ছেদে।
মা এসে বললেন বাবা তাড়াতাড়ি খা
স্কুলেতে যাবি কখন নয়টা বেজে যা।
খেয়েদেয়ে চললাম এবার স্কুলেতে ছুটে
ব্যাগটা বেশ ঝুলে রয়েছে পা অব্দি বুটে।


বন্ধুরা সব আসলো ছুটে এক এক ফন্দি নিয়ে
দুষ্টুমিতে কাটবে বেলা হরেক রকম খেলে,
স্কুল থেকে যেতাম ছুটে  দূরের  কোনো গাঁয়ে,
কোন গাঁয়েতে পাখির বাসা আকাশ রবে মেলে।


দুষ্টু ছিলাম ভীষণ দুষ্টু, সেই ছুট্ট বেলার কথা!
ছোট্ট বেলার অবুঝ ছেলে, দুষ্টুমি যে গাঁথা।
গাছে গাছে পাখির বাসা, আনতাম পেড়ে পাখি
সব গাছেতে উঠতাম আমি, বানরের মত আঁখি।
লাফিয়ে দাপিয়ে গাঁয়ে গাঁয়ে যেতাম কত গাঁয়ে
কোন্ গাঁয়েতে পাখির বাসা, হলুদ রঙ পায়ে।
শালিক পাখির প্রেমে আমি পড়েছিলাম কবে?
সেই থেকে পাখির খুঁজে কত গাঁও গাঁয়ে ভবে।


বন্ধু ছিলো কত শত, ভালোবাসার আপন জন
বন্ধু পরান প্রাণের বন্ধু চোখে চোখে সারাক্ষণ।
স্কুলেতে যেতাম সবাই ‘কাঁধে কাঁধে দিয়ে হাত’
ব্যাগ ঝুলানো বইয়ের ওজন সাথে ছিলো ভাত।
নোমান ছিলো কারিগরী কি দিয়ে কি বানায়!
পড়ালেখায় মনোযোগ বেশ ‘আলোর আনায়’।
দুষ্টু ছেলের নাম খেতাবে দুষ্টুমিতে মন ঘাঁটি
সবাই তখন উদাসিন মনের, বন্ধ তবে খাঁটি।


আজিম নামের বন্ধু আমার, মন ছিলোনা পড়ায়
সারা গ্রাম দৌড়ায়ে তাঁহারে কত পাড়ায় পাড়ায়।
মাঠে মাঠে দৌড়িয়ে তাঁহারে ক্লান্ত হয়ে যেতাম
বাড়িতে গিয়ে অবসর নিয়ে ভাত নিয়ে বসতাম।
অবসর নিয়ে আবার তাঁহারে খুঁজে খুঁজে হয়রান
তাকিয়ে দেখি ডুমুর গাছে বসে আছে শয়তান!
গাছ থেকে নামিয়ে তাঁহারে স্কুলেতে আনিতাম
কাসেম স্যারের বেত আঘাত হানিলো পিঠে বেদম।


বন্ধু আমার চোখ রাঙিয়ে চেয়েছে আমার দিকে
ছুটির পরে বিচার হবে, কেন ধরিয়ে দিলাম তাকে।
ছুটির পরে পাবি নাকো আমার পায়ের ধূলি
দৌড়ে আমি বাড়ি যাবো, যা যা এসব যা ভুলি।
বন্ধু আমার রাগ করেছে, চওড়া হয়ে রাগে
রাগ করিসনা বন্ধু আমার, পড়বো সবাই ভাগে।


হৃদয় থেকে ভালোবাসা, বন্ধু মনে বাসা
উষ্ণ গায়ে জড়িয়ে রয়েছে ‘স্বপ্ন গল্প আশা’।
বিদ্যালয়ে বিদ্যা চাষে, বন্ধুর গলাগলি
বাহ্ বাহ্ হাতে তালি, সবাই করে বলাবলি।
আমরা নাকি ভালো ছেলে, গ্রাম্য মহ জুড়ে!
দুষ্টমিতে মাতিয়ে রয়েছি, অতিষ্ঠ সব ঘরে।


গায়ে গায়ে ছুটে বেড়াই, গায়ে মধুর হাড়ি
সবুজ গায়ে অবুজ হয়ে তৃষ্ণা মেটাই বাড়ি।
বাড়ির পিছে ডাকছে ফারুক বন্ধু বন্ধু বলে
আসছি আমি দাড়া বন্ধু চোখ দুটো মোর খুলে।
বেশ ঘুম ধরেছে শয়তান ঘাড়ে বসেছে চেপে
উঠছি হেকে শয়তান মেরে চোখ দুটো খেপে।
দু'জন মিলে ছুটছি মাঠে খেলবো সবাই মিলে
সব বন্ধু মাঠে আছে চেয়ে আছে চেফ গিলে।