নির্লিপ্ত স্তর থেকে আড়ম্বর বিকাশের মাধ্যমে মস্তিষ্কের চিন্তাগুলো যখন ক্রমাগত উচ্চতায় পরিভ্রমন করা শুরু করে, তখন মনোজাগতিক অন্তস্তলে সূক্ষাতিসূক্ষ অনুভূতিসমূহ বিকাশের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে । এক রৈখিক বিকাশ কেন্দ্র্ থেকে স্হূল স্ফূরনের মাধ্যমে বহুরৈখিক বিকাশের যে ধারা নির্লিপ্ত স্তর থেকে সবেগে কিংবা আরোপিত উষ্ণতায় তাড়িত হয়ে সমগ্র অলিন্দে দোলা দেয়; ঠিক সে মুহূর্তে আমি অনুভব করি সৃষ্টির উন্মাদনা ।


সুখীতা ও অসুখীতার বিস্তর তারতম্য ,সত্য মিথ্যার নিরন্তর দর কষাকষি, সর্বোপরি কঠিন ক্লান্তি ও কোমল শান্তির যে প্রজনন তা আমার চিন্তার সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্তরকে কখনো হালকা আঁচে কখনো প্রবল ঝাটকায় আন্দোলিত করে। আর আন্দোলন, আলোড়নের কারনেই আমি তাৎক্ষনিকভাবে কিছু ছন্দের ব্যঞ্জনা ঘটাই -যা কিনা কারো কারো কাছে আপাত: কবিতা হিসেবে প্রতীয়মান হয় । আমার কাছে আমার এই সৃষ্টির পরিচয় কী হবে তা নিয়ে ভাবনা শেষে নির্ণয় করেছি আমি এই সৃষ্টির নাম দেবো -অন্ত:প্রকাশ।


সমুদ্রের সন্নিকটে পড়ে থাকা নুড়ি পাথরের মতো আমার জীবনের চারপাশে যে সকল নগন্য তুচ্ছ বিষয় সতত বিরাজমান; যা কিনা শুধুমাত্র আমার দৃষ্টিকে আকর্ষন করে, অন্তপ্রকাশ তারই অসংলগ্ন সংকলন ।


মধ্যরাতে ঘরে ফেরার সময় যে জমিনের ওপর ধমক ধমক পা ফেলে আমি হেঁটে যাই গন্তব্যের টানে, সে জমিনের বিশ্রামটুকু বিঘ্নিত করার কারনে সৃষ্ট অনুতাপ থেকেই অন্ত:প্রকাশের উপকরন আহরন ।


আমার এ অন্ত:প্রকাশ রাইম স্কিমের কোন একটি বৃত্তকেও যদি স্পর্শ না করে তাতে আমার কোন আক্ষেপ নেই। স্বরবৃত্তের সুষমায় সজ্জিত হতে যেয়ে আমার এ অন্ত:প্রকাশ অপ্রয়োজনীয় শব্দের স্তূপে পরিনত হোক  তা যেমনিভাব আমি চাই না, তেমনি মাত্রাবৃত্ত বা অক্ষরবৃত্তের সিঁড়ি পার হতে যেয়ে সে হুমড়ি খেয়ে পড়ুক সেটিও আমার কাছে অনাকাঙ্খিত। আমি মাত্রাবৃত্তের বিরোধী নই কিন্তু এও কখনো বিশ্বাস করি না যে কাব্যের প্রকৃত আবেদন বিনষ্ট হয় এ বৃত্তের বাহিরে পদার্পন করলে। আমি এটিকে সাহসী উদ্যোগ বলে মনে করেই সন্তুষ্ট হই।


এক্সিস্ট্যান্টশিয়ালিজমে যাঁরা উদ্বুদ্ধ তাঁদের কাছে সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে আমার কবিতাগুলো মনে হতে পারে এক ধরনের চিন্তার বৈকল্য। আবার যারা স্যুররিয়ালিজমে অনুপ্রানিত তারা হয়তো মনে করতে পারেন আমার কবিতাগুলো সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের গতি প্রবাহ থেকে যোজন যোজন দূরে। মজার ব্যাপার হলো আমি এ দূরত্বটিকে নিরাপদ বলেই নির্ণয় করি। একইসাথে এ কথাও পরিষ্কার করে বলতে চাই যে পোস্ট মর্ডানিজমের কোন বিশেষ
প্রভাব বা ইনফ্লুয়েন্স আয়ত্ত্বের অপ্রয়োজনীয় প্রয়াসে  আমি কখনোই আমার কবিতাগুলোকে কোন ইজম'র কাছে বন্ধক রাখিনি। আমি সবসময় চাই অন্ত:প্রকাশ হোক কাব্যিক সুষমায়, মানবিক স্নিগ্ধতায় অন্তরের নির্মল প্রকাশ। কবিতার পথ হোক মসৃন, বৃত্ত ও ইজম'র প্রতিবন্ধকতামুক্ত সাবলীল সুন্দর।


দীর্ঘজীবী হোক কবি ও কবিতা!