অফিস শেষে ফিরে এলাম , সন্ধ্যে প্রায়, আরেকটা  নির্ঘুম বিকেল কাটালাম,  
জানি না, কেনো যেন মনটা যেন বড়  আজ বড় বিষাদ বিষাদ লাগছে।    
আরব দেশের মাটিতে বৃষ্টি  হয় না,শীত পরে না,শুধু আগুনের উত্তাপ আর উত্তাপ।
কিন্তু,আজকাল কী  হলো বুঝি না। প্রকৃতি যেন উল্টো দিকে মোড়  নিয়েছে,  
আগের  মতো ঝাঁঝালো, রোদ আর নেই। কেবল শরীরের হাড় কাঁপানো অনুভূতি।  


উত্তর পাশের  বাতায়ণটা  খোলা, ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে,
কম্বলটা  গায়ের উপর জড়িয়ে রেখে, কেবল মুখটা খোলা রেখেছি। চোখে ঘুম যেন লেগে আছে।
কিন্তু  ঘুম আসছে না। চোখটা যেন বেশ  কচরমচর করছে,
রুমমেট আমার হাতে এক কাপ কড়া চা  তুলে দিয়ে বললো-
কিরে  মন খারাপ ? আমি  তার দিকে চেয়ে রইলাম শুধু।
কোনো উত্তর দিতে ইচ্ছে করছিলো  না।চা দিয়েছে ভদ্রতার খ্যাতিরে বললাম "ধন্যবাদ"
সে হাসলো। জানি না  কেন তার এই ধূসর হাসি।
আমি  আয়নায়  তাকালাম। নিজের মুখটা নিজের কাছে বড়ই বিষণ্ণ লাগছিলো,
আসলেই আমি বিষণ্ণতা অনুভব করছিলাম।
প্রবাস জীবনের একাকীত্ব বড়ই নিঃসঙ্গতা আমাকে যেন ঘিরে ধরেছে। ।


সকালে ফোনে অসুস্থ মায়ের সাথে ক'টা  মিনিট  কথা  হয়েছিলো,
ভালো লাগছিলো, কথা  বলতে বলতে,  
মা যখন কন্নায়  ভেঙ্গে পড়েছেন ছেলেকে এক নজর দেখার  জন্য,আমি  তখন যেন হতভম্ব,
চোখের  জল নীরবে ভেসেছে। বুঝতে দেয়নি মাকে।  
"মাগো তোমার ছেলেও  তোমায় প্রচুর  মিস করে  অনেক ভালোবাসে,তোমায়  নিয়ে ভাবে।
কল্পনায়  তোমার ছেলের ছবি  আঁক দেখবে আমি তোমার সামনে আছি। "  
মাগো সেদিন তোমায় না বলে চলে এসেছিলাম মাগো  আমায়  ক্ষমা করো।  


তুমি তখন বিছানায় পরে আছো, তোমার  জ্ঞান ছিলে না,তাই বলতে সাহস করিনি।
তুমি সইতে পারবে কিনা এই  ভয়ে!
আমি অনেকটা চোখ বন্ধ করে বেরিয়েছিলাম তোমার পা ছূয়ে।  
বাবা ছিলেন তোমার শিহরে আর ছিলো  রুশি।  ।
মাগো  রুশি মেয়েটা  অনেক ভালো। অনেক  অনেক গুণ তাঁর। তোমায়  অতি যত্ন করে  সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে, তোমার  ভালো- মন্দ দেখাশুনা করেছে।
ওকে তুমি আশীর্বাদ করো মা।  
অথচ তোমার ছেলে এই আমি, আমি  যে, স্বার্থপর,আমি দোষী মা বড়ই অপরাধী,  
আমি  পারলাম না তোমার সেবা করতে,তোমার জন্য কিছু করতে এই দূর প্রবাসে বসে।    
আজ  কেনো  জানি তোমায়  বেশ মনে পড়ছে, অনেক বেশি  অনেক বেশি।    
এই নির্ঘুম বিষণ্ণ সূর্য ডোবা ঘরে। তুমি  ভালো   থেকো মা। অনেক ভালো  থেকো।


রচনাকাল
১২।১৯।২০১৬
ইউ এ ই।