স্যাঁতসেঁতে কুঁড়েঘরে জন্ম তনু'র দারিদ্রের রোদ্দুরে বসবাস,
বাবা ছিলেন,ঘাটের কুলি,নুন আনতে পান্তা পুড়াতো
কভু থাকতে হতো উপবাস ।
তনু আঁচ করতো ক্ষণে ক্ষণে বাবার কষ্টের অগ্নি লাভা,
যন্ত্রণার উত্তাপে জ্বলতো কেবল দাব দাহ সূর্যের আভা।
সেই থেকে তনু শপথ নিলো আশা চঞ্চল চোখে,
বাবার তৃষ্ণা মোছন করবে, হিমশীতল পরশে ।
পড়া,আর পড়া ছিলো দিনকার সহচর,জীবনের রাস্তায়,
ফুলে ফুলে ভরতে লাগলো,মধুময় ক্ষণ জীবনের সীমানায় ।
পাড়ার ছেলেরা দিলো কত কাগজের টুকরো ভরে রঙ্গিন খামে,
নিছক প্রভাব ফেললো না তাতে মোকাবিলা করলো এক মনে।
সিঁড়ির পর সিঁড়ি বেয়ে যে দিন তনু,উড়ালো নৌকার  পাল,
অসীম সুখে ভাসতে লাগলো তনু স্বপ্ন উত্তাপে মাতাল ।
চাকুরি জীবনের,প্রথম দিনে তনু ,বের হলো উল্লাস মনে
বাবার চোখে জল,ছল ছল করছিলো ভাসালো ঐ ক্ষণে।
আজ তনু এক বড় গাইনী ডক্টর,শত প্রতীক্ষার পরে,
গরীব দুঃখী দের  সেবা করবে,এই শপথ নিলো মনে।
হারাতে দিবে না কোন তনু'র মা কে,অমন প্রসব কালে,
এই স্বপ্ন এই  আশা ভীড় করে আছে জীবনের পলে পলে।
ফুলের মালা  সাজিয়ে নিয়ে, পরালো অতনুর গলে,
সুখের সমুদ্রে স্বপ্নের নীড়,ভালোবাসার রোষানলে।  
আজ ক'দিন ধরে কষ্টে মাতাল,ধেয়ে ধেয়ে যায় পাসিনা,
ক্ষণে আসে,ক্ষণে যায় তনু'র প্রসব ব্যাথার যন্ত্রণা ।
অশ্রুকণা আঁখিপাতে  শিশির টলমল করে,
দুরুদুরু করে উরু,কষ্টে প্রাণ কেঁদে মরে ।
শিরায়,শিরায়,দৌঁড়াচ্ছে লিবোট এস স্যালাইন,
ডেক্সমেথাসন,হাসোমাইড,এবং অক্সিটোসিন  ইঞ্জেক্শন ,
কখন উৎসারিত আনন্দ নীড়ে আসবে,কেবল সেই শুভক্ষণ ।
দিন পেরিয়ে রাত পোহাতে ক্ষণ কিয়দ দেরি,
অদূরে মুয়াজ্জিনের আযান ভেসে আসতেই,ফোটলো গোলাপ কলি ।
গভীর ছন্দে সুখে মাতাল  প্রাণে চঞ্চলতা ভারি,
নারী জীবনের স্বপ্ন সুখে তনু'র আনন্দরাশি সারি সারি ।
ভুলে গেলো সব কষ্ট, মুছলো আঁখি জল সবি,
কন্যার মুখে মূর্তি নীল হাসি,যেন তরুণ রবি ।
অতনু-তনু'র শিহরে বসে,ভাসছে খুশির বানে,
চাঁদ বদন জগৎ ছবি,ভালবাসার সুখ বয়ে যাই প্রাণে ।
রাত্রি প্রায় দ্বিপ্রহর,কোলাহল হীন ক্ষণ,
আঁধারে বুকভরা নিঃশ্বাস আছে মেতে
মানছেনা তাঁর মন ।
নৈঃশব্দ্য ভেঙে তনু,নিজে কে দাঁড় করালো
প্রস্তরীভুত বাতায়নের সীমানায়,
অস্থির মন তাঁর করে উচাটন
প্রতীক্ষার কিনারায় ।
ভাবছে মনে,আপন নেশায়  কি হবে সেই রমনীর
প্রসব বেদনায় ছটপট করছে বিছানায় গড়িয়ে,
প্রাণ যেন তার ফেঁটে চৌচির ।
গাছ নিবে ফল নিবে পরিবার, পড়েছে দো-টানায়
চিন্তার অট্টালিকা আজ তনু'র ধ্যানে হৃদয়ের মোহনায় ।
হাসপাতাল বেডে রেখে এসেছিলো তনু পড়ন্ত বেলায়,
বিমূঢ় চিত্তে আশার নিত্যে এক বুক বিশ্বাস ছিলো তাঁর মন ভেলায়।
মোবাইল টা হুট করে বেজে উঠলো ক্রিং ক্রিং আওয়াজ তুলে,
বলতে পারলো না অতনু কে কিছু পাল তুলে ছুটে গেলো সব কিছু ভুলে ।
রমনী তাঁর হাত ধরে কেঁদে করছে কত  না আকুতি ,
শান্তনার বানী শুনিয়ে তনু ভাবছে কবে হবে ভগবানের সুমতি।
রক্ত আহরণে যখন ক্লান্ত সবায় না পাওয়ার বেদনায়,
নিজের শিরার শিকড় তখন উন্মুক্ত করে দিলো স্রোতের বানে মোহনায় ।
ফুল ফোটলো যখন আযানের স্বরে ভোরের আকাশে,
বিস্ময়ে বিস্মিত তনু অবাক বদনে মনের কোমল পরশে।
শিমুল ফুঁটেছে মন কাননে তনু'র মনে আজ
রংধনুর সাজে-সাজিয়ে নিল,জীবন পেয়ালা,
কাব্যিক কবিতার মাঝ।
তনু-অতনু'র যুগলপ্রেমের স্রোতে,ভাসছে নিখিল প্রাণের প্রীতি,
মিলনমধুর সুখের ভেলায় অনিবার,তিমিররজনী গীতি ।
প্রেম্য কথা,রম্য আদর, মেখেছে সারা গায়,
নিত্যনূতন সুখের বানে ভেসে যেতে চায় ।
গগনভরা জোছনা'র আলো মন করেছে শীতল,
তনু-অতনু'র প্রাণ-সাগরে আজ ঢেউ উঠেছে উত্তাল ।
আঁচল খানি পেতে দিলো তনু- অতনু'র তরে,
সুখের কোষে আজ ঢল নেমেছে ,অবুঝ দু'টি মনে ।
পরশমাখা আলতো আদর,নিবিড় প্রেমের ছোঁয়া
পাপড়িগুলি আজ লাজে মাতাল,দারুণ প্রেমের তুয়া ।
লাল টিপ এ তে লাগছে বেশ তনু'র ললাট খানি,
বিমোহিত অতনু-তনু'র রুপে যেন বাসন্তী বসনের রাণী ।
অরণ্যের মর্মরধ্বনিতে এই মন ভাসে,কাঁদে তনু'র কষ্টের সেতারা,
বাবার, স্নেহ মমতার আবরণ আজও ক্ষণে ক্ষণে করছে দিশেহারা।
পতিদেব ভুলাতে চাই কত সোহাগের ঝুলিতে বসিয়ে উৎসাহের আঙ্গিনায়,
উচাটন মন কেঁদে ভাসায় সারাক্ষণ,বেলা অ-বেলায় ।
সংসারে ছোট শ্বাশুরির তীর মারা চাউনি,কৈফিয়ৎ এর ছোবল,
গ্রাস করে তনু'র প্রতিক্ষণে,
দীর্ঘশ্বাসের ধোঁয়ায় কালো ,অন্তরের শত আশার আলো,
নিভে নিভে যায় আস্তরণে ।
ননদিনী আসে শত আপত্তিকর আবদার নিয়ে, ভারি করে মনের ঝোলা
পুরন না হলে আবদার যত,লাগিয়ে দেয় ছোট শ্বাশুরির কানে অকথা কুকথা,
বিশৃঙ্খলতার ভিড়ে প্রাণ করে ঝালা,পালা ।
বাবার সংসারে মায়ের অভাবেও,সুখের সীমানা ছিলো সীমাহীন,
স্বামীর সংসারে তাঁর অগোচরে যন্ত্রণার পাহাড় উচু হচ্ছে দিন দিন ।
একটু সুখের আশায় মায়ের মমতার খোঁজে, তনু কোন মন্ত্র দিচ্ছে না স্বামীর কানে,
নীরবে সহে যাচ্ছে বাবার মান রাখার তাগিদে জীবন সংসার এর ঘানি টেনে ।
সে যে এক বড় ডাক্তার বটে অহং ভাব নেই কভু তার মনে,
মিলেমিশে চলতে চাই তনু সুখের সাগরে ভেসে  সবার সঙ্গোপনে ।
চৈত্রের তাপের দহনের মত তনু'র বুক ফেঁটে চৌচির,
অতনুর এমন নিষ্ঠুর আচরন,স্পর্শ করে,অধৈর্য আজ বধির ।
অতনু মেতেছে কল্পলোকের অদৃশ্য সুখে অন্য নারীঙ্গমে,
অঙ্গের বাঁধনে নিবিড়তায় সুদূর অগোচরে,অচেনা বাহুডোরে ।
মাটির তলায় সুপ্ত বীজ খোঁজে অতনু,অচেনা সেই কোমল অধরে,
তনু আজ যেন ফোটা বাসী ফুল,অতনু'র নয়নে,অবহেলায় অ-কদরে।
অসীম ঐশ্বর্যরাশির লোভ অতনু'র মনে,ভীড় করেছে, নিপার প্রেমের অন্তরালে,
মিটিয়ে নেয় নিপা তার তপ্ত বুকের উষ্ণ সুখ,কষ্টে তনু'র প্রাণ যাই যে জ্বলে জ্বলে।
নিপা অতনু'র কলেজ সহপাঠি,ছেঁড়া শিকড়,চলে এলো স্বামী সংসার ছেড়ে,
প্রেমের অমৃতস্নানে কাবু করে অতনু'র জীবনে,আজ ভাসাচ্ছে দস্যিপনে।
হৃদয় উপবনে ধূ ধূ করে,জীবনের খরস্রোত,তনু'র স্বপ্নের ঘাটে ভাঙছে লহরী,
বসন্তের মাধবীমঞ্জরি আজ,নিকুঞ্জে ফোটে না তোলে না নব কুন্দরাজি।
তনু'র দীর্ঘশ্বাসের ধোঁয়ায় কালো অতনু'র বিশৃঙ্খলার কয়লা,
বিহ্বল বিমূঢ় চিত্তে বাজে বিষাদের অবিচ্ছিন্ন লাইন স্বপ্নেরা যেন ময়লা।
সময়ের আবর্তনে রূপ বদলায়,মানুষ ক্ষুধার মাহীন তাড়নায়,
অতনু'র মনের রূপ বদলেছে আজ নিপার প্রেমের মোহনায় ।
মনের নুড়িতে বেঁধে ছিলো পর্ণকুটির স্বপ্ন ছিলো আঁখিপাতে,
ক্ষুধিত বাসনার প্লাবন স্রোতে দুর্বিপাকে সিক্ত আজ মন সীমানাতে।
হিংস্র নিবিড় কষ্টের ছোঁয়ায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় মন বন্দর,
সুরেলা সুরে বাজে না মন বাঁশি,ভগ্ননীড় যেন এই অন্তর।
দাবানলে জ্বলে দাউ দাউ করে সূর্য তনু'র ,দিগন্তব্যাপী অনিবার,
সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দিয়ে ও যেন পুড়ে ছাই জীবন পারাবার।
স্তব্ধ যেন তনু চাকুরি সমাজ সংসারে,পেলো অতনু'র প্রবঞ্চনা,
শত অনুনয়,শত বিনয়,অতনু'র প্রতি'ফিরে এসো'মিললো না প্রেমাঞ্জনা।
তনু আজ নিজেকে বদলে নিয়েছে,নিষ্ঠুর সান্ত্বনায় সজল দিঠি মেঘের সনে,
যে চলে যেতে চায়,তাকে ধরে রাখা দায়,যাক সে অন্য মেঘের কোণে।


রচনাকাল
২৮.১০.২০১৫
ইউ এ ই