বিমান'টা  হাঁটি হাঁটি পায়ে  হাঁটছে,  
ফর্সা শ্যমলা চামড়ার শরীরে একটু দূরে দাঁড়ানো;  
এক  নারী বৈমানিক, অত্যন্ত সুন্দরভাবে বলছেন,  
"সম্মানিত যাত্রীগণ অনুগ্রহ ক'রে আপনার সীটের বেল্টটি বাঁধুন
এবং ইলেট্রনিক্স ডিভাইস, ফোনটা  বন্ধ রাখুন।"    
আমি তো  আশ্চর্য হলাম!!  
স্বরটা আমার কাছে, যেন অতি পরিচিত লাগলো,চিরচেনার গাম্ভীর্যে।
আমি দু'ই চোখ তুলে তাকালাম, তার পানে,  
ততক্ষণে সে বিপরীতমুখী হয়ে যাত্রীসেবায় রত
তার ঘনকালো ছুলগুলো খোঁপায় বাঁধা,
কালো নেটের কাপরে মোড়ানো।


বিমান তখন একটা বড় ঝাঁকুনি দিয়ে আকাশের দিকে উঠছে,
বুকের ভিতর যেন একটা  কম্পন দিয়ে উঠলো গর্গর করে।
এর আগে আকাশে অনেকবার উড়েছি, ভেসেছি শুন্যে,
মেঘের  উপরে, জানালার পাশে বসে মনে হয়েছিলো,
আমার চারিদিকে কেবল জলজ বরপের স্তূপ,
শুভ্র  ধুঁয়ার মেলা, দৃশ্যটা  বেশ উপভোগ্য,  
হাত বের ক'রে  বাইরের আকাশের ত্বক ছুঁতে ইচ্ছে করছিলো।
কিন্তু  তেমন সুযোগ কোথায়?
আমরা ভেসে চলেছি, উড়ছি আকাশের বুকে।


আবার সেই চেনা কন্ঠের আওয়াজ,
একেবারে আমার সন্মুখে, আমার বুক যেন বিধস্ত !
লাল ঠোঁটে হেসে আমাকে বলল-  
"চা, না কফি, নাকি এলকোহল পানীয় ?"
আমি  অবাক চোখে তার নিখুঁত চোখের দিকে তাকালাম,  
অনেকটা বদলে গেছে সে, একদম পরিপক্ক বৈমানিক !
বাম বুকে নেইম প্লেটে পরিষ্কার লেখা আছে- "অনন্যা''    
যেই মেয়েটি ছিলো, এক সময় আমার  খেলার সাথী,
খেলার ছলে সবসময় বলতো, -"ঐ দেখ আমার  বিমান যাই,
দেখিস একদিন আমিও উড়বো ঐ নীলাকাশে শুভ্র মেঘে",  
আজ  সে সত্যি সত্যি উড়ে  বেড়াচ্ছে আকাশের বুকে।  


আমার বিস্মিত চোখ দুটি  তাকে ঘিরে,
দীর্ঘ উনিশ বছর পর আমাদের দেখা;  
বুকের অন্তরালে অনেক কথা জমে আছে,
যাকে পুষে রেখেছি এতদিন, আজ  তাকে নিয়ে ভাসছি নীলাকাশে,
অনন্যা  হেসে বলল- "তুমি অনেক বদলে গেছ।
অনেক না বলা কথা বলার আছে।'  
বলেই  আমাকে একটা  চিরকুট ধরিয়ে দিলো।
সেখানে ১১ সংখ্যা।


রচনাকাল
২৪।০৩।২০১৭
ইউ এ ই