আমি তখন বারো ক্লাস শেষ করেছি,
বাবা বললেন-  ওদিক-সেদিক ঘুরে  সময় নষ্ট করো না,
সময়ের চরিত্রের  মতো  নিজের চরিত্রটা  নির্মাণ করো,"
সেদিন বাবার কথার ভাবর্থটা   আমি তেমন ভালো বুঝিনি।
ও পাড়ার ছেলেরা  দলবেঁধে সিনেমা দেখতে  যেত,  
আমারো  বেশ ইচ্ছে জাগে, ওদের  সাথে সিনেমা দেখতে;
কিন্তু  কেনো  যেন সাহস পাচ্ছিলাম না।
বাবা জানলে, আমায় আস্ত রাখবেন না,
সোজা ঘর থেকে বের করে দিবেন।


এ নিয়ে  বন্ধুরা  কত হাসাহাসি করতো,  
অনেকে তো  বলেই  ফেলতো-
"যা মেয়েদের মতো ঘরে চুড়ি পড়ে  বসে থাক, হা হা হা "  
কথা'টা  যে আমায়  অপমান করতো না তা  ঠিক নয়;
তবুও  বাবাকে ভীষণ ভয়!!  
বেতগাছের লাঠিটা  এখনো ঘরের চালে টিনের ফাঁকে রাখা আছে,
কত হজম করেছি, ছামড়ার ভিতরে রক্তের হলি।
পান থেকে চুন খসলে, লাঠি দিয়ে পিঠ চুলকাতেন,
আমি  অসহায় বালকের মতো  তাঁর দিকে দৃষ্টি রাখতাম,  
হয়তোবা যখন তিনি  বুঝেছেন, অনেকে হয়েছে,  
তখন বেত্রাঘাত বন্ধ হতো, মনে মনে ভাবতাম-
আমার  জন্য কি প্রেম নেই  তাঁর ?


সময়  পার হয়েছে, তার  চরিত্রের গুণে তার মতো করে
আর  আমি আশ্চর্য বালক  আমার  মতো।  
যেদিন উচ্চ শিক্ষার জন্য বাবার চোখের  আড়াল থেকে বেরিয়ে
বাইরের দুনিয়াটা দেখতে লাগলাম, তখন দেখছি জীবনের রঙ্গমঞ্চ  
চারিদিকে কত রঙিন!! কতোটা আমেজময়!!    
ভালোর পাশাপাশি- অস্পষ্ট অদৃষ্টের দশনবিকাশ।
এখন আমি, আমার মতো, কেউ শাসনে নেই,
অনেক বন্ধুবান্ধব জুটেছে, ঘটেছে অভ্যাসেরও অনেক পরিবর্তন,
জীবন পুঁথির প্রথম পাতা যেন বদলে যাচ্ছে,
আমিও বদলাচ্ছি, জীবনের এই পাতাগুলো যেন  রঙ্গিন।
নেশা, আড্ডাবাজি, বুদ্ধির ভর্ৎসনা আমাকে করছে তিরষ্কার
কিন্তু কে জানতো, এই রঙিনই সর্বনাশ!!    
জীবন যখন ক্ষয়ে যাচ্ছিলো, অনিয়মের নীলচাষে।


রচনাকাল
২৬।৩।২০১৭
ই এ ই