আমি তো জীবন কিছুই চিনিনি ;


যেমন চিনেছে ঐ মুরগীর ব্যাপারী,
রিকশাওয়ালা, মাছের বিক্রেতা, কসাই
সারাটা দিন ধুলো-মাখা শ্রমিক
অক্লান্ত পরিশ্রমের পর, সামান্য ক'টা টাকা নিয়ে যে ফিরছে বাড়ী;
কিংবা সংখ্যালঘু নাগরিক, গরিষ্ঠের রোষ-রাঙা দৃষ্টি অথবা শ্লেষে
যার হৃদয় থাকে সতত ক্ষুদ্রতায় ভারী;


জীবন দেখেছে যারা থাকে বস্তিতে, ডাস্টবিন নর্দমা ইত্যাদির পাশে
যাদের মোটা দাগের আবেগেগুলো মৃতপ্রায় শুয়ে থাকে;


আমি দেখিনি ভিন-দেশে রুজি রোজগারে
কতটা নিরাপত্তাহীনতায়, ক্ষমা-ভিক্ষায় বাঁচে শ্রমজীবি মানুষ !


অভাবের তাড়নায় কারা হয় কুপথের রাজা-রাণী,
খুন চুরি ডাকাতি রাহাজানি, রাতের আঁধারের দেহপসারিণী
বিত্তবানের করুণায় জীবিকার দানে বাঁচে যেসব নর আর নারী;


চিনেছে বেশী জীবন ঐসব দুর্বৃত্ত জীবনে বেঁচে থাকা
সিরিয়া প্যালেস্টাইন ভিয়েতনাম অথবা
আমার মাতৃভুমির ৭১ এর মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ,
বেঁচে ছিল এবং আজও বেঁচে চলেছে যারা
যুদ্ধ আর রায়টের মতো অমানবিকতার মাঝে;
ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশু সহ্য করে মৃত্যুর মতো জীবন;
তাদের চারপাশে চালায় বিশ্ব-দানবেরা বোমার বিস্ফোরণ !


আমি কখনো তার মাঝে বাঁচিনি;


আমি দেখিনি দুর্ভিক্ষকাল ;
আকালের মাঝে এক মুঠো চালের জন্য যখন
মানুষ হয়ে পড়ে খুনি, আমি সে জীবন দেখিনি;


বাস-ট্রেনের দরজা-ছাদে ঝুলে থাকে যেসব
নিম্ন-মধ্যবিত্ত যাত্রীদের জীবনখানি,
জীবনের সাথে আমরণ পাঞ্জা লড়ছে কিছু মানুষ !


আমি তার কিছুই বুঝিনি ; কেননা আমি তার মাঝে বাঁচিনি;


দূর থেকে দেখে উড়িয়েছি শুধু দুঃখের ফানুস, তারা জ্বলা রাত্রিতে;
পুড়েছি প্রেম ও প্রেমিকার শতপ্রকার দহনের অবগাহনে
রোমান্টিকতা নস্টালজিয়ায় লিখে গেছি কবিতা সারি সারি !
নিশ্চিন্ত সমাজের কত রমণী শুনেছে সেসব কবিতা
উৎসবে, পিকনিকে শালবাগানে !


আমি ক্ষুর্ধাতের জীবন দেখে কবিতা লিখি
আমার বিলাসী পরিবেশের দৃঢ় আশ্বাসে !
আমি কখনো ক্ষুর্ধাত থাকিনি !


কবি হয়েও তাই আজন্ম এক লজ্জায়
সে পরিচয় আমি কখনো দিতে পারিনি ।


(১৯.১১.২০২০)