আমরা পৃথিবীতে
অপরিচিতই থেকে গেছি।
কেউ কাউকে আজো চিনিনা ।
আপন করে নিতে পারি না ।
পাঁচ সহস্র বছর একই জলে কেটেছি সাঁতার,
সতীর্থ মহা সৃষ্টির বক্ষ ছেদ করে
শিখেছি রক্ত স্নান;
লোভ ঈর্ষা শিখে নিলো দুই ভাই
পৃথিবীর সেই প্রত্যুষেই
বুঝে নিলো জীবন নামের এই খেলাতে
জিততে চাইলে অনায়াসে হত্যা করা যায়
নিজের ভাইকে এমনকি বিবেচ্য পিতা-মাতাও !


আমাদের চিন্তা চেতনার পরিধি
বৃত্তের মতো, সে খোঁয়ারের
বাইরে কখনো যেতে পারেনি!
আমরা পাখিদের দেখেছি,
বিস্ময়ে বলছি আহা পাখনা, স্বাধীনতা !
উড়বার সে কি আজন্ম সাধ!
কিন্তু বুঝতে বড় অক্ষম হয়ে গেলাম,
পাখিদের উড়াল জীবনের মাঝে
মিশে আছে নিবিড় উদারতা;


এতো বড় পৃথিবীতে পা রাখলাম
অথচ আমাদের স্বপ্ন
এ বিশাল পৃথিবীর সমান হলো না!
বরঞ্চ আমাদের স্বপ্ন হয়ে উঠলো ধূর্ত ,
সংকীর্ণ দেয়াল ঘেরা;
তাই দেয়াল তুলেছি মাথায় তুলেছি ছাদ,
শুধু মানুষ কেন
যেন আকাশও বিচ্ছিন্ন থাকে,
উঁকি না দিতে পারে আমার মোহরের কলসিতে।
আমরা মিটিমিটি মাথা নাড়িয়ে হাসি
অপরের সম্পদ নাশের ক্ষতিতে।


সমগ্র পৃথিবীটাকে
দেয়া হয়েছিল সবার জন্য ;
ভাগাভাগির সুখে হয়ে উঠবো অনন্য ।
অথচ আমাদের ভেতরে কোথা থেকে যেন
বেয়ে উঠলো সর্পিল এক বিপন্ন বোধ!
তাই আমরা সে ধারণাকে
আমাদের অহংকারী চরণের আঘাতে
ভেঙে চুরে বাঁচতে থাকলাম
একের অপরের কাছে আগন্তুকের মতন।
অপরিচিত মানুষ দেখলেই
এক বাটি জল বাড়িয়ে দেবার আগেই
প্রথমেই ছোবল মারে আশঙ্কা ,
সরল বিশ্বাসটাকে চেপে রাখি পদতলে।


সবকিছু কুক্ষিগত করে রাখার এই
মৃত্যুহীন লালসা দেখে
"এক বিশ্বের" স্বপ্ন
আত্মহত্যা করলো মাটি ও জলের অতলে ।


আমাদের আপন কেউ মারা গেলে,
কয়েক মাস ঠিক মতো
আহার করতে পারি না ।
অথচ হঠাৎ হঠাৎ
মরে যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন
আমাদের একবেলা আহারও কি তখন
থামিয়ে দিতে পারে সে মর্মান্তিকতা?


তাই মানবেরা থেকেই যাবে অপরিচিত,
কাঁটাতারের পর কাঁটাতারে
খন্ড খন্ডই থাকবে এ ভূখণ্ড।
এক মানব জাতি আর তার একটি মাত্র দেশ,
এই পৃথিবী,
এই বিশ্ব,


এইসব তত্ত্ব যাদের.....ওরা
"এক বিশ্বের" মহান স্লোগান মারা ভন্ড ।


(19.07.2022)


(যারা বলে , বলোতো দেখি ওদের, কোনো অনুমতি ছাড়া হঠাৎ ইচ্ছে হলে রাত কাটাতে পারে কিনা প্যারিসে, ব্রেকফাস্ট লন্ডনে, লাঞ্চ নিউইয়র্কে, ভোট দিয়ে আসুক তো রাশিয়ায়, বিয়ে করুক তো ইরানে, বাড়ি ভাড়া করুক তো জার্মানিতে বিশ্ব নাগরিক পরিচয়ে! শুধু বিশ্ব নাগরিকের অনুভূতি আর দর্শন কপচালেই তোমাকে কোন দেশ নিজের করে নেবে না। তোমার মানচিত্র পতাকা তোমার দেশ। একটি কবির একটি দেশ থাকতে হবেই। সেটাই শেকড় শক্তি, সুদৃঢ় পরিচিতি, নিজের অধিকার ।)