যে কোনো কবিতার লেখার পেছনে অনুপ্রেরণার গল্প থাকে। তা সামান্য থেকে অসামান্য হতে পারে। ফুটপাতের উপর পড়ে থাকা এক টুকরো ছিন্ন কাগজের মূল্যহীন রূপ দর্শনেও, অবাক হবার কিছু নেই, কবির মনে অনেক ভাব অনুভবের দরজা খুলে যেতে পারে। কিছুদিন পূর্বে, কবিতা আসর এর মাননীয় এডমিন, কবি পল্লব আশফাক, একটি কবিতা লেখার পেছনে যে মিউস, অনুপ্রেরণা, ঘটনা, গল্প বা অনুভব কাজ করে, তার বিবরণ আলোচনা পাতায় প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছেন। নিজের কবিতা সৃষ্টির কারণটি সবাইকে বলা, নিয়মাবলী অনুসারে আত্মপ্রচারের পর্যায়ের পড়ে কিনা তা নিয়ে পরিচালনা পরিষদ দ্বিধার মাঝে ছিল। সে শঙ্কা মাননীয় এডমিন দূর করে দিয়েছেন আমাদের জন্য। কবি সরদার আরিফ উদ্দিন, প্রোলিফিক আলোচনাকারী, প্রথম এরকম একটি আলোচনা প্রকাশ করেন "কবিতার পেছনের গল্প-১" শিরোনামে ২১/৯/২০২২ তারিখে। সেদিন তর্ক ওঠে এবং তর্কের সমাধান, মাননীয় এডমিন তার উদারতা এবং বিচক্ষণতা দিয়ে করে দেন। সেদিন আমারও মনে দ্বিধা ছিল, তাই কবি সরদার আরিফ উদ্দিন এর কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে সরদার আরিফ উদ্দিন এর জীবন অভিজ্ঞতায় যেসব কবিতা সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা জেনেছি তা অনুপ্রেরণা বা ঘটনার দিক থেকে বহুমাত্রায় বর্ণিল, আরো গভীরতর জীবনবোধ সংক্রান্ত। সে তুলনায় আমার আজকের কবিতার পেছনের গল্পটি খুব পানসে হলেও, মানুষের একটি চারিত্রিক বোধ নিরূপণে কিছুটা হলেও মূল্যবান। তাহলে শুরু করছি।


আমরা সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মিডিয়ামের ইউজার ফ্র্যান্ডলি সহজতার কারণে আজ শুধুু কুশল, খোঁজ খবর বিনিময় নয়, নানা ধরণের বহু বিষয় একে অপরের সাথে আদান প্রদান করি, মতামত বিনিময় করি, এই নিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করি। যার ফল কবিরাও উপভোগ করছেন ফেইসবুক সহ অনেক জায়গায়। তন্মধ্যে আমরা দেখি, WhatsApp এ আমাদের এরকম চর্চার কোনো সীমা পরিসীমা নেই। জীবনে সুন্দর করে, উন্নত বোধে, সুক্ষ অনুভূতিতে বাঁচার জন্য বহু অনুপ্রেরণামূলক বাণী, লেখা, কবিতা, গল্প, ঘটনা আমরা একে অপরকে পাঠাই। সেগুলোর কিছু কিছু আমাদের দারুণ প্রভাবিত করে ফেলে। আমরা স্পিরিচুয়াল বোধে আক্রান্ত হই। আমাদের উদাস করে তোলে, ভাবি এমন পারি না কেনো, এমন হতে পারিনি কেনো ? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচরণ করা তেমনি একটি অনুপ্রেরণামূলক লেখা নিচে দিলাম, পড়ুন মন দিয়ে, তারপর আমার কবিতা সৃষ্টির কারণটি বলছি।


"The best revenge is to move on happily and let karma do the rest…


#Collected


বিপদে পরে টাকা চেয়েছেন কারো কাছে, সাথে সাথেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তার মানে এই নয় যে, আপনার জন্য অলস টাকা নিয়ে সে বসে ছিলো। কেউ আপনার খাবারের বিল আগে দিয়ে দিয়েছে, মানে এই নয় যে, তার কাছে টাকার পাহাড় আছে। লোকাল বাসে আপনার ভাড়াটা পরিচিত কেউ দিয়ে দিয়েছে, মানে এই নয় যে, তার মানিব্যাগ ভর্তি টাকা আছে। তার টাকার পাহাড় নেই কিন্তু পাহাড়ের চেয়েও উঁচু একটা মন আছে। কেউ আপনাকে বিনয়ের সাথে 'সরি' বলেছে, মানে এই নয় যে, সব দোষ তার। কিছু দোষ হয়তো আপনারও ছিল অথবা তার আসলে কোনো দোষই ছিল না, শুধু অহেতুক ঝগড়া করে সম্পর্কটা নষ্ট করতে চায়নি বলেই সে সরিটা নিজেই বলে দিয়েছে। এটা তার দুর্বলতা নয়, এটা তার বিনয়।


কেউ আপনার সব কথা মেনে নিয়েছে মানে এই নয় যে, আপনি সবসময় যৌক্তিক কথা বলেন। বরং আপনাকে সে প্রচন্ড ভালোবাসে বলেই আপনার যৌক্তিক অযৌক্তিক সব কথাই সে মেনে নেয়। যাতে আপনি এতটুকু কষ্ট না পান। কারণ, আপনার কষ্ট আপনাকে যতটা না কষ্ট দেয় তার চেয়ে আপনার কষ্ট তার বুকে আঘাত করে বেশি। এটাই ভালোবাসা।


সব কথার জবাব সবাই মুখে দেয় না। কেউ কেউ সময়ের হাতে ছেড়ে দেয়। কেউ একটু হেসেই চলে যায়। তার হাসির মানে এই নয় যে, আপনার কথা তার ভালো লেগেছে।


মনে রাখবেন- Silence is the best answer of all stupid questions & smile is the best reaction in all critical situations.


যার সম্পর্কে আপনি খুব মিথ্যা বাজে কথা বলেছেন, তিনি সেসব শুনেও প্রতিবাদ না করে চলে গেছে মানে এই নয় যে, সে আসলেই তাই, যা আপনি তার সম্পর্কে বলেছেন। বরং লোকটার তার নিজের প্রতি সম্মানটা অনেক বেশি যার কারণে কারো নোংরা কথার জবাব দিয়ে তিনি তর্কে জড়াতে চায়নি।


কেউ আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছে মানে এই নয় যে, আপনি খুব ছোট ভুল করেছেন বা কোনো অপরাধই করেননি। বরং এমনও হতে পারে তিনি বিচারটা মহান স্রষ্টার হাতেই তুলে দিয়েছেন।


প্রতিশোধ না নেওয়াটাই কখনো কখনো বড় প্রতিশোধ হয়ে যায়।"


পড়তে পড়তে নিজের ভেতর কী যেন এক এরকম মহান হয়ে যাবার বা হয়ে গেছি অনুভব সমস্ত সত্তায় ক্রিয়া করতে লাগলো। এবং মনে মনে যেন শপথ নিলাম, ঠিক এই মুহূর্ত থেকে আমি এরকম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমার জীবন-আচরণে ধারণ করবো। কিন্তু তখনই যেন আমার ভেতরের কবি সত্তা এই অনুভব ঠেলে জেগে উঠলো। এই অনুভবের বিপরীতে আমার কবি সত্তা অবস্থান নিলো। আমাকে তির্যক শব্দে বাক্যের অনুভবে গ্রাস করতে শুরু করলো আমারই কবি সত্তা। আমার কবিতা সৃষ্টি হতে শুরু করলো। মূল ভাব: যতই প্রেরণামূলক বাণী, লেখা হৃদয়ে স্বর্গীয় সুধার মতো মেখে নেই না কেনো, আমাদের জন্মগত, মজ্জাগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে ফেলা অতি সহজ কর্ম নয়। এটাই আমার লিখিত কবিতার পেছনের অনুপ্রেরণার কথা। কবিতাটির ভাব প্রথমে ইংরেজীতে এলেও, সেটির নিমার্ণের মাঝেই, বাংলায় রচনার দিকে চলে গেলাম, সেটা সম্পূর্ণ করার পর ইংরেজীটা সম্পূর্ণ করি।


মজ্জাগত চারিত্রিক জানোয়ারকে
            - মার্শাল ইফতেখার আহমেদ


আমরা যখন সত্তায় শিহরন তোলা
অনুপ্রেরণার বাণী পড়ি।
পড়তে পড়তে ঐ মুহূর্তে অনুভব করি
যেন ঘটে গেছে আমাদের মাঝে বিবর্তন ।
শপথের ঝুঁটি ধরে বলে উঠে মন,
ঠিক এই ক্ষণ,
ঠিক এই ক্ষণ থেকে আমি এরকম হবো।
শুধু ভুলে যাই, অতো সহজ তো নয়,
যেন দরজা খুলে দাঁড়ালেই
মজ্জাগত আমাদের চারিত্রিক জানোয়ারকে
হঠাৎই তাড়িয়ে দেবো।


(০৯.১১.২০২৩)


** আমার মূল ইংরেজী কবিতা: Beast of our character ingrained।


When we read inspirational words,
inspirational story,
right inside of that moment,
we feel we are transformed.
And our mind takes the oath
to be just like that.
But we forget, how hard in fact,
the minute we step outside the door,
to suddenly oust and reject
the beast of our character ingrained.


Copyright © Marshall Iftekhar Ahmed | Year Posted 2023


আন্তরিক ধন্যবাদ সবাইকে।