প্রতি ভোরে
আমার কোনো দুঃখ থাকে না।
থাকলেও, রাত্রি জাগা কুকুরের মতো
নেতিয়ে পড়ে থাকে প্রত্যুষ রাস্তার
আনাচে কানাচে ।  
দর্প নিয়ে দরজা পেরিয়ে আমি
পা রাখি ফুটপাতে।
ভোর বেলার হিমেল বাতাসে
যেন মুছে যায়
গতদিনের বেদনা ও ব্যর্থতার
সকল ইতিহাস ।
কিছু একটা ঠোঁটে পুড়িয়ে, পা দিয়ে পিষে
হাত তুলে সফল কর্মবীরের মতো
আত্মবিশ্বাসে থামাই বাস।
ইয়ার ফোন কানে গুঁজে
খুঁজে নেই ইউটিউবে আমার কিশোরবেলার
অনন্য সঙ্গীতময় ভুবন ।
অথবা শুনি বিরহহীন বরঞ্চ পুনঃ প্রেমে
কোনো হারিয়ে যাওয়া সমৃদ্ধ রমণীর
অতি প্রমিত এবং সুমিষ্ট কন্ঠস্বর,
আমার সতত পতনশীল হৃদয়কে
উত্তোলনের প্রয়াসে
তার অনুপ্রেরণার শব্দাবলী প্রবল।  


সকাল থেকে দুপুর কর্মের প্রহরে
কাউকে দেখলে কাউকে ভাবলে,
কষ্ট মারে ছোবল ।
তবে তখন আমি দুর্দান্ত ওঝা !
কষ্টের লেজ ধরে সাপের মতো
মারতে পারি দারুণ আছাড় ।
অপূর্ব সুখ নিয়ে লাল চা এর মাঝে
নোনতা বিস্কুটের সাথে
ডুবিয়ে দিতে পারি নিজেরও মন।
আর মাঝে মাঝে বেজে উঠে মন্ত্রের মতো
কষ্টকে বিতাড়িত করে শয়তানের মতোন
হাতে ধরা কর্ম প্রহরের অনুসঙ্গ মুঠোফোন।


বিপত্তি ঘটে যখন বিকেল আসে।
দেখি নিঃসঙ্গতার নীল শকুন উড়ছে ।
এখনি নখর থাবায়
তুলে নেবে আমার ম্লান হয়ে পড়া হৃদয়।
ঘুরবে চক্রাকারে ক্ষতবিক্ষত করবে
তারপর ছুঁড়ে দেবে বিষন্ন সন্ধ্যার বাতাসে,
এবং সে ধুসরতা থেকে
বের হবে খুনীর মতো কষ্ট আর একাকীত্ব,
আর আমি ওদের থেকে পালাতে
দৌড়ে গিয়ে দাঁড়াব সর্বনাশা উৎসবে।
কেননা কোনো কোনো নারীর অসংখ্য
নর বন্ধুদের মতো
আমার একটিও নারী বন্ধু নেই।
আমার মতো নিঃসঙ্গ রোগীদের
একমাত্র রমণী সঙ্গই নিতে পারে
যথাযথ উপশমে।
তাই যন্ত্রণা ভুলে যেতে সে আক্ষেপেই
আমার আঙুলে নাচে প্রাণহীন কিছু সম্রাজ্ঞী
পুরুষ উল্লসিত
সান্ধ্যকালীন কোনো আশ্রমে ।


রাত নেমে এলে
বেদনা ও ব্যর্থতার পাণ্ডুলিপি
ক্রমশ ভারী ও পরাক্রমী
হতে থাকে বুকের ভেতরে।
দর্প হীন কাঙালের মতো তখন
আমার এই অস্তিত্ব শুধু ঘুমের প্রার্থনা করে।
আর কখনো কখনো রাতের গহ্বরে
বন্ধু মত্ত সব
আনন্দময়ীদের নির্মমতার শিল্প
নির্মাণ করে কবিতায়
কবিতার অনুপযোগী শব্দের যত আর্তস্বরে।


(০৫.০৩.২০২৩)