আমি এখন তোমার থেকে শত বছর দূরে....


প্রক্রিয়াজাত জীবনের এক জীব, অসুস্থ আধুনিক শহরে
ফাঁকা ক্ষিপ্র বিবরের এক মরীচিকা, বিরহী কবি;
তোমার "বিচ্ছেদ" এর এই যুগ-ছেদী শব্দটি....
নিজের লেখা শত সহস্রবার বিচ্ছেদকে ছিন্ন ও চূর্ণ-বিচূর্ণ করে
নক্ষত্রলোকে লজ্জাকরভাবে মিশিয়ে দেয় অবলীলায়;


আমি ভীত হয়ে পড়ি
তোমার "বিচ্ছেদ" এর এই অমরাবতীর মতো লোকজ সুরে....
সহ্য হয় না সে সুরের প্রগাঢ় সাঁড়াশি, বহুকাল পুড়িয়েছে,
জ্বলেছে হৃদ-অঙ্গ, সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের থেকেও উচ্চতর এক অনাদি অনলে;


নরম বাতির আলোকে মনোরোম শতবর্ষ পূর্বে
বিশুদ্ধ বিষন্ণ তোমাদের আসরের সন্ধ্যাকাল.....
এই শহরজাত আধুনিকতার অশ্লীল গহ্বরে বসে
শুধু কল্পনাই করে নিতে পারি, হে পরম মরমী কবি;
চুমুকে চুমুকে পান করি ব্ল্যাক কফি আর ভাবি....


তোমার এই অন্যভুবনলোকের মতো অলৌকিক বিরহী সুর....
শুনে স্তব্ধ হয়েছিলেন কি রবি? রাজা হাসনের সাথে ছিল সখ্যতা তোমার জানি,
তবে রবি? তোমার লোকজ এ সুর-শব্দে বিস্ময়াভূত কোনো এক ক্ষণে
মৌন কী হয়েনি পড়েনি তাঁরও অমিয় গানের কলম?


রাধারমন হে সন্ন্যাসী !
কে দিয়ে গেলো তোমাকে, এই অনন্য হৃদয়হরণ দ্যোতনার দ্যুতিময় সুর?
আজও শতবর্ষ পরে বিরহীদের ভরে দেয় শামুকের মতো একাকীত্বের ভেতর;
গায়ে জড়িয়ে বিষন্ণ উদাস চাদর, ইচ্ছে হয় খুঁজে বেড়াই
তোমার ঐ লোকভূমে বিচ্ছেদের সে মায়া-পাখি;


পূর্ব-লোকজ নির্মল দিনের অনন্য সাধক, হে লোক কবি,
আমাদের যদি আজ কেউ বলে,_ লেখো তো, এত সহজ করে...
"বিচ্ছেদের অনলে অঙ্গ যায় জ্বলিয়া রে ভ্রমর...."
তারপর দাও তাহার ওপর হৃদয় মন্থন করা এমন হাহাকার সুর....
সম্ভাবনা আজ তার অতিমাত্রায় সুদূর;


প্রেমের মাঝে বিচ্ছেদের এই যে অনুভব,
আজকের প্রক্রিয়াজাত পৃথিবীর হাজারো বাঙালি কবির,  
হাজারো আধুনিক শব্দ সমাবেশেও তা নির্মাণের দক্ষতা
শত জনম অসাধ্যের দরজায় শুধু মাথাই ঠুকে যাবে!


হে রাধারমন !
আজ হতে শত বছর আগে তোমার সামান্য শব্দ-চয়নে
আর অসামান্য সুরে এই গান....
আজ শত শব্দ-সুরের গভীর সাগর মথিত করেও
সৃষ্টি হবে না নিখুঁত অমর বিরহী এই ব্যঞ্জনা!
দেবে না বিরহীদের বুকের সুপ্ত সুশীল আবেগের বেদীতে
ভ্রমর কইও গিয়া'র মতো বিচ্ছেদী এ অর্ঘ্যের অতুলনীয় পুষ্প-কোমল বেদনা ।


(২০.০৭.২০২০)