গভীর রজনী, ডাকিল কোনোও এক নারী
‘এসো বীর তীরন্দাজ গৃহ কোণ থেকে’।
গৃহ থেকে বেড় হয়ে দেখি- দুলদুল ঘোড়া
এক রয়েছে দাঁড়ায়ে নিকানো উঠানে
কহিল সে-‘চেপে বসো পীঠে’!
নাহি কিছু ভেবে মন্ত্রমুগ্ধের মতন
চেপে বসলাম ঘোড়ার নরম পীঠে
পলকে পৌঁছে গেলাম কোনোও এক অজানা
সাগরের বুকে জেগেথাকা সবুজ প্রবাল দ্বীপে।
চারিদিকে প্রবাল প্রাচীর মাঝখানে নীল সরোবর
আশ্চর্য সুন্দর! অপার্থিব আলোর বিভায় ভরা
কোমল বাতাস ছাড়া আর কিছু নাই;
হাঁটতে হাঁটতে হ্রদের কিনার ধরে দেখলাম-
মৎস্যকুমারী এক বিমর্ষ বদনে রয়েছে বসে
বালুকার’পরে, অর্ধেক তার জলের ভিতরে।
বুকের ভিতরে চিনচিনে ব্যথা অনুভুত হলে
অঞ্জলিতে তুলে নিলাম নরম মুখখানি
কহিল না কোনো কথা,
অপলক চোখে রাখলাম চোখ
হাতের কোমল পরশে ঝরল অশ্রু দু’ফোটা,
কাঁপল তাহার ঠোঁট, বিস্ফারিত চোখে ভীতির ছায়া
দৃষ্টি তার ঘুরে গেল জলের দিকে- ‘দেখো ঐ’
ঘুরাতে আমার চোখ চমকে গেলাম-
হ্রদের মাঝখানের জল ফুঁড়ে জাগতেছে
রক্ত চক্ষু দানব এক!
মনের অজান্তে হাতে উঠে এলো তীর
ধনুকের ছিলা টান টান ছুটে গেল বাণ
লক্ষ্য দানবের চক্ষু
এক এক দুই, কানে ভাসে দানবের গর্জন
এবারে ছুটল বাণ, ভেদিল বক্ষ তার বাম আর ডান
কানফাটা দানব গর্জন
ছুটল বাণ ছেদিল কণ্ঠনালী, স্তব্ধ হলো গর্জন
আগুন রূপে ত্যাগিল দানবের প্রাণ;
বিশাল কায়া ডুবিল ধীরে লোহিতসলিলে।
মৎসকুমারী গোঁজল মুখ আমার লোমোশ বুকে
চাপাকান্নায় শরীর তার ওঠছে কেঁপে কেঁপে,
অবাক নয়নে দেখলাম- তার রূপ বদলে যাচ্ছে
পরিণত রূপ পেল পরমা সুন্দরী মায়াবী নারীর।
তার চোখের জল মুছতে ফুটল হাসি
আবেগ জড়ানো গলায় কহিল সে-‘দেখো ঐ’
তাকায়ে বিস্মিত আমি, হ্রদ আর হ্রদ নেই
সেথা রয়েছে দাঁড়ায়ে এক সুশোভিত হেমহর্ম্য
চারিদিকে ঘেরা সবুজ অরণ্য আর ফুলের বাগান
হরেক রকম পাখি আর পাখির মধুর কলোতান!
আকুল আবেগে শক্ত দুইহাতে আমাকে জড়ায়ে  
নিয়ে গেল ফিরে পাওয়া তাহার নিরালা নিলয়ে!