চারিদিকে নিরুত্তাপ হালকা আঁধার
কালাপানি ভেঙ্গে চলেছে তরণী একখানি
আমরা ক’জন লোকান্তরের সহযাত্রী
সদ্য প্রায়ত জনাকয়েক নর-নারী
অস্পষ্ট কায়াধারী অচেনা সবাই
কলেজ পড়ুয়া সুশ্রী তরুণী এক
যন্ত্রদানব অকালে পাঠায়েছে তারে লোকান্তরে
আকাশ নেই চাঁদ নেই তারা নেই দিনের আলো নেই
এমন এক জমিনে পৌঁছে যাই আমরা
রেল স্টেশনের বেঞ্চির মতন কিছু কাঠের বেঞ্চিতে
বসে আছি ছাদ ছায়া আলো হীন
নিশ্চুপ নিরুত্তাপ বাতাসের বেগ নেই সূর্য নেই
চাঁদ তারা নেই হিম কিংবা উষ্ণতাও নেই
ক্যাবল প্রতীক্ষা এখান থেকে প্রস্থানের ।


পাথর সময় কেটে পায় পায় হেঁটে
অদূরে এক ফটক পার হয়ে ঢুকে পড়লাম
এক নতুন আস্তানায়, চারিদিক ছিমছাম
পরিচ্ছন্ন পরিমল নরম আলোয়ে ভরা
মসৃন কংক্রিটের পায় হাঁটা সাদা পথ
কাঁচিছাটা দুর্বা লতা গুল্মের ঝাড় অপুর্ব সবুজ
সাধারন কিছু স্থাপনা, উৎস হীন নরম আলো,
প্রথম মহলে ঢুকে পরলাম; মুরগীর খোঁয়াড়ের মত
দীর্ঘ ঘর মোটা তারের জাল দিয়ে ঘেরা
অচেনা সব মানুষ খুব ভালো বলে মনে হলো না ;
মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গর্তে বসে যাওয়া চোখ
গাঞ্জুটে এক লোক গায় পরে লাগতে এলো
এক চোট হয়ে গেলো আছড়ে হাত-পা
ভেঙ্গে দিলাম; কারারক্ষীর মতন দন্ড হাতে
এক জন তেড়ে এলো
দন্ডাঘাত শরীর ছোঁয়ার আগেই সটকে
পড়লাম তারের বেড়ার ফাঁক গলে ।
সবুজ ঘাসের জমিন মাড়িয়ে
চলে এলাম মসৃন সড়কে
কিছুটা পথ এগুতেই দেখলাম
ন্যাড়া মাথার বিশালদেহী কয়েকজন
হাতে কাঁটাতারের বেড়ী, বেয়াড়া নয় ভদ্র
মুখে শব্দ নেই
আমার পায়ে কাঁটাতারের বেড়ী
পরাতে চাইলে সযতনে এড়িয়ে গেলাম ।
নির্বিঘ্নে ঢুকে পরলাম দ্বিতীয় মহলে
বেশ কিছু নারী পুরুষ এখানে
কেহ দাঁড়িয়ে কেহবা বসে,আমি এগিয়ে যাচ্ছি
একজন নারী চোখে মুখে কাম ভাব নিয়ে
ঈশারায় কাছে ডাকল ,
অবাক হলাম; এখানেও যৌনতা (?)
চলে গেলাম ভিন্ন দিকে
দেখলাম বেশ কিছু মানুষ ব্যস্ত
রুটি আর ব্যঞ্জন তৈরীতে
পার হয়ে রন্ধনশালা
চলে এলাম এক নতুন মহলে
অনেক শান্ত এবং মনোরম পরিবেশ
অনেক মানুষ সবাই অচেনা
কিছুটা পথ এগোতে অবাক বিস্ময়ে
থমকে গেলাম
দেখলাম সম্মুখে আমার জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
আর প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ
জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুকে স্বশরীরে দেখা হয়নি
আর জীবনানন্দ দাশ আমার জন্মের বহু
পূর্বেই হয়েছেন লোকান্তরিত ।
লোকান্তরে তাঁদের সাথে
একই মহলে সহাবস্থান ভাবতেই
অভাবিত এক পুলক শিহরণ
ছুঁয়ে গেলো দেহমন !