গভীর নিশীথে পরমা সুন্দরী এক
অপ্সরী আমার হাত ধরে বলল
তোমাকে আজ নিয়ে যাব প্রেমের
স্বর্গ উদ্যানে – যাবে আমার সাথে ;
অবাক চোখে তাকিয়ে শুধালাম
প্রেমের স্বর্গ উদ্যান ! বেশ যাব ।


তার নরম দু’হাতে আমাকে জড়িয়ে নিল
গভীর মমতায় তার নরম বুকে
এবং আমাকে বলল – ‘ তোমার দু’হাত দিয়ে
আমায় ধর শক্ত করে ‘ আমিও তাই করলাম;
তারপর তার পাখনা মেলে পলকে
পৌঁছে গেলাম আমরা স্বর্গ উদ্যানে ।


ফুল আর ফলে ঠাসা সবুজ আর সবুজ
পাহাড় ঘেরা ডালিমের রসে ভরা
একটা সরোবর , মাঝ খানে ফুটে আছে
অনিন্দ্য সুন্দর এক নীল পদ্ম ;
পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে
সবুজ মখমলের চাদর সরোবরের কিনারাবধি
নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ চেতনা আমার
সম্বিৎ ফিরে পায় তার মধুর ডাকে – এসো !


হাতে হাত রেখে চলছি আমরা
সবুজ ঘাস, ঝরে পড়া ফুল পাতা মাড়িয়ে
কিছু দূর যেতেই চোখে পড়ল
পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝরনাধারা
রঙ যার দুধের মতন সাদা
দু’হাতের আঁজলায় ভরে পিয়াইলাম
মনে হল এ যেন শরাবনত্বহুরা !


এবার শুরু হলো বাক প্রস্রবণ
বেদবাক্যের মতন ; রমণী শুধালো –
‘ তুমি কি কোনোও কবি’ ?
বলিলাম – না ।
আবার শুধালো – ‘কবি হ’তে ইচ্ছে করে’ ?
কহিলাম – তোমাকে পাশে পেলে ।


অধরতে স্মিত হাসি খেলে গেলো তার
রহস্যময় চোখ দু’টো স্থির আমার চোখে,
আমিও নিষ্পলক ;
আমাদের হাতে হাত
শরীর জুড়ে এক অস্থির অদ্ভুত শিহরণ
শরীরের লোমগুলো রাজহাঁসের
পালকের মত বড় হ’তে থাকলো
তার হাত থেকে আমার হাত খসে গেল
আমি এখন মস্তবড় এক রাজহংস ।
মধুর কন্ঠে বলল –‘ নেমে যাও এই সরোবরে ;


লাল কালো সাদা গোলাপি কমলা
বেগুনি সবুজ সব রকমের মুক্তা
এই সরোবরের ঝিনুকের পেটে,
সবগুলো ঝিনুক তুমি গিলে ফেলো
ওরাই একদিন বর্ণমালার পঙক্তি হবে
হবে অনন্য বর্ণিল পদ্য ;
তুমি হবে আমার স্বপ্নের কবি’ !


নারীর হৃদয় জয় করার নেশায়
কিংবা কবি হওয়ার বাসনায়
সরোবরে ডুব দিয়ে ছোট বড় সবগুলো
ঝিনুক গিলে নিলাম পেটের ভেতর
তারপর পদ্মের মূল শিকড় লতা পাতা
এমন কি নীল পদ্মটাও গিলে ফেললাম ।


চিৎকার করে কেঁদে উঠল পরমা সুন্দরী –
‘ এ তুমি কি করলে
ঐ নীল পদ্মই যে আমার জীবন
আমার আবাস ‘ !
এখন আমি আর রাজহংস নই
অনিন্দ্য সুন্দর এক যুবা ।


গাঢ়ো মমতায় তরুণীর চোখের জল মুছে
বললাম – এখন থেকে তোমার আবাস
আমার বুকে আমি তোমার জীবন
দু’হাত প্রসারিত করে ডাকলাম তারে -
এসো প্রিয়া  আমার বুকে ;
ক্লান্ত পায়ে সে এলো আমার বুকে
দুই হাতে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলাম
আমার বুকে মাথা রেখে অঝোর ধারায় কাঁদল;
গাঢ়ো স্বরে কহিলাম তারে
আমার বুকের ভিতরে বসে তুমি
বর্ণিল মুক্তা দিয়ে পদ্মপাতায় পদ্য রচবে
আর আমি হব তোমার স্বপ্নের কবি ।


সে এবার মুখ তুলে তাকালো
আমার চোখে চোখ রেখে বিপণ্ণ স্বরে বলল -
‘আমি জলপরী, ঐ নীল পদ্মই আমার জীবন
আমার আবাস, তুমি জানোনা’ ;
এ কথা বলেই সে মিলিয়ে গেলো হাওয়ায়
আমার বুকে পড়ে থাকল জলপরীর
কয়েক আঁজলা চোখের জল
আর একটা বুক ফাটা দীর্ঘশ্বাস !


আমার বুকে জলপরীর অশ্রু আর কান্না নিয়ে
হয়ে গেলাম একটা মজাপুকুর,
প্রতিরাতে আমি শুনতে পাই ঝিনুকের নিঃশ্বাস
ফেলার শব্দ আর জলপরীর করুন কান্না
বর্ণিল মুক্তো দিয়ে পদ্য রচার ক্ষমতা নেই
আমি এখন একটা মজাপুকুর শুধুই !


তেল তেলে কুইচ্চার লোভে মানুষেরা
অবিরাম ট্যাডা দিয়ে এপার থেকে ওপার
খোঁচাচ্ছে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ
ট্যাডার খোঁচায় খোঁচায় মরে গেছে ঝিনুকেরা
আমার বুকে মুক্তা নেই নীল পদ্ম নেই
পদ্মপাতা নাই নাই কোনো পদ্য;
মজাপুকুরে তেল তেলে কুইচ্চা লোভী
মানুষের ট্যাডার খোঁচানী আছে শুধু !


আমি যে এখন শুধু একটা মজাপুকুর,
আর প্রতিরাতে শুনতে পাই জলপরীর করুন কান্না !