কাল রাত ছিল প্রচন্ড উত্তাপের রাত ,
পৃথিবীর সবটুকু হাওয়া ছিল
সাগরের বুকে সমাহিত ;
নির্মেঘ আকাশে খৈ ফুলের মত
তারাদের প্রচন্ড ভিড় ছিল ,
সারা আকাশ থেকে হলুদ আলো
চুয়িয়ে চুয়িয়ে পড়ছিল পৃথিবীতে, -
মনে হচ্ছিল আজ রাতে
নরকের দেয়াল ফেটে গ্যাছে !


নিদ্রাহীন এক জোড়া চোখ নিয়ে
কাল সারারাত প্রচন্ড উত্তাপের
সাথে যুদ্ধ করতে করতে
রাতের শেষ প্রহরে
গাঢ় নিষুতির কোলে
আমি সমর্পিত হ’লে
তুমি এলে ;
ক্লান্তির মলিন ছায়া ভরা
এক জোড়া চোখ নিয়ে
চেয়েছিলে আমার চোখে !
মলিন নির্লিপ্ত ঠোঁট জোড়া ছিল
ভীষণ স্থবির !
শুষ্ক এবং প্রলম্বিত কাঁপা কাঁপা
নিশ্বাসে তোমার বুকটা
ওঠানামা করছিল –
মনে হচ্ছিল প্রচণ্ড সামুদ্রিক ঝড়
বয়ে যাচ্ছে হৃদয়ে তোমার !
তোমার মুখোমুখি বসে ছিলাম
খুব কাছা কাছি
তবুও তোমার আমার ভেতর
দূরত্ব ছিল যেন
যোজন যোজন ব্যবধান !


তোমাকে দেখে –
হারিয়ে যাওয়া মুক্তোর মালা
মলিন আঁধারে ছাইয়ের ভেতর
খুঁজে পেলে হৃদয়ে যেমনি
এক টুকরো বেদনা জাগে
তেমনি এক গভীর গভীরতর
হরষ-বিষাদ জেগে ছিল
হৃদয়ের এক ছোট্ট কুঠরিতে !


তোমার অশরীরী উপস্থিতি
আমায় কেমন যেন বিহ্বল
করে তুলেছিল !
তোমার মলিন চোখ জোড়া
গাঢ় গাঢ় নৈঃশব্দে
আমায় যেন বার বার বলছিল –
‘ ভালোবাসা হীন নগরীর ঐশ্বর্য
থেকে পলাতকা এক ক্লান্ত
প্রাণ আমি ;
নির্জন দ্বীপের অধিবাসী
তোমার মুখোমুখি
একটু শান্তির অন্বেষায় ! ‘
বারো বারোটি  বছর পরে
বারো বারোটি বছর আগেকার
দিনটিরে খুঁজে পেতে
তোমার অশরীরী উপস্থিতি
কালরাতের শেষ প্রহরে ?


কাল প্রচন্ড উত্তাপের রাত ছিল ,
কাল সারারাত জেগে জেগে
তারারা ছড়িয়েছে হলুদ আলো ;
ম্রিয়মান হলুদ আলোয়ে
তুমি আর আমি
নির্জন দ্বীপে বসে আছি ,
বসে থাকছি মুখোমুখি
এক মুঠো শান্তির অন্বেষায় !