এতিম যদি খোঁজ তুমি এসো আমার গাঁয়
ফকির বাড়ির মফিজ এতিম অসহায়,
মা ডাক মুখে ফুটার আগেই মা তার হায়
হাত পা অবশ হয়ে যায় পর দুনিয়ায়।


মা তার জগৎ সেরা মা পাড়ার লোকে কয়
মা মরা ছেলে শহিদুল কে ভরে মমতায়
বুঝিতে দেয়নি মা হারা ব্যথা যে কারে কয়
সেই মায়ের ছেলে আজ এতিম অসহায়।


বাজান তার নতুন বিয়ে করেছে বিধায়
বড় দুঃখী মফিজ জীর্ণ তনুতে বলে দেয়,
সৎ মা দেয়না গো খাবার যারে পায় কয়
যদিবা কেউ খাবার দেয় মায়ায় জরায়।


বড় বোন শশুর বাড়ি বছরে আসে হায়
বড় ভাই বিয়ে করে অন্য ঘরে ভিন্ন খায়
মেজো ভাই ঢাকায় কাজ করে কারখানায়
দুই বোন সাফিয়া রুনার খরচ জোগায়।


মফিজ বিনা এতিম সব ভালয় ভালয়
ছোট্ট মফিজ ক্ষুদার্ত ভাবে করে কি উপায়?
দু'মাস হলো বাজান গেল পরপারে হায়
সৎ মা যে মায়োই তার ব্যবহারেই কয়।


মায়ের পালক ছেলে শহিদুল তারে কয়
বরে যদি কাজ করো খাবার দেব তোমায়
ছ'বছর বয়সে মফিজ কাজে নেমে যায়
জীবন সংগ্রামে ব্যস্ত নাই খেলার সময়।


তবু সে আসে খেলার তরে যদি ফাঁক পায়
পাড়ার কোনো ছেলে সাথি করে খেলায় নেয়
আবার কিছু তারে ভালবাসে কিছু কিলায়
শোন হে শোন এতিম জীবন কেমনে যায়।


পাড়ার দুষ্টু ছেলে তারে কোলে তুলে কিলায়
ভুতে ধরা মেয়ের মত সে যে খিলখিলায়
জানতে চাইলে বলে কোনো কালে মোরে মায়
নেয় নি কোলে কোলের যতন পাব কোথায়?
সবাই মারে ভাই ও মারলে কি দোষ হয়
এমনো যতন পাব কী আর অন্য কোথায়।


রৌদ্র তাপে ধান কাটে, আনে বোঝায় বোঝায়
ধুলা মাটি লেগেই আছে ঘামাচি ভরা গায়
বর্ষা দিনে বৃষ্টি ভিজে পোয়ার বাঁধতে যায়
তুলতুলে পা খানি তার কাদায় খুরে খায়,
অল্প দিনে মফিজ বড় বারুই লোকে কয়
জোড়া নাই তার পোয়ার বাঁধা, পান ভাঙায়।


এত্ত কাজেও তার ছোট্ট উদর খালি রয়
এতিম মফিজ দোয়া করে ওগো দয়াময়
মিঞা বাড়ির বুড়ার যেন আজ মৃত্যু হয়,
মিঞারা বড় ভাল মানুষ মোর মনে কয়
কেউ মারা গেলে ওরা পেট ভরে খেতে দেয়,
বিয়েতে বিষ মরণে হাসির শিষ ধরায়
এমন জীবন এতিম ছাঁড়া কারও নয়
কেনো গো এমন খেলা খেলো প্রভু দয়াময়।


(অনলাইন পোর্টাল দৈনিক চতুর্দিক এর সাহিত্য বিষয়ক ম্যাগাজিন (অফলাইন)  "সাহিত্য শতদল" এ প্রকাশিত।)


রচনাকাল :
১৭ এপ্রিল' ১৬ইং
চরপদ্মা,বরিশাল।