এক যে ছিল সত্যবাদী, সত্যনিষ্ঠ পরোপকরী,
সবার সাথে মানিয়ে চলত সে এক নতুন সমাজের যুগান্তকারী।
নাম ছিল তার অনেক, কিন্তু গ্রামবাসী আদর করে ডাকত সত্যবাদী;
ছোট থেকে বড় হওয়ার পথে গড়েছিল নানা রকম কীর্তি।
কোনো ঠিক ঠিকানা ছিল না তার,
সে গ্রামের নানাপ্রান্তে দিনেরাতে ঘুরত ফিরত,
দিনের পর দিন রক্ষা করেছিল গ্রামকে সত্যবাদিতার জোড়েতে।
রাখাল বালক-খেটে খাওয়া-মেহেনতি মানুষেরা ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী,
বাসত তাদের প্রাণভরে, সে চিনত তাদের সকল অঙ্গভঙ্গী।
গ্রামবাসীরা ভালোবেসে তাকে করে নিয়েছিল নিত্য আপন করে,
গ্রামের মানুষজনের দৈনন্দিন জীবনকে সুরক্ষা করতে সে ঠাই নিয়েছিল চৌকিদার হয়ে।


হতদরিদ্র ছিল সে, ঘুরে ফিরে খেত সাধারন মানুষের ভাত,
কোথা থেকে এসেছিল সে, গ্রামবাসীদের ধারনা ছিল সে অনাথ।
বুলবুল পাখির মধুর কণ্ঠে তার নিদ্রা ভাঙত ভোরবেলার ডাকে,
গ্রামের ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের সাথে সে খেলত বিকেলবেলার মাঠে।
রক্তের সম্পর্কের কেউ ছিল না তার, তা সত্বেও তার উৎসাহ হতনা লীন,
আনন্দ উৎসবে সে মাতিয়ে রাখত  জনগনের রোজকার দিন।
অভাবে অনটনে কাটত তার দিন, মনে নেই তার পিতা-মাতার স্মৃতি,
গ্রামবাসীদের অঢেল আনন্দের ছোয়াতে সে যেন ভূলে গিয়েছিল তার একাকীত্বর দৃষ্টি।
ছিল না তার কুল, ছিল না তার কিনারা, তবুও গ্রামবাসী তাকে করে নিয়েছিল আপনজন,
অতীতের স্মৃতিটুকুও যেন তার মনে নেই, সে যেন ভূলে গিয়েছিল তার প্রিয়জন।


হঠাৎ একদিন সে গ্রাম থেকে উধাও, রেখে যায়নি কোনো চিহ্ন,
গ্রামের সকল মানুষের হৃদয় ভঙ্গ করে সে চলে গেছে চিরকালের জন্য।
সে পেয়েছিল জনগনের বুকভরা ভালবাসা, পেয়েছিল অনেক যত্ন;
নাম যে তার সত্যবাদী, সবার জন্য সে রেখে গেছে একটি প্রশ্ন।
সে কি ফিরে পেয়েছিল তার অতীত; তার অতীতের সবকিছু?
যদি এটা না হয় তাহলে কেন ভূলে চলে গিয়েছিল তার বর্তমানের ভালোবাসার পিছু।
সে ছিল সকল কিছুর মূলে, গ্রামবাসীরা তার অভাব পূরণ করতে পারবেনা কোনোকালে,
সকলের মনে ক্ষত দিয়ে সে যেন এখন অন্তরালে।
ছিল সে সত্যবাদী, গ্রামের স্বল্পকালের অতিথি,
সত্যবাদিতার জোড়ে সে সরল গ্রামবাসীদের করে নিয়েছিল নিজেদের চিরসাথী।