"স্বর্গ"
লেখক; শ্রী গৌতম রায়


স্বর্গ নরক বলে কিছু নেই এ জগতে।
পাপ পুণ্য আছে শুধু নিজের মনের কাছে।


আমার কর্মই শুধু থেকে যাবে এই পৃথিবীতে,
এ জগতে জন্ম আমার শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ রূপে।


প্রকৃতির সৃষ্টিকে আলোবাসি চিরতরে ,
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘুরছে নিজ শক্তি বলে।


নিরাকার সেই শক্তিকে সম্মান করি ভগবান ভেবে।
কোথা থেকে এলাম, কোথায় যাবো চলে ভাবি না এভাবে।
জীবন মরণ আছে শুধু সময়ের কাছে।।


অপূর্ব সুন্দর মানবতাবাদী ও জীবনমুখী লেখা। অনেকটা দার্শনিক ভাবনা তরঙ্গ খেলা করে যায় সম্পূর্ণ কবিতাটিতে। প্রথমেই কবি স্পষ্টভাবে লিখেছেন,"স্বর্গ নরক বলে কিছ নেই এ জগতে। পাপ পুণ্য আছে শুধু নিজের মনের কাছে।" কবি একজন বাস্তববাদী মানুষ আর তাই  তিনি কোনও মিথ-এ তার মনকে আটকে রাখতে চান না। তিনি বিশ্বাস করে থাকেন নিজের নিজের কর্মগুণে এই পৃথিবীতেই স্বর্গ রচিত হয় বিপরীতে নরক। তিনি বলেছেন, "এ জগতে জন্ম আমার শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ রূপে"। অবশ্যই সত্য কথন কেহই তা অস্বীকার করতে পারবে না। মায়া মমতা স্নেহ ইত্যাদি গুণ পশুদের মধ্যে থাকলেও মান আর হুঁশ জ্ঞান মানুষ ছাড়া আর কোনও প্রাণীরই থাকে না। বন্য যেমন প্রবৃত্তি হয়ে থাকে তাদের। কবি তার কবিতায় এই বার্তাটিই পাঠকের সমীপে উত্থাপন করতে উদ্যোগী হয়েছেন তার লেখা কবিতায়। এই মান আর হুঁশ ব্যতিরেকে মানুষ সে বন্য পশুর ওই সমতুল্য। তাছাড়াও তিনি এই শ্রেষ্ঠ জীবের উপমা টেনে বলতে চেয়েছেন এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হওয়া সত্ত্বেও কেন আমরা পাপাচারে লিপ্ত হয়ে কর্দমাক্ত করে তুলবো সুন্দর এই মেদিনীকে। কেন কেন কেন? যেখানে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে আমরা সকলেই জানি মৃত্যুর পর আমার কর্মের গুণেই কেবলমাত্র মানুষের হৃদয় সিংহাসনে বিরাজ করতে সক্ষম হতে পারি নতুবা নয়। কবি তাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তার কবিতায়, "আমার কর্মই শুধু থেকে যাবে এই পৃথিবীতে।"


আজ দুনিয়া হিংসা দ্বেষের বহ্নি শিখায় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে, দিকে দিকে ব্যভিচার ভ্রষ্টাচারে লিপ্ত মানুষজন। দেশে দেশে অরাজকতার রাজ বিরাজমান। মা বোনের নিরাপত্তা নেই পথে ঘাটে। গণধর্ষণ শুধু না গণধর্ষণ করে খুন করা বা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া মত বীভৎস ঘটনা হর হামেশা চোখে পরে খররের কাগজ খুললেই। স্বয়ং পিতার দ্বারা নির্যাতিতা হচ্ছে শিশুকন্যা। এই কী! এই কী শ্রেষ্ঠ জীবের নমুনা? মৌন স্বরে কবিতায় কবি যেন সমাজের কাছে প্রশ্ন তুলে গেলেন এই কবিতায়।


কবি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এই সুন্দর প্রকৃতিকে , এই প্রকাণ্ড বিশ্বব্রহ্মান্ডকে, কোথা থেকে এলাম , কোথায় ফিরে যেতে হবে একসময়। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সর্বশক্তিমান নিরাকার সেই পরমাত্মাকে , তার সে বিপুল শক্তির আরাধনা করেছেন কবিতায়। প্রকারান্তরে এই বিপুল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অনন্ত কালে্র প্রবাহে কতটুকু স্থায়িত্ব পায় আমাদের জীবনকাল! সেটাই যেন আঙুল তুলে বুঝিয়ে গেলেন কবিতার অক্ষরে।


তাহলে! সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও এই সামান্য জীবনকালে মান আর হুঁশ নিয়েও কেন আমরা মানবিক গুণাবলির সম্প্রসারণে  কেন , কেন আমরা  হিংসা দ্বেষ লোভ লালসা বিসর্জন দিয়ে এই পৃথিবীতেই স্বর্গ রচনা করতে সক্ষম হতে পারি না বা পারবো না।


কবিতাটির নামকরণ স্বর্গ সম্পূর্ণভাবে সার্থক।


এমন সুন্দর মানবতাবাদী কবিতা উপহার দেবার জন্য প্রিয় কবিকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।।