বহুদিন লোকান্তরে ঘুরতে ঘুরতে
পরলোকবাসী আমার হঠাৎ মনে হল
যাই, একবার মর্ত্যলোক দর্শন ক'রে আসি
নীরবে, সবার অলক্ষ্যে।
দেখে আসি জগতের আনন্দ যজ্ঞে
এখন কোন্ সে কবির নিমন্ত্রণ।
দেখে আসি, আমার মহান ভারতের
মহামানবের সাগর তীরে বেজে চলেছে
কোন্ সুমধুর ঐকতান।
একবার দেখে আসি
আমার আদরিনী বাংলা মায়ের আধুনিক রূপ
যার উদ্দেশ্যে একদিন গেয়েছিলাম -
সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।
মনে হল একটু সন্ধান ক'রে দেখি
এখনো কতটা আদৃত বহু সাধনার ধন
আমার সাধের কবিতাগুলি।
সেই যে ভেবেছিলাম -
আজি হতে শতবর্ষ পরে
পড়ছ কি ব'সে কেউ
এ কবিতা কৌতূহল ভরে !
এখনো পুরনো দিনের কেউ কেউ 
হয়তো পড়ছে আমার কোনো বা কবিতা
তবে শিশুরা পড়ছে না আর সেই সহজ পাঠ,
কিম্বা কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি।
এখন কোথায় বা সেই কুমোর পাড়া
আর কোথায় বা সেই গরুর গাড়ি!
ঘরে ঘরে এখন তো সঙ্গী সবার
চারচাকা কার আর ল্যাপটপ, কম্পিউটার।


আর আমার সখের গানগুলি!
তানপুরাটার তারগুলিতে
ধুলি হয়তো জমেনি পুরোপুরি,
কিন্তু একালের নতুন গানগুলির পাশে যেন
বড়ই বেমানান 'অয়ি ভূবনমনোমোহিনী',
কিম্বা 'নিদ্রা হারা রাতের এ গান'।
আর সেই গল্প উপন্যাস প্রবন্ধের সম্ভার
সে তো অচলায়তনের মতো
বৃদ্ধি করছে কোনো কোনো বনেদী ঘরের
আলমারির শোভাই শধু।


হ্যাঁ, পঁচিশে বৈশাখে ঘটা ক'রে
পালন হচ্ছে বটে আমার জন্মদিন,
দুএকটা তাশের দেশ চিত্রাঙ্গদা বা শাপমোচন এখনো মঞ্চস্থ হচ্ছে ঠিকই ,
তবে তা কিছুটা ঐ ভুল ক'রে পাওয়া
নোবেল প্রাইজের দৌলতে
আর কিছুটা নৃত্য কলার
নতুন লম্ফঝম্প প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে।


এখন লোকে ভুলতে বসেছে
কাল ছিল ডাল খালি
আজ ফুলে যায় ভ'রে।
বল দেখি তুই মালি
হয় সে কেমন ক'রে!
এখন, ফুল ফুটক না ফুটুক আজ বসন্ত।
এখন প্রয়োজন নেই কোনো শৃঙ্খলার,
আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।


তা বেশ, কিন্তু সেই যে লিখেছিলাম
হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব।
কোনো লাভই হল না বোধহয় !
এ কি অতিসভ্যতার সংকট?
এখনো প্রতিকার হীন শক্তের অপরাধে
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।
তাই পুনরায় পরলোকে ফিরে যেতে যেতে
রেখে গেলাম সেই একই প্রশ্ন -
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ
       তুমি কি বেসেছ ভালো?