কোনো তাৎপর্যপূর্ণ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করার যোগ্যতা এবং সময় দুটোরই বড় অভাব। তাই সচরাচর কিছু লিখতে ভরসা পাই না। তবুও আজ রবিবার সকালে কবিগুরুর একটা গান শুনতে শুনতে মনটা বড় নির্ভার হয়ে উঠল একটা মুক্তির স্বাদের সঙ্গে। গানটা হল -
তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে
       যত দূরে আমি ধাই -
কোথাও দুঃখ কোথাও মৃত্যু, 
        কোথা বিচ্ছেদ নাই।


গানটা গাইছিল বোধহয় রেজোয়ানা অথবা অ্যারিনার মতো কোনো বিশিষ্ট গায়িকা। হয়তো বিশেষভাবে ভালো লাগার সেটাও একটা কারণ। কিন্তু এই গান তো আমি আগেও বহুবার শুনেছি বা অপটু গলায় গেয়েওছি। কিন্তু আজ হঠাৎ মনে এত আলোড়ন কেন ! এত ভালো লাগার উপলব্ধি কেন?  রবি ঠাকুর তো অকাতরে বিলিয়েই গেছেন। বিশিষ্ট শিল্পীদের কণ্ঠেও বহুবার শুনেছি গানটি।
আসলে নিজের ভিতরের কবি স্বত্বা, গায়ক স্বত্বা যখন জেগে ওঠে তখনই বোধহয় এই রকম গভীর দার্শনিক ভাবের গীতি-কবিতার মাহাত্ম্য প্রতিভাত হয়ে ওঠে উন্মুক্ত হৃদ-গগনে।
এই গানের অন্তরাতে লেখা সেই বিখ্যাত বাণী -
হে পূর্ণ তব চরণের কাছে
যহা কিছু সবই আছে আছে আছে -
নাই নাই ভয়, সে শুধু আমার


কোন্ জীবন দেবতার উদ্দেশ্যে এই সমর্পণ ! সেটা উপলব্ধিতে আনা বোধহয় বেশ শক্ত এবং সাধনা সাপেক্ষে ব্যাপার । রবীন্দ্রনাথ মহৎ এবং কঠোর জীবন সাধনায় যে জীবন দেবতার অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজে সম্ভব নয়।
কিন্তু আমাদের জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তিনিই আমাদের জীবন দেবতা । আবার তিনিই আমাদের পরম বন্ধু, প্রিয় কাছের মানুষ এবং একান্ত আপন জন । তাই নিবিষ্ট চিত্তে তাকে স্মরণ মনন করলেই পেয়ে যাব সবকিছু।
 তিনি পরম নিষ্ঠা এবং কঠোর সাধনায় নিজেকে পরিপূর্ণ মানুষ এবং শিল্পী সাধক ক'রে গ'ড়ে তুলতে পেরেছিলেন। তাই এই বিশেষ আধ্যাত্মিক গানের শেষে পরম ভরসা দিয়ে তিনি শোনালেন -
অন্তরগ্লানি সংসারভার
পলক ফেলিতে কোথা একাকার
জীবনের মাঝে স্বরূপ তোমার
রাখিবার যদি পাই।


এই গানকে নিজের ক'রে নিতে পারলে আর কিসের ভাবনা কার ! এই কবি ঠাকুরকে হৃদয়ে রেখে আমরা নির্ভয়ে গেয়ে উঠতে পারি -
হে পূর্ণ তব চরণের কাছে
যহা কিছু সবই আছে আছে আছে।
এইভাবে শুধু তার কবিতা গানকে নিষ্ঠা ভরে স্মরণ মনন করলেই আমরা অবলীলায় পৌঁছে যাব জীবনের কোনো না কোনো পরিপূর্ণতায়।