ছন্দ ও অন্ত্যমিল দুটি আলাদা জিনিস । অনেকেই মনে করেন অন্ত্যমিল হলো কবিতার ছন্দ । একদম ভুল ধারনা , যারা অন্ত্যমিল কে ছন্দ ভাবে তারা কবিতা সম্পর্কে কোন ধারনা রাখে না । নিচে অন্ত্যমিল ও ছন্দ নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ-


ছন্দঃ কাব্যের গতিসৌন্দর্য বিধায়ক একটি স্বতঃস্ফূর্ত নির্মাণকৌশল হলো ছন্দ। হাজার বছর ধরে বিচিত্র আবেগ, অনুভূতি ও বিষয়ভাবনা দ্বারা পরিপুষ্ট বাংলা কাব্যের গতিময় নান্দনিক সৌন্দর্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কবিরা বহুবিধ ছন্দের নির্মাণ ও বিকাশ সাধন করেছেন। হাজার বছর বয়সী বাংলা কাব্যে সময়ের ধারাবাহিকতায় নতুন নতুন ছন্দের উদ্ভব ঘটলেও এর প্রধান শাখা হচ্ছে তিনটি: মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত। হাজার বছর বয়সী বাংলা কাব্যে সময়ের ধারাবাহিকতায় নতুন নতুন ছন্দের উদ্ভব ঘটলেও এর প্রধান শাখা হচ্ছে তিনটি: মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত। বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ থেকে শুরু করে বিশ শতকের শেষপাদ পর্যন্ত রচিত বাংলা কাব্যের বিচিত্র ধারায় এ তিনটি ছন্দই অসংখ্য কবির দ্বারা চর্চিত ও পরিপুষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ধামালি, ভঙ্গপয়ার, ললিত, দিগক্ষরা, মহাপয়ার প্রভৃতি নামে যে ছন্দগুলি প্রচলিত, সেগুলি অনিয়মিত ও পারম্পর্যহীন। সেগুলি কবিবিশেষের সৃষ্টি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্রষ্টার ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এছাড়াও গন্দ ছন্দ ও সৃষ্টি হয়েছে এ ছন্দ স্বাধিন ।


অন্ত্যমিলঃ অন্ত্যমিলকে কবিতার ছন্দ হিসাবে ভেবে থাকেন, কবিতা সম্পর্কে অজ্ঞ লোকজন । অন্ত্যমিল হচ্ছে কবিতার অলঙ্কার , এটাকে সাহিত্যিক ভাষায় অন্ত্যানুপ্রাস বলা হয় । প্রাচীন অলঙ্কারশাস্ত্রে অন্ত্যানুপ্রসের অস্তিত্ব অস্বীকৃত । অন্ত্যমিল কবিতার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে , এবং ধ্বনি ঝংকার সৃষ্টি করে । মানুষ যেমন অলঙ্কার পড়ে কবিতাকেও তেমনি অলঙ্কার পড়াতে হয় । তেমনি কবিতার এক অলঙ্কার হলো অন্ত্যমিল বা অন্ত্যানুপ্রাস ।


দৃষ্টান্তঃ


আকাশে মুক্তির নোনা গন্ধ খুজে পাই ।
এই রুদ্ধ কারাগার হতে মুক্তি চাই ।


- সাগর মুহম্মদ ইউসুফ


ছন্দঃ চরণ দুটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত । যদি পর্ব বিন্যাস করি তাহলে , ( আকাশে মুক্তির নোনা / গন্ধ খুজে পাই )। প্রথমে পর্বে আছে ৮ মাত্রা পরের পর্বে আছে ৬ মাত্রা । যদি মাত্রা না বুঝেন বর্ণ গুনে দেখতে পারেন , যদিও বর্ণ মাত্রা এক না । তবে অনেক ক্ষেত্রে সহজ উপায় । একই ভাবে পরের লাইনে ( এই রুদ্ধ কারাগার / হতে মুক্তি চাই । ) ৮/৬ একটা চাল রয়েছে , সত্যেন্দ্রনাথ দত্তর উক্তিতে, “আট-ছয় আট-ছয়/পয়ারের ছাঁদ কয়”। তাহলে বোঝা গেল ছন্দ হলো পঙক্তি বা চরণের অভ্যন্তরে পর্বের শৃঙ্খলা ।


অন্তমিলঃ চরণ দুটির শেষে পাই ও চাই রয়েছে , লক্ষ করে দেখবেন শব্দদুটির শেষে ( ই ) রয়েছে । মূলত এটি হলো অন্তমিল বা অন্ত্যানুপ্রাস ।


তথ্যসূত্রঃ বাংলাপিডিয়া এবং অলঙ্কার অন্বেষা