দায়া নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আমি এক রক্তাক্ত ভারতবর্ষকে দেখেছিলাম
আড়াই লক্ষ মৃতদেহের মাঝে, যুদ্ধজয়ী একা সম্রাট অশোক
চিবুক বেয়ে ঝরে পড়ছে পরিতাপের অজস্র অশ্রুবিন্দু
আর দায়া নদীর রক্তে ভিজে উঠছে গোটা ভারতবর্ষের ইতিহাস
নিহত সৈনিক, নিহত পুরুষ... যুবক ও বৃদ্ধ
মৃত ধর্ষিতা নারী, মৃত শিশু যে জন্মেছিল কালই
কলিঙ্গে আজ হাহাকার করারও কেউ নেই কেউ নেই, যাকে করা যেত ক্রীতদাস
আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম,
" এত রক্ত কেন ?  হা ঈশ্বর !
ওদের ক্ষমা কোরো, ওদের ক্ষমা করে দিও ইতিহাস "
গভীর অন্ধকার ভারতবর্ষের বুক আলোকিত করে ভগবান বুদ্ধ আবির্ভূত হলেন
অশোক করজোড়ে বলতে লাগলেন,
" বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি
  ধম্মং শরণং গচ্ছামি ... "
ভারতবর্ষের ইতিহাস পুণরায় পবিত্র হতে লাগল ...


ইতিহাসের পাতা ধরে হাঁটতে হাঁটতে
শতদ্রু নদীর ধারে পৌঁছে, আমি এক অগ্নিগর্ভ ভারতবর্ষকে দেখেছিলাম
গৃহহারা ভয়ার্ত পিঁপড়ের মত, পিল পিল করে পালাতে চাইছে দেশের মানুষ !
পিছনে রক্তমাখা তরোয়াল হাতে
ধাবমান অসংখ্য কঠিন হিংস্র মুখ
পরস্পরকে অবলীলায় হত্যা করে চলেছে
মুসলিম, হিন্দু, শিখ এবং অন্যরা ...
সীমান্তমুখে ছুটন্ত স্কট লোকোমোটিভ ট্রেন
এখন লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃতদেহে ভরা
দরজা থেকে চুঁইয়ে পড়া রক্তে ভিজে উঠছে প্রিয় ভারতবর্ষের মাটি আর গাছের শেকড়
দাউ দাউ জ্বলছে তোমার বাড়ি ঘর
জ্বলে খাক্ হচ্ছে আমার বুকের ভেতর
দাউ দাউ জ্বলছে শত্রু জ্বলছে মিত্র
জ্বলছে স্বাধীন দেশ দু-টুকরো মানচিত্র
আমি আবার চিৎকার করে উঠতে চাইলাম,
হা ঈশ্বর ! এত রক্ত কেন ?
একজন আমার মুখে চাপা দিয়ে দিল
যারা ছিল শৈশবের কাকা দাদা বা ভাই
তাদেরই কেউ একজন ধাক্কা মেরে ফেলে দিল অন্ধকার কুঠুরিতে
বলতে চাইলাম, অন্ততঃ মেয়ের খেলার পুতুলটাকে বাঁচিয়ে রেখো ভাই !
ওরা আমার সারা শরীরময় অন্ততঃ আশি বার আঘাত করল
অনেক কষ্টে আমার রক্তমাখা ঠোঁট দুটো ঈষৎ নড়ল মাত্র
তখনই ওরা আমার বুকের মাংসপিণ্ড দু'খানি তুলে নিতে শুরু করল
মনে মনে হেসেছিলাম, জাতির উন্মত্ত অবস্থায় যা হয় !
ওদের, একজন কবিকে জীবিত রাখা উচিত ছিল, একজন ক্ষমাশীল মানুষকেও


ভারতবর্ষের ইতিহাসে, আমি সেদিন এক বিপরীত ভারতবর্ষকে দেখেছিলাম ...