ছন্দ নিয়ে আলোচনার অভাব নেই | এই বিষয়ে আমার সংযোজন করার মত কিছু নেই নতুন করে বা স্পষ্ট ভাবে বললে যোগ্যতা নেই | এই আলোচনা কেবল মাত্র নিজের জানা গুলিকে আর বহু দিন ধরে গড়ে ওঠা ধারণা গুলিকে একটু মিলিয়ে নেওয়া মাত্র |
এই বিশ্লেষণ কখনো কখনো হাস্যকর হতে পারে অজ্ঞানতার কারণে |


১) ছন্দ কি ?
=> ছন্দ সুরের প্রবাহ | যখন আমরা কিছু বলি , আমরা একটানা বলতে পারি না , আমাদের মাঝে মাঝে থেমে যেতে হয় | এই থামা মূলত দুটি কারণে ক) শ্বাসাঘাত বা দম নেওয়া, এবং খ) অর্থগত  | একটি উদাহরণ দেখা যাক :--
  "আজকাল কাজের খুব চাপ, নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় কোথায় "  
এখানে লক্ষ করলে দেখব কথা গুলি বলার সময় একটু জিরিয়ে নিতে হয়; দম নিতে হয়, সেটা কেমন ---- আজকাল/ কাজের খুব চাপ / নিজেকে নিয়ে ভাবার/ সময়  কোথায় |(পাঠক বিশেষে পাঠ ভিন্ন হলে শ্বাসাঘাতের স্থান ভিন্ন হতে পারে )
আবার অর্থ লক্ষ্য করলে এভাবে থামতে হয়  আজকাল/ কাজের খুব চাপ / নিজেকে নিয়ে ভাবার/ সময়  কোথায় | দেখা যাচ্ছে যে দুই ক্ষেত্রেই বিরতি একি স্থানে কিন্তু সব সময় এমন হয় না তার অনেক দৃষ্টান্ত মধুসূদনের লেখাতে পাওয়া যায় |
যাক সে বিষয় এখন কথা হলো এটাই কি ছন্দ ? প্রকৃত পক্ষে হ্যাঁ কিন্তু ব্যাকরনগত ভাবে না |  
আসলে  কোনো লেখা ছন্দ ছাড়া হাতে পারে না, আমাদের কথাতে একটা সুরের প্রবাহ বা রিদম থাকে , সেই প্রবাহ যখন একটা নির্দিষ্ট রূপে ওঠা নামা করবে তখন কেবল  তাকে ছন্দ বলব আমরা | মনে মনে যদি কল্পনা করেন কোনো একটা পুকুরে শান্ত জলে একটি পাথর ছুড়ে দিলে তাতে ঢেউ ওঠে , সেখানে প্রতিটি ঢেউ এর মাঝে একটি নির্দিষ্ট দুরত্ব থাকে , প্রতি বার একি ভাবে ওঠা নামা করে | ঠিক ঐ ভাবে যখন মুখের কথা গুলিও
প্রতি পংক্তিতে  বার বার একই জায়গায় একি ভাবে ওঠা নামা করবে তখন তাকে আমরা পদ্যের ছন্দ বলব | এর সঙ্গে অন্ত মিলের কোনো সম্পর্ক নেই |
তাহলে পাতি কথায় ছন্দ হলো সুরের প্রবাহ যা সুনির্দিষ্ট এবং সুপরিমিত একটি ঝোক তৈরী করে | এই ঝোক গুলি পরিমাপ করা হয় মাত্রা গণনার মাধ্যমে | মূলত তিন ভাবে মাত্রা গণনা করা হয়| (কলা বৃত্ত , অক্ষর বৃত্ত, দলবৃত্ত; এদের আরো বহু নাম ডাকা হয়)|  এই ঝোক গুলির আয়তনের উপর নির্ভর করে যে আমরা তাকে কোন ছন্দ বলব |
বাংলাতে প্রাচীন কাল থেকে ত্রিপদী পয়ারের রমরমা |


গদ্য ছন্দ :---- একটু আগে যে সুনির্দিষ্ট ও সুপরিমিত কথা গুলি বললাম সেগুলিকে বুড়ো  আঙ্গুল দেখিয়ে লেখার মধ্যে যদি সুপরিমিত সুরের আভাস তৈরী করা যায় , পর্বের সঙ্গে পর্বের দৈর্ঘ্য অসমান হলেও কানে শুনতে মধুর লাগে | তখন তাকে গদ্য ছন্দ বলতে পারি |
মনে হয় এই কারণে গদ্য ছন্দে লেখা কবিতা গদ্যের মত ঢালাও লিখলেও এর স্বাদ কমে না |


তাত্ক্ষণিক এর বেশি ক্ষমতা আমার নেই | মতামত দিয়ে আমার জানা কে ঋদ্ধ করবেন সকল সভ্যদের কাছে আমার এই আবেদন |


বি: দ্র: এই আলোচনা শুধু মাত্র একটি আলোচনা,, ছন্দ নিয়ে আমার জ্ঞান ভীষণ সীমিত।।।