অনেক দিন পর আপনি খেতে বসেছেন।
আনন্দের থেকেও বড়,
জীবন্ত অভিসার শরীরপাখনায়
মাতিয়ে দিচ্ছে ভেজা জীবন।
আপনাকে দেখে গণক আয়ু
থমকে দাঁড়িয়েছে
সেটা আপনি অনুধাবন করতে না পারলেও
আমার স্পন্দন আঙুল
নিশ্চয়ই আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে
প্রথম বউঠানের কথা।

কিছু তো বলতে পারেন,
এখানে তো আমি আপনি ছাড়া
কেউ নেই। রাণুর বাৎসল্যও নেই।
ও বুঝেছি, ওকাম্পো আমার থেকে অনেক বেশি
ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় আপনাকে মুগ্ধ...

মুগ্ধ সে যেই আপনাকে করুক
আমার রূপ যৌবনকে তাচ্ছিল্য
প্রকৃতির কোন লেখাতেই
আপনি করতে পারবেন না।

মন দিয়ে খেয়ে নিচ্ছেন
আমার কথা জবাব বা ভুলখন্ডন তো করছেন না।

এতক্ষণে রবীন্দ্রনাথ
চোখ তুলে তাকিয়েছে।
লাল আভা।
অনেকটা বিষাদ লেগে রয়েছে স্যুপে।

অদ্ভুত এক আঁধার ঠোঁটের হাসিতে।
নারীর আত্মদর্শনে বিশ্বাস না করে
কয়েকটি শরীর আদল নিয়ে
কেন বার বার আমরা বলি ওঁনাকে।
ভালোবাসার অমরত্ব তো অন্য কোথাও।
গান, লেখা, ভাষা, ইতিহাস, প্রতিবাদ
সর্বত্র বৃত্ত বাঙালিয়ানায়
খাদ্যরসিক রবীন্দ্রনাথে লুকিয়ে রয়েছে
আত্মনিবেদনের স্নিগ্ধ প্রেম।

পুজোর ফুল নয়
রবীন্দ্রনাথ একান্তে চায়
তার হাত কেউ স্পর্শ করুক।

আমি তো পাখি,
পালক স্পর্শ করলাম।
লাল চোখের দৃষ্টি
নরম হয়ে উঠল।
নতুন চারা কাব্য যেন জন্ম নিলো।

তাঁকিয়ে দেখলাম
রবীন্দ্রনাথ আজও অনেক কিছু বলতে চাইছেন,
আঁকতে চাইছেন।

বাইরে বৃষ্টি।
বৃষ্টি ভেজার সুযোগ আজকাল রবীন্দ্রনাথকে
কেউ দিতে চান না।

আমি দিলাম।
বললাম, রবীন্দ্রনাথ, আপনার দুঃখ কেউ বোঝেনি,
আপনাকে বিক্রি করে নিজ জীবন পরিপূর্ণ করছে
বাঙালিয়ানার দিব্যি দিয়ে,
একটু বৃষ্টি মাখুন চোখ ঠোঁটে।

অনেক অভিমান জড়িয়েছে।
কত কেচ্ছা আপনাকে ঘিরে,
কত কটু কথা।
নারী মানে ভোগ করা!
উপভোগ শুধু!
এই সামাজিক আত্মদর্শন আজ!
নারী তো আমাদের মা।
আমাদের আশ্রয়গাছ।
সৃষ্টির মূল।

রবীন্দ্রনাথ দাঁড়ান,
বৃষ্টি চিত্রে মিলিয়ে যাবেন না।

একবার দাঁড়ান,
আমি যে ভিজে যাচ্ছি,
উড়তে পারছি না,
আমার রূপ যৌবন
সিক্ত হয়ে উঠছে,
রবীন্দ্রনাথ দাঁড়াও,
আর আপনিতে আটকে থাকতে
একটু ইচ্ছা করছে না রবীন্দ্রনাথ,
অতো দ্রুত এগিয়ে যেও না,
আমি যে উড়তে পারছি না।

আমি যে রেস্তোরা নয়
প্রাগৈতিহাসিক ডাউনোসারের সামনে,
আমাকে রক্ষা করো,
রবীন্দ্রনাথ তুমি শুধু পুরুষ নয়
আমার আরাধ্য সঙ্গী।

একবার এসো, ফিরে এসো
রবীন্দ্রনাথ,
আমি যে আকাশ স্পর্শ করতে চাই না,
একবার তোমার স্পর্শ পেলে
সার্থক হবে আমার জন্ম,
আমার পালক অট্টালিকা।

জন্মবৃত্তান্তের নীড়,
ম্যাকাও ভবিষ্যতের চির নতুন
মনুষ্য জন্ম।