সব কবিতা ভালো লাগে না। স্বাভাবিক। এটাই মন। এখানেই লুকিয়ে রয়েছে আপেক্ষিকতা। দুষ্প্রাপ্য ভাবনার কাউকে নদীর সামনে নিয়ে যায়, কাউকে পুকুর আবার কাউকে সমুদ্র। সে বিশদ বিবরণে আমি যাব না। তবে এই কবিতাও যে নিজের কথা বলতে চায়। আর এখানেই সাহিত্যের কালজয়ী ভাবনার সার্থকতা। কবিতার ছন্দ রয়েছে, আবার উত্তর আধুনিকতায় বিমূর্ত গদ্য কবিতাও রয়েছে। মনস্তাত্বিক কবিতার প্রচলনও হয়েছে। তবে ছন্দ কবিতার মাত্রা, অক্ষর ব্যঞ্জনগুলো অনেকে নিয়ম মনে করে। রবি ঠাকুর নিজেও গদ্য কবিতাকে পদ্যের নির্দিষ্ট ছন্দ উপলব্ধি করেছিলেন। কিন্তু সব লেখা তো সবার নয়, সবাই পছন্দ করে না।
কবিতার এই ছন্দ ও গদ্যের ভাবনার ভিতর আবৃত্তি করার প্রবণতা ইউটিউবে যুগে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সব প্রধান মাথারা স্বীকার করেছেন। আর এই আবৃত্তির যন্ত্রাণুসঙ্গে অনেক সময়ই ছন্দ কবিতারা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তবে....তবে বাংলা পটভূমিতে ছন্দ কবিতা এখনও কয়েকশো বছর থাকবে। কারণ, রবি-নজরুল-সত্যেনের জয়গান বন্ধ হবে না। না হোক আধুনিক কবি...তাদের সৃজন স্বপ্ন বাঙালি হৃদয় ভুলছে না, ভুলবেও না। আসলে লেখার ছন্দ, গদ্য এসব মুখ্য নয়। আসল বিষয়টা হল লেখার ভাবনা। আর সেই ভাবনা, কবিতার দর্শন যদি ছন্দে বাঁধা থাকে, তাহলে চুড়ান্ত ঐতিহাসিক শিকড় তো গাঁথা থাকবেই। তাই তো ননসেন্স সুকুমার রায় আজও অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। এখনও তাই গোপালভাড়ের হাসি অনেকেই কার্টুনে আকারে আনছেন। হাসির সাথে কবিতার যোগ আছে। আপনার মনের মুক্তি কী শুধু কবিতাই দিতে পারে! কবিতা ছাড়াও হাসি দিতে পারে। এত বেশি একাকিত্বের যুগ, এত বেশি একা বড় হওয়ার ক্যারিয়ার যাত্রা যে সেখানে অসফলতার আগে সফলতা আসে না। তাই অসফল মন বেছে নেয় কবিতা। সাহিত্য, সৃজন। এই সৃজন থেকেই মুক্তো হয় নতুন চেতনা। সেই চেতনাই জন্ম দেয় কবিতার। কবিতার এই এতো সাইট, ফেবু প্রচার কী ভাল!
বিষয়টা ভালো মন্দ নয়। বিষয়টা নতুন করে চিনে নেওয়ার প্রচেষ্টা। নতুন করে ভাবতে শেখার উদ্যম। আর কে জানে এই সীমিত প্রয়াস থেকেই পরবর্তী যুগের শ্রেষ্ঠ কবি পাবে বাংলায় আবার নোবেল। সে সব কালের কথা। আমি ছন্দ-গদ্যে আসি। কবিতার নিয়ম মেনে লেখার যুগ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। হাংগেরি যুগ থেকে বলা যেতে পারে। তবে ছন্দশীল কাব্যময়তার লেখা সকলেই লেখে। কিন্তু যারা পুরস্কার পান তাদের ভাবনায় গদ্যরূপের অলংকার মাঝে মধ্যে পাল্টায়। কখনও কখনও নতুন শৈলীর চেষ্টা চলতে থাকে। আর আমিও এগিয়ে যেতে থাকি সেই পথ ধরেই কবিতার উপত্যকা। হোক না রাত, দিনের ক্ষুদ্র নতুন চন্দ্র থাকবেই আকাশে। নতুন একটি উপগ্রহ পৃথিবীর চারিদিকে প্রদক্ষিণ করছে। তাই নতুন দিনের নতুন ভাবনার কবিতাও যে কোটি কোটি নক্ষত্রের মতো জন্ম নেবে সেটাই স্বাভাবিক।
প্রকাশিত হবে সমস্ত ভালো প্রয়াস, আসলে ছন্দ-গদ্য নয়, ভালো ভাবনা, ভালো দর্শন তো বদলে দেবেই মানবতার পথকে। তা থাকুক আজ পতঞ্জলি। কাল তো এসব রাজনীতি থাকবে না। থাকব না আমরাও। থাকবে শ্রমজীবী মানুষ আর আমাদের সৃষ্টি কবিতার নবতম উপত্যকা।