আমি কবিতার ভাল লিখি না(আপেক্ষিক)। মানে আমার কবিতায় দুর্বোধ্যতা রয়েছে। অনেকেই বোঝে না। আবার বুঝতে চায় না। তারা সমাজের শিক্ষিত মাথা। তারা ছন্দ বোঝে। তারা ভাবনা বোঝে। একটু ইমোশনে কাতুকুতু। ব্যাস কেল্লা ফতে। তবু আমার কবিতারা কবিতা হয়ে ওঠে কিছু মানুষের কাছে। আমার লেখা চুরি হয়। চুরি হওয়াটা ভাল বলছি না, তবে আমার মতো ক্ষুদ্রজনের লেখা চুরি হয় দেখে ভালই লাগে। খ্যাত-বিখ্যাত না হতে পারি কু-খ্যাতরা চুরি তো করল। তার মানে আমার হিং টিং ঝটেরও দাম রয়েছে। এই কবিত্বের অনুরণন কোথাও তো আবেশিত হচ্ছে। কবিত্বের মায়ের আঁচল আমি আকাশের মতো ভালবেসেছি। ভালবেসেছি ভালবাসাকে। তুমি তা জানো। এই সামান্য দিনের লেখাদের কবিত্বের অলংকার দিয়ে মুক্তি লাভ করাটাই জীবন। যে ভাবেই জন্মাই মরার সময় কিংবদন্তি হয়েই মরতে চাই। তাই চুরি হোক। এসো আরও চুরি করো। আমার কবিতারা রক্ত বীজের মতো জন্ম নেবে কোটি কোটি। আমার ডিএনএ তো কবিতা নিয়ে জন্মায় নিই। তবে কবিতা পেয়েছে বাঙালি সূত্রে। আর সেই কবিতার উপত্যকায় আমি অপেক্ষা করছি কবিত্বহীন কবিত্বের জন্য। বিপরীত কথন নয়, না-কবিতারাও যে কবিতা, সেটা বুঝতে শিখছে টরেন্ট থেকে ডাউনলোড করা সমাজ। সকলেই বিনামূল্যে জিনিষ চায়। এখন আবার বিনা পয়সায় ভালবাসাও চায় কেউ কেউ। তবে ভালবাসা যদি ভালবাসা হয় তবে তাকে কবিতার মতো ভালবাসতে দোষ কোথায়?
এই যে কবিতার দুর্বোধ্যতা। এই চেতনা বড়ই প্রাচীন। যে সময় সৃষ্টি সৃজন হয় সে সময় কবিতার অর্থ গূঢ় থাকতেই পারে। যে সময় ভাবতে চাই, সে সময় তো সময়ের আগেও ভাবা হতে পারে। তবে হ্যাঁ, যদি গুণগত মান কবিতার ভালো হয়, তা কালোত্তীর্ণ হয়। রবীন্দ্রনাথের লেখা তা জীবিত কালে বহুল চর্চিত, বিতর্কিত। সে যে সময়ের আগে কথা বলত। আবার শেক্সপিয়ার, রবার্ট ফ্রস্ট, ওয়ার্ডওয়ার্থ প্রমুখ যাদের কবিগুরু অনুসরণ করতেন তাদের ইংল্যান্ডে তারাও চর্চিত ছিল। আধুনিক কবিতার শেষ কথা জীবনানন্দ দাস, তারপরেও আধুনিক কবিতা লেখা হয়েছে। আধুনিক বাংলা সিনেমার মূল কথা পথের পাঁচালী বলেছে তবু হীরক রাজার থেকে পেয়েছি আমরা, লিরিক্যাল ফিল্ম। কেউ কেউ বলেন বিতর্ক থাকলে তবেই নাকি বিখ্যাত হওয়া যায়। এই ভাবনার অনুরণন আবহমান কাল ধরে প্রাসঙ্গিক। আমি সে সব কথার ভিতর যেতে চাই না। আমি বলতে চাই দুর্বোধ্যতা কোনও সীমাবদ্ধতা নয়, দুর্বোধ্যতা প্রাসঙ্গিক। সমকালীন কবিতা দুর্বোধ্য হবেই। মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পাঠক করবেটা কী...তাদের ফিরতে হবে এই মননশীলতায়। ভাষাচর্চা পশ্চিমবঙ্গে কম। আর ভারতবর্ষের শিক্ষককূল মিড ডে মিল, স্বচ্ছ অভিযানে বেশি ব্যস্ত। রাজনীতির এটাও তো আমার কাছে দুর্বোধ্য। যে দেশ সত্তর শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী তাদের শিল্প উচাটন কেন...বুঝিনি। খাদ্যমূল্যই বা এত কেন...কবিতা তো এসবের উত্তর খোঁজে। বাংলাদেশের বাংলা ভাষায় কবিতার স্তর অনেক উচ্চমানের। সে যতই তারা সংখ্যালঘু বিদ্বেষী হোক না কেন। তাদের কবিতা দুর্বোধ্য হলেও বহুল বিক্রি হয়। ভাষা তো জল, পানি, ওয়াটার। ভাষা সৃজন এগিয়ে চলে। আর যে ব্যক্তি সে রকম লেখা পড়তে পছন্দ করেন, সে ব্যক্তি সেরকম লেখক, কবি খুঁজে নেবেন। দুর্বোধ্যতা কেবল অজুহাত। আর রইল পরে আমার লেখা, তা কেবল চোরেরা পড়ুক না। ভালই তো, আমার চক্ষুতে কেউ দেখতে তো শিখছে। আমার মতামত, দর্শন, কবিতার ভাবনা প্রচারিত তো হচ্ছে। আমি এভাবেই বৃহৎ আমিতে ঠিক পৌঁছে যাব। ঐ ভালবাসার শান্তিতে পৌঁছাতে চাওয়ার দুর্বোধ্যতা যেদিন তোমরা বুঝতে পারবে সেদিন আমার লেখা পড়বেই। সে মৃত্যুর আগে একবার হলেও পড়তে তোমাকে হবেই।
কঠিন কথা। বুঝতে অসুবিধা। তাই উদাহরণ হিসেবে দাম্পত্য চেতনার কথা বলি। আমাদের ঠাকুরদার সময় স্ত্রীরা বরকে আপনি বলতেন, আমাদের মা-বাবা তুমি, আর আমাদের যুগে তুই। আমাদের পরবর্তীতে হয়তো নামের আদ্যাক্ষর। এস এদিকে...এস রান্নাটা কেমন হয়েছে। তাহলে দাম্পত্য দুর্বোধ্য হচ্ছে। সেটাও তো যুগের নিয়ম। একাকিত্ব সন্দেহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যারা বলেন সম্পর্ক পাল্টে যাচ্ছে না তাদের বলি, পাল্টাচ্ছে। সন্দেহ এতটাই প্রবল যে হোয়াটঅ্যাপের লাস্ট সিন দেখছে স্বামী-স্ত্রী। এতটাই সম্পর্কের দৃঢ়তা কমেছে। বিশ্বাস নেই। ডিভোর্স বাড়ছে। সন্তান জন্ম দিতে প্ল্যাট করতে হচ্ছে। ভালবাসার আবার হিসেব হয়!! এখন দেখছি তাও হচ্ছে। তাই কবিতাও এভাবেই পরিবর্তিত দুর্বোধ্যতা নিয়ে এগিয়ে যাবে। আর ভাষাটা বাংলা, তাই বাংলায় আরও অনেক পলি জমা হবে মগজের। অনেক কিছু বাকি আছে এখনও। শুধু দেখতে থাকুন ছন্দ, গন্ধ, দুর্বোধ্য কবিতার উপত্যকা কিভাবে মীরাক্কেল ঘটিয়ে দিতে পারে এই সাম্রাজ্যবাদী মানবিকতাকে। এই কথার ভাবনারাই কবিতার উপত্যকা সৃষ্টি করবে না তো!
.
দুর্বোধ্য কবিতা
~~~~~~~
কবিতা থাকুক কবিতার মতো পাল্টে যাচ্ছ তুমিও
বুঝতে পারছে আমার ভালবাসা -- স্রোতস্বিনী নদীও
বুঝলে কী!
হাল ধরেছে হাল মালিক, চাল ধরেছে চালুক মন
আমার তোমার দেখা হবে, কবিতা পাবে প্রিয়জন
সন্দিহান কী!
শৈলী তো সৃষ্টি সুলভ, শৈলী মাত্রা যুগের খাত
কবিতা আসছে না বলে, পাঠক জাগছে প্রতিরাত
মন্দ কী!
.
তুমিও জানো, আমিও জানি ঐ চুমুটার জোড়া ঠোঁট
প্রিয় কবিতা বুঝতে গেলে মগজটা একটু ছোঁট...
(কবিতাটি ১১ লাইনের, এটা তো আমার নিজস্ব সৃষ্টি, দুর্বোধ্য আজ হলেও কাল যে অনুসরণ করবে না...তা কিন্তু হলফ করে কেউ বলতে পারবেন না। বিতর্ক চাই, ভাষার জন্য বিতর্ক শুনতে রাজি আছি।)