কবিতায় থাকাটা জরুরি। হিংসে, বিদ্বেষ নয় কবিতা তো শান্তি। সেখানে নখগুলো বড়ো বেমানান। অনেকেই কবিতার বিষয় না বুঝে তর্ক করেন। করুন কিন্তু একটু ভেবে নেবেন। কবিতা তো অন্য পথের কথা বলে। কবিতায় যা খুশি ইচ্ছে করে লিখি না। কবিতার প্রয়োজনে...লেখা হয়। কবিতায় সেই সময় সেই শব্দের ভীষণ ভাবে দরকার। শব্দ মানেই বাজে অর্থ বের করা অনুচিত। কবিতার এতে কোনও মঙ্গল হবে না। হতে পারে অনেকে কবিতাটাই বুঝলেন না, জিজ্ঞেস করুন তাতে তো কবিতা শিল্পের মঙ্গল। না বুঝে, সেটার অন্য মানে বের করলে গ্যালিলিও, সক্রেটিসের মতো মৃত্যু বরণ করতে হবে। তাতে সংস্কৃতি, সভ্যতা ও বাংলা ভাষার কোনও উপকার হবে না। কবিতার নিজস্ব পথ রয়েছে, সেই পথে আসুন, হাঁটুন।
না বুঝে আমরা কত কিছু করে ফেলি। আসলে জীবনের জীবন্ত কবিতায় এমনই হয়। অন্ধকার তো থাকে। তবে অভিজ্ঞতা ও সময় মানুষকে বুঝিয়ে দেবে চোখে জল আনার মতো লেখনি, কবিতা সকলের নেই। হয়তো আজ লিখলাম কবিতাটি। আজ থেকে অনেক বছর পর সেই কবিতাই আপনার জীবনে সত্যি হবে। অথবা অনেক বছর আগে এই কবিতাই আপনি প্রত্যক্ষ করেছেন।
এখন প্রশ্ন হল শব্দে জ্বালাময়ী কিছু শব্দ বা লেখা। প্রতিবাদ। বিষয়টা একদম ভিন্ন। কবিতা তার পরিবেশের প্রয়োজনে কিছু শব্দ নিয়ে আসে। কবি সেখানে অপারক। কবি তো মাধ্যম। কবিতা তো প্রাণদেবতা লিখিয়ে নেয়। এটা যেদিন সকল পাঠকবর্গ বুঝে যাবে সেদিন কবিতা শিল্প ও শিল্পী সঠিক মূল্যায়িত হবে। সব সময় কবিতার উল্টো মানে করা অনুচুতি। কারণ আজ যা ঘটছে তা ইতিহাসে আগেও ঘটেছে, আবার পরেও ঘটবে। উপনিষদ তো তাই বলছে। সুতরাং আমরা নতুন করে ঝগড়া করতে পারি কিন্তু কবিতার আধুনিকতায় তার উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। কবিতারা নিজস্ব পথ রয়েছে। কবিতার উপত্যকা রয়েছে। সে পথেই হেঁটে চলা। সে পথেই কথা বলা। সে পথেই ভাবতে শেখা।
প্রাণ শক্তির বড় প্রয়োজন। কবিতার প্রাণশক্তি সঠিক না হলে ভীষণ উৎপাত হয়। কবিতা তো অন্তর দিয়ে অনুভব করার। নিজের গায়ে মাখার নয়। এটা বুঝে গেলেই কবিতা তার নিজের পথ ধরে এগিয়ে চলবে। ভাবছেন জ্ঞান দিচ্ছি, মশাই কবি তো হতে পারলাম না, তাই ভাবুন না নিজেকেই বলছি। আত্মকথন। কবিতার আত্মকথন।
কবিতা নিয়ে বেঁচে আছি। আবার জন্মাবো কবিতায় থাকব। তাই কবিতা নিয়ে নিজেকে ঋদ্ধ করে যাব। ধরন আলাদা হতে পারে কবিতা তো কবিতাই। কবিতা তো আলাদা করে লেখা যায় না। কবিতা তৈরি হয়। ঐ যে অন্ধকারের আড়ালে দুর্গার জন্ম হচ্ছে। অ-কাল-বোধন হচ্ছে। সেই বোধিত আলোতে কবিতার প্রাণশক্তি মুক্তি পাবে।
মন-অহংকার-বুদ্ধি যেখানে শেষ হয়। আধ্যাত্মিকতা যেখানে শুরু হয় কুন্ডলি চেতনা থেকে। কবিতাও সেখান থেকেই জন্মায়। ওঁ শব্দটি উচ্চারণ করুন। দেখুন পৃথিবীর সমস্ত কবিতা সেখানে লুকিয়ে। কুন্ডলিতে সাতটি স্তর, প্রতি স্তরে দুটি করে রাশি। আমরা তার মধ্যে বারোটি গ্রহণ করেছি। এই কুন্ডলি শক্তি কাউকে মিত্র করে, কাউকে শত্রু। তবু প্রাণশক্তি তো থেকে যায়। সেই শক্তি আবার কবিতা লিখতে শেখায়। বিশ্বাস করুন বিদ্ধ করুন, যত বিদ্ধ করবেন ততটাই ঋদ্ধ হবো। প্রত্যহ। কারণ আমার পথটাই কবিতা। কবিতাতেই আছি।