সাজানো সেই ফুলদানিটায়; রোজ সন্ধ্যায়
ভরে রাখি কিছু সাদা কালো ফুল,
অথচ স্বপ্ন দেখিনি এর আগে কখনো, জানো?
তুমি বলেছিলে, স্বপ্নরা বেরঙিন।
তোমাকে আমার রঙিন স্বপ্নগুলোর কথা বলতেই
তোমার ভ্রুকুটিতে এত তাচ্ছিল্য দেখি!
বলতেই কেমন যেন বোকা বনে গেছি।


তোমার মুখে গল্প শুনতে শুনতে,
চাঁদ সূর্যের কথা ভাবতে ভাবতে
ঝুর ঝুর কত যে তারার ফুল এসে; দু'হাত ভরিয়ে যেত!
আমি সেগুলো ছুড়ে ফেলে দিতে দিতে বলতাম,
—‘ধ্যাত! একটুও সুন্দর না!’
অবাক প্রশ্নে তখন জিজ্ঞেস করতে,
—‘তারাদের এত অপছন্দ কেন?’
আমি বলতাম,
—‘ওরা খুব হিংসুটে আর অহংকারী।
   দেখছ না, চাঁদটা বিষণ্ন ভারী!
   ওরা ওকে একলা ফেলে রেখে; কেমন করে অমন
   ঝলমলিয়ে হাসে?’
অবাক তুমি তখন বলতে,
—‘ওহ...তাই তো?’


কথায় কথায় রঙিন কত সব স্বপ্ন দেখাতে থাকতে...
আর আমি বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে; তোমাকেই ভাবতাম রাজা।
একদিন, তোমার কপালে পরিয়ে দিতে চাইলাম চন্দনের তিলক।
কখন যে আনমনে ধুলো ছুঁয়ে, তোমার কপালে ছড়িয়ে থাকা
এক গাছা চুল সরিয়ে, কপালে তিলক এঁকে দিতে তর্জনী বাড়ালাম!
অমনি তেড়ে উঠলে ভীষণ বিরক্তিতে!
—‘আরে...আরে...করছ কি?’
হাতের চুড়ি খানিক শব্দ শেষে থেমে গেল,
—‘মানে?’
—‘ধুলো এঁকে ভালোবাসা হয় নাকি?
   এভাবে বুঝি শ্রদ্ধা দেখানো যায়?’
—‘যায় না?’
আমি তো একেবারেই বুঝতে পারছিলাম না!
ধুলো পায়ে মেখে হাঁটা যায়, ফুল ফোটান যায়, মরে গেলে মিশে যাওয়া যায়, আরও কত কী করা যায়!


ভাবতে ভাবতে পার করে দেয়া; সে অনেক...বছর!
আজও ভালোবাসা ধুলোতেই লুটোয়; মিছেমিছি ঠুলি মুছি খেলায়।
ধুলো দিয়ে ভাত রান্নার মতো খেলাচ্ছলে সে খেলে।
বাষ্পের সঙ্গে সে ভাত থেকে; দেশি চালের ঘ্রাণ ভেসে আসে না!
মুখে জোটে না; আদরের সঙ্গে তুলে দেয়া
                                    একটি ভাতের নলা।
শুধু চারপাশে; রঙিন স্বপ্ন দেখার মতো কিছু মিথ্যে।
কিছু রং চোখে ভাসে; অন্যের হাতে ফুল দেখে।
সোহাগে রঙিন হাসি; রঙিন বসন্তে কখনো হাসে না।


গত রাতে একটি চিরকুট পেলাম; ফুলদানিটির পাশে।
কে যে কখন রেখে গেছে তাতে লিখে!
অদৃশ্য এক মাঝি নাকি ডাকছে পরপারে।
পাড়ে বাঁধা আছে; বৈঠাবিহীন এক তরী,
বাসর সাজানো; রঙিন ফুলের বাহারে।
শর্ত একটাই!
সাজতে হবে বধূ সাজে তাকে, তা-ও আবার
একেবারে লাল জরি জামদানি শাড়িতে আর
কপালে ধুলোর টিপ পরে।