যন্ত্রনা:


আঁকশিতে বিঁধলো রাত
এ আমার অনেক দিনের ভয়
একটু যদি চতুর হতে
যুদ্ধে তবে তোমারই হতো জয়
যথারীতি বাড়লো বেলা
প্রচুর জমল মেঘের পিঠে মেঘ
দিনমজুরি সইয়ে নিলেও
তোমায় ঘিরে কমছে না উদ্বেগ
জীবন যাপন যখন যেমন
তবুও আমি পোলের উপর কাক
ইচ্ছে মতো খুঁটছি খাচ্ছি
দৃষ্টি কিন্তু তোমার ঘরেই তাক।


ট্রেনযাত্রা:


ঈশ্বর বসে ছিলেন ফার্স্ট বগিতে ।
আমি তখন কলেজপড়ুয়া ।
দুই একটি ট্রেন মিস করে
দাঁড়িয়ে ছিলাম ।
তখনই দেখলাম ।
তখন অন্তরঙ্গতার সময় ।
কিন্তু সেভাবে কিছু হয় নি।
কোথাও আটকে যাচ্ছিলাম ।
কারণ, ঈশ্বর বসে ছিলেন ফার্স্ট বগিতে ।


সেজেছো রাত্রি :


সেজেছো রাত্রি তুমি কামগন্ধহীন ।
নগরে কুয়াশা ওড়ে জীবন কঠিন।
চোখেতে ছুঁয়েছে নেশা দৃঢ় অবয়ব।
ঘুম ঘর খুলে গেলে নেচে ওঠে শব।
সেই সঙ্গে তুমি নাচো অদ্ভুত ভঙ্গীতে।
প্রেতেরা লুকিয়ে থাকে সাধন সঙ্গীতে।
তুমি শুধু মায়া ছিলে কায়াহীন ছায়া।
যা ছিলে তা থাকো তবে শুধু পাবে দয়া।


প্রাত্যহিক:


বেশ যত্ন করে আঁচড়ে
নিচ্ছো চুল।
তুমি কি রঙ করে আমার ভুলগুলোকে ঠিক করে দিতে পারবে ?
যৌথভাবে জীবনযাপন এখন খরার পরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, সবে ।
স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে পরিপূর্ণ সবুজের ,
শস্যের স্বপ্ন।
কিন্তু সেসব , কখনো কি সত্যি হয়! স্বপ্ন তো !
কথাগুলো তুমি কি আমাকে বলতে পারতে না ?
জন্মের বহুকাল আগে।


জীবনযাপন :


ভোর হয়েছে ।
তোমাকে জাগিয়ে রাখতে পারিনি।
অনন্ত রাত সুখেই কেটেছে মোটামুটি ।
এখন আলগা দরজা পেয়ে
সবটুকু ঘুম এসে বসেছে চোখে ।
বাগানে জঙ্গলে ছায়া হয়ে পড়ে থাকবো কেন।
কেন সুখের কংক্রিটে তোমাকে নিয়ে বাস করবো না আমি !
বলতে পারো?


ইচ্ছেরা :


চুল্লিতে ঢোকার অপেক্ষা শুধু।
সব কিছু নতুন ভাবে শুরু করতে হবে আবার ।
ঠিক ভালো করে গোছানো হলো না কিছুই।
দিন রাত , তুমি , বুকসেলফে বইয়ের মতো ।
বড়ো উড়ে বেড়াতে ইচ্ছে করে
গানের আড্ডায় হাততালি।
ইচ্ছে করে ।
জানি তোমারও ইচ্ছে করে অন্য কিছু ।
তুমিও বদলে গেলে। আমিও দূরে চলে গেলাম ।
তাও কথা হয় । নিঃশ্বাসের শব্দ পাই । আরো দূরে যেতে ইচ্ছে করে ।
এক নদী থেকে স্নান করে উঠে
তৃষ্ণা আরেকটি নদীর ।
রাতের নদীতে ভেসে ভেসে দূরের তারা দেখতে ইচ্ছে করে খুব ।
খুব ইচ্ছে করে আবার জন্মাতে।


কথোপকথন :


তুমি রাত জেগে এতো কথা বলে গেলে।
আমিও শুনলাম। কিন্তু , মনে পড়ে না।
শহরের রাস্তায় পথচলতি তোমাকে,
ঈশ্বর  চোখে চোখে রাখে সবসময়।
তবুও ,আমি সব কথা শুনি না তোমার।
কেনই বা শুনবো ? কথার কি দাম বলো।
রাস্তায় কথা কতো দামে বিক্রি হয় ?



স্তব্ধতার ওপারে :


স্তব্ধতার ওপারে তুমি।


কিভাবে অতি স্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে গিরিখাতে শুয়ে রয়েছো নিশ্চিন্তে।


তোমার স্বপ্নে কোনো ছবি আসছে না !


আসছে না ! অতীতের কোনো শীতল রাত !


তাপমাত্রা ঋণাত্বক হলে তুমি তুমি জেগে ওঠো এইভাবে!


এর পরে আর কিছু থাকতে পারে না ।


এর পরে আমাকে তোমায় বহন করে ফিরতে হবে সমুদ্রতীরে।


কাপ ডিশ স্নেহ মৃত্যু :


তোমার কাপ ডিশ থেকে চলকে পড়লো স্নেহ।


সত্যি, আমি এই বিকট দেহ নিয়ে
লজ্জায় নীল হয়ে যাই।


চাইনি কেউ দেখুক ঘনক, গোলক যা কিছু লুকিয়ে রাখা হৃদয়ে। চুলের উকুন গুলির মতো।


কিন্তু , তুমি দেখে নিলে ।
চিঠি পাঠালে , আমার মৃত্যু চাও।


তুমি চাও আমার মৃত্যু হোক।


কিন্তু , সে তো বহু দূর সমুদ্রে নিষিদ্ধ জলের ভীতরে এখন ভাসছে।


গন্তব্য :


তুমি সফর করেছো রাতে ।
হয়তো পথ এতটা দুর্গম ছিলো না।


কিন্তু, ভুলে যেও না ।
তুমি সফর করেছো রাতে ।


তখনো, পথের প্ৰতি স্নেহ ছিলো।
আবেগ গন্তব্যের প্রতি ।


কিছুই অস্বীকার করোনি।
মায়া ,প্রেম ।যখন যেভাবে এসেছে ।


কিন্তু , দুর্ভাগ্য তোমার পথিক।
তুমি যাত্রা করেছো অন্ধকারে
অবনত মস্তকে। রাতে ।


যে ভার বুকের ভিতরে:


যে ভার বুকের ভিতরে জমে । তাকে তুমি অতিক্রম করতে পারো না কিছুতেই ।
অথচ তোমার অস্পৃশ্য আত্মা সেটা মানতে চায় না ।
একের পর এক অতীত ,
একের পর এক কলরব, অতিক্রম করে আমাদের জীবন আজ কোথায় স্থির! হয়েছে ! কোন বিন্দুতে !
সেই বিন্দুগামী একাধিক সরলরেখার কোনটি তোমার জীবন ?
চিনিয়ে দেওয়ার হয়তো কেউ নেই ।
রাত , তুমি আড়ি পেতে বসে আছো জানি । জ্যোৎস্নায় মাস্তুলে ।
তবে আজ ভুক্তাবশিষ্ট কিছুই বাঁচেনি হাঁড়িতে।
তোমাকে দেওয়ার মতো।


টনি ও তার ড্রাম:


টনি, তুমি আর ড্রাম বাজিও না ।
সিম্বলের আওয়াজ বড়ই ঠিন ঠিনে।
আজকাল অসহ্য বোধ হয়।
টনি তুমি হৃদয়ে পুকুর পাড় নিয়ে
এতদিন চললে !
এখন তো ফ্ল্যাট হবে ।
তিন কামরা দুই কামরার সব ।
না হলে এতো মানুষ থাকবে কোথায় বলো ।
স্টিক গুলো তুলে রাখো যত্ন করে।
ওরা আজীবন দ্রিম দ্রিম ঠিন ঠন
কনসার্টের স্বপ্ন দেখবে।


ফোয়ারার স্বপ্ন:


ফোয়ারার স্বপ্ন ছিলো বিচ্ছুরিত আলো হৃদয়ে কিছুদিন বয়ে বেড়ানো। তারপর সেই ভার আস্তে আস্তে অসহ্য বোধ হলে হয়তো তার মৃত্যু ঘটতো।
কিন্তু নিয়তি !
জলস্রোত বন্ধ হলো একদিন। জীবন্ত তরুণ ফোয়ারা ফসিল হয়ে জেগে রইলো পাথরের খাঁজে।
এই ঘটনাটিকে কি সামাজিক ত্রুটি বলা যায় ?


প্রান্তরে আমি :


প্রান্তরে ঘুরে বেড়াই আমি দিকচিহ্নহীন ।
ছেঁড়া পাঁপড়ি যেমন নর্দমার জলে।
তুমি পা মেলে বসেছো সুখ
দোরগোড়ায়।
যেমন লাইনের মেয়েরা বসে লজ্জাহীনা।
তুমি মজা পাও জানি সুখ
ব্যস্ত ট্রাফিকে।
নাছোড়বান্দা আমায় রোজ পার হতে দেখে।
তুমি মজা পাও জানি।


ক্রীম বিস্কুট ও সন্ধ্যা:


ক্রীম মাখানো বিস্কুটে
সন্ধ্যা নেমে এলো।
আহা! কতো কতো দিন পর
তোমার সাথে চা খাবো।
টুকরো সংলাপ থাকবে আসরে।
তুমি হয়তো প্রথমে,
বলতে চাইবে না কিছুই।
যাক গে। ওসব পরে হবে।
এখন আমরা!
আর ক্রীম মাখানো বিস্কুটে,
সন্ধ্যে।


দুই একটি শব্দের পরে:


দুই একটি শব্দের পরে অনিবার্য যতি।


আমি নিজের ভীতরে আরো খুঁড়লাম মালমশলা যদি কিছু পাওয়া যায়।


তখনই ভোর হঠাৎ!
অথচ কতো ঘুরেছি দেশ বিদেশ।


এইটুকু আলোর জন্য!


নন্দন চত্বরে তুমি:


নন্দন চত্বরে তুমি আনমনা দাঁড়িয়ে রয়েছো।
আমি দেখছি, সিচুয়েশনটা মন্দ নয় মোটেই।
একটু বেকায়দায়..
ডান পায়ের চটির সোল খুলে গেছে।
এখানে দোকান নেই আমি বলেছিলাম।
তুমি আজও সেরকম দাঁড়িয়ে থাকলে।
আমি এই টাইম স্পেসের বাউন্ডারি টপকে ঠিক একটা মুচিকে দিয়ে সরিয়ে দিতাম তোমার জুতোটা।