হীরক রাজার দেশে ছায়াছবি দেখতে গিয়ে চমক পেলাম। সেই প্রথম। শুধু সভাকবি নয়, রাজা সপারিষদ বেশ ছন্দে ছন্দে কথা বলছেন। প্রতি কথায় ছড়িয়ে পড়ছে মুচমুচে কৌতুক। যদি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনেও এমনটি হত! সকালে বাজারে গেলেন। সব্জিওয়ালী ডেকে বলল- নাও গো সাধের লাও/ যত খুশি খাও/  
সুগার প্রেসার কোলেসটরল/ আর পাবে না ভাও।
উত্তরে আপনিঃ দামটি বড্ড বেশী / একটু কম কর না মাসী / নইলে লাউয়ের দামে নিয়ে যাবো আস্ত একটি খাসি ।
কিন্তু বাস্তবে এমন হয় নি আজ অবধি।


কয়েক যুগ আগে, লেখালেখির শুরুতে সাহিত্যিক শ্রী রমানাথ রায়, ঘোষণা করেছিলেন, আমরা যা লিখব তাই গল্প হবে।
তাঁর এলেম ছিল, তিনি তাঁর বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন নূতন ধারায় গল্প লিখে। কিন্তু সেই সময়ের সকলে তা পারেন নি।
এ পর্যন্ত পড়ে অনেকে ভাবছেন – এত ভুমিকা কিসের জন্য ?
সবিনয়ে জানাই ইদানীং কিছুকাল যাবত আমাদের প্রিয় কবিতার আসরের অবস্থা দেখে আমার মনে হচ্ছে- আমরা যেন সকলে কঠিন প্রতিজ্ঞা করেছি যে – যাহা লিখিব সবই কবিতা হবে, কবিতা ছাড়া অন্য কিছু হবেই না। এবং মন্তব্যের জটিল গণিতের ঠেলায় সেই প্রতিজ্ঞা আর ধারনায় থেমে থাকছে না। একেবারে লেখকদের মনে বদ্ধমুল হয়ে যাচ্ছে যে – যাহা লিখছি সবই দুর্দান্ত কবিতা......।
বাস্তবে এটা কোনদিনই সম্ভব নয়। প্রিন্ট মিডিয়াতে একজন কি একাধিক স্মপাদকের সেন্সার পাশ করে কবিতা প্রকাশিত হয়। তাতেও দেখা যায় কোন একটি পত্রিকায় যতগুলি কবিতা আছে তার কিছু অখাদ্য। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে নেট-মিডিয়ায় যেখানে দরজা একদম খোলা সেখানের অবস্থা কি হতে পারে সহজেই অনুমেয়।
তাহলে কি কবিতা লিখব না ?
এত বড় কথা বাঙালী কে বলার মত বুকের পাটা আমার নেই। আমার ঘাড়ে একটি মাত্র মাথা। (এই সন্দর্ভে কবি হাসান ইমতি মশায়ের উধাহরন দেওয়া যেতে পারে)। আমি শুধু বিনীত ভাবে এই আবেদন করতে পারি যেনারা লিখছনে লিখুন, মনের আনন্দে লিখুন। শুধু প্রকাশ করার আগে পাশাপাশি অন্য কাউকে পড়িয়ে জেনে নিন – পাতে দেওয়ার মত হয়েছে কিনা ? কেননা আমরা সকলেই নিজের নিজের কবিতা নিয়ে বড় বেশী সেনসিটিভ থাকি। নিজের কবিতা নিজে বিচার করার জন্য মানসিক দিক থেকে  যে ষ্টেটে  পৌঁছাতে হয়, সকলে সেই অবস্থায় যেতে হয়তো পারিনি। প্রসেসে আছি। একদিন ঠিক পারব। ততদিন না হয় নিরপেক্ষ কারো মত নিতে পারি। আপনি বলবেন কেন এই আসরে দিলেই তো সে মতামত জানা যাচ্ছে। মনে রাখবেন আমি কবিতা আসরে দেওয়ার আগের কথা বলছি। এই আসরে প্রকাশের আগের অবস্থায় তা একবার যাচাই হওয়া উচিত। আর আসরের মন্তব্যগুলির পুনঃপৌনিক ব্যাবহারের নিদর্শন বিচার করলে দেখবেন এখানে নিরপেক্ষতা কি অবস্থায় বিরাজ করতেছেন । তারউপর কবিতা না পড়ে / ক’লাইন পড়ে ফেসবুকে লাইক দেওয়ার মত প্রবণতা তো আছেই।


‘কবিতারচনা’ শেখা বা শেখানো যায় না। কিন্তু কবিতার বিচার শেখা যায়, চর্চা  করা যায়। কবিতা লিখতে গেলে বা পড়তে গেলে সেটা অবশ্যই জানতে হবে।
নেটের দুনিয়ার যেহেতু আমাকে আটকাবার কেউ নেই সে কারনে নিজেই নিজেকে আটকাতে হবে।  মনে যা আসে তাই বানিয়ে ফেলতে দোষ নেই কিন্তু অন্যের পাতে দেওয়ার সময় চেখে দিতে হবে।  
সর্বোপরি মনে রাখা উচিত – আমাদের সকলের লেখার স্ক্রিনে একটি ‘রিসাইকেল বিন’ আছে। সেটার প্রয়োজনীয়তা এবং মর্যাদা মানতে হবে।


সুযোগ হলে অন্য কোন সময় আর একটু বলার ইচ্ছা রইল। আসরের সকল কবিকে,  যারা এতক্ষণ আমার ‘বকওবাস’ পড়ার কষ্ট করলেন, তাঁদেরকে  আমার সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ জানাই।


---------- শ্রীতরুণ ( 29/5/2017)