একটি স্বপ্নের জন্ম ও মৃত্যু
*******************


তারপর,বোঝ্লেন দাদা,
সব্বাইকে শুনিয়ে জোরে জোরে জোরে
বলে দিল মুখের ওপর আমার,
আমায় নাকি সে ঘেন্না করে।


ধোর্ মশাই,
ছাড়ুন এসব
ফাল্তু মাল-এর কথা,
আরেক পাত্র মাল ঢালুন দেখি পেটে,
ম্যাজিকের মতো উবে যাবে,সব ব্যথা।


দিন্ তবে দাদা,আরেকটু খাই,
আহ,বাঁচালেন। দাদা।
কিইইই যে শান্তি।
শালা স্বার্থপর
কতো ভালোবাসি তোকে,
                      যদি একটুও তুই জান্ তি।


আহ্,এ তো আচ্ছা ফ্যাসাদ হলো !
বলি ও মশাই, বয়েস তো হলো অনেক,
নাকি এখনো পনেরো ষোলো' ?


না গো দাদা,এসব বয়সের কথা নয়।
আমার বয়েস থমকে আছে এখনো 'সেই সময়'।


আচ্ছা,সব খুলেই বলি তবে,
তখন আমার ষোলো-সতেরো,
ও'র, চোদ্দ পনেরো হবে।
নদীর দ্যাশ আমাদের দাদা,
পদ্মা,
ম্যাঘনা,
তারপর ধরুন গিয়া ভাগীরথি ।
বর্ষায় পাড় ভেঙে যেতো বোঝ্লেন,
দুকুল ছাপানো ,
পাগল পারা গতি।


রোদের দিনে,বাড়তো যখন বেলা
আমি আর সে ; হাত ধরাধরি-
                                 ছেলেমানুষি খেলা।


মালটানা নৌকা দ্যাখতাম ওইইই দূরে
ওর বোঝ্লেন ,আঁচল তখন হাওয়ায় যেতো উড়ে।


ডিঙি ছিলো একখান।
সেই ডিঙি নৌকা বেয়ে,
আমি আর সেই স্বপনের মতো মেয়ে,
য্যাতাম
অনেক দূরের দ্যাশ।
জল আর জল চাইরদিকে,
জলের নাই শ্যাষ।


পিঠের উপর বিনুনি জোড়া,খাটো করে ডুরে শাড়ী
কথায় কথায় গড়াতো দুপুর
এই ভাব, এইইই আড়ি।
ডিঙি ঘুরিয়ে ,
তার পর।
-----য্যাতাম চলে,মেঘনা নদীর চর।


সেইখানে একদিন


মাথার উপর চাঁদ উঠেছিল,নদীর জলে ছবি,
সাহস করে বলেছিলাম-
শুদ্দু আমার হবি?
চুল সরায়ে মুখ নামায়ে,দিব্যিকাটার সুরে
জবাব দিল কইন্যা আমার তিন সত্যি করে ।
সাক্ষী থাকো মেঘনা নদী, সাক্ষী থেকো চর
আইজ থেকে তোমার হলাম
জল্দি বেঁধো ঘর।


দিন পেরোলো,মাস পেরোলো,বছর খানিক শেষে,
রাজায় রাজায় লাগলো যুদ্ধ,ফাটল ধরলো দ্যাশে।
কোথায় গেলো কন্যা আমার, কোথায় গেলো ঘর
কোথায় গেলো ম্যাঘনা নদী,সাদা বালির চর।


মাকে নিলো শেয়াল-কুকুর,বোনকে নিয়া কোলে,
এলাম আপনাগোর দ্যাশে,বাপের ভিটে ফেলে।
মাঠের ধারে বস্তিবাড়ি, ভাতের থালে ফ্যান
তবুও দাদা বলতে পারেন,আশা ছাড়ি নাই ক্যান ?


আবার গেলাম ম্যাঘনার পাড়,কইন্যা ভুলিনি তরে।
দ্যাখলাম গিয়া কইন্যা আমার চলে গেছে শাদি করে।


ফিরে এলাম,জানেন দাদা?
মাথা গেল তারপর।
চৌপর দিন কানের ভিতর," জল্দি বেঁধো ঘর।"
এইখানেতেই শেষ হতো যদি,মানিয়ে নিতাম বেশ,
মাতাল ছাতাল জীবন আমার,প্রেমিকের অবশেষ।


কেন যে আবার দেখা হলো দাদা,বিকেল বেলায় আজ
বোধহয় কোনো বিয়াবাড়ি,রাজেন্দ্রাণীর সাজ।
আমার তখন ভূতের দশা,দাগ লাইগা জামায়,
সাহস করে,বলেই দিলাম,চিনতে পারোস্ আমায় ?


-শুভদা না? কি চেহারা করেছো। শরীর টরির ভালো?
ওইইটা আমার শ্বশুরবাড়ী ।কাল,ননদের বিয়ে ছিলো।


-ভালো আছি রে পাগলি মেয়ে,কিচ্ছু যাইনি ভুলে,
তোর সাথেই যে ঘর বেঁধেছি ম্যাঘনা নদীর কূলে।


-ছি: শুভদা কি বলছো, আমি যে, পরের ঘরের বউ,
অত্তোদিনের পুরানো কথা আঁকড়ে রাখে কেউ?


শুনে আমার,বোঝ্লেন দাদা,মাথাটাই গেল ঘুরে,
কোনোরকমে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসেছি আলতো করে;
কইন্যা আমায় বুঝিস না ভুল,চাই না কিছুই আমি,
থাক না তোর ঘর সংসার,থাক না তোর স্বামী।
একটা শুধু অনুমতি দে,এক্ষুনি যাবো চলে,
রোজ রাইতে ,স্বপ্নে যেন ,শুতে পাই তর কোলে।
ঘুম আসেনা কইন্যা আমার,কানের ভিতর স্বর,
চোপর দিন বলেই চলে," জল্দি বেঁধো ঘর"।


তখনই ঠিক ,শুনছেন দাদা, ম্যাঘনায় এলো বান,
এত্তোদিনের স্বপন আমার, মুহূর্তে খান্খান্।
ভাইসা গেলো সোহাগের ঘর,ডুইবা গেল তরী,
মুখের ওপর কইলো কন্যা, ,
ঘেন্না করি আমি তোমারে ।
                               শুধুই ঘেন্না করি।


কন্যা তর তো সবই আছে,শুধু স্বপনই ছিলো মোর,
স্বপন-খানও কাইড়া নিলি, এবার
                                                      ঘুমহীন রাতভোর।


ঢালেন দাদা ঢালেন।কি হইলো,বতোলও ফাঁকা নাকি?
দ্যাখলেন দাদা,শেষটা শালার বতোলও দিলো
ফাঁকি !