প্রতিটি সন্ধ্যায় ভীষণ ভয় হয় আমার
আসবে না তো ফিরে সেই গভীর রাত !
হৃদয়ে সঞ্চারিত হয় রক্তাক্ত শিহরণ
নিঃশ্বাসে বারুদের গন্ধ ভেসে বেড়ায় ।
এখনো বিছানায় মাঝরাতে আতঙ্কিত হই
দরজায় কীসের আওয়াজ ?
ওরা দাঁড়িয়ে নেই তো ওপাশে !
একদল রক্তপিপাসু পিশাচ ?
মা এসে বলে, ভয় পাস নে খোকা
ওরা আর আসবে না ফিরে ।
কিন্তু এই কালো রাত ?
তার বুকে যেন ভেসে বেড়ায় রক্তের স্রোত।
প্রতিদিন ঘর থেকে বের হলে
সেই রাস্তা, খেলার মাঠ, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা
শুনি বুটের ছুটে চলা সর্বনাশী ধুম ধুম শব্দ
অস্ত্রের ঝনঝন আওয়াজ, ট্রিগারে ঝুলে আছে নিষ্পাপ প্রাণ
শুনি তাদের মুখে মৃত্যুর জয়গান
আমার ভাইদের শেষ নিঃশ্বাস, বোনের নিঃসঙ্গ চিৎকার
শত মায়ের বুক ভরা আর্তনাদ,
আমি দেখি বিশৃঙ্খলায় পড়ে থাকা দেহগুলো, এখানে-সেখানে
কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে মৃত হৃদপিণ্ড পোকামাকড়ের দল
শুধু দেখি না আমি আমার অকুতোভয় বীরদের বীরত্ব
গুলি, গ্রেনেট হাতের সেই তীক্ষ্ণ চক্ষু ।
স্বপ্নমাখা বিজয়ে নিথর দেহের অম্লান হাসি !
আমি দেখি শুধু তাদের হিসেবহীন আত্মত্যাগ
আমি দেখি তাদের বুকে গেঁথে থাকা বুলেট
আমি দেখি পড়ে থাকা মা বোনদের নির্লজ্জ দেহ
আমি দেখি নিষ্পাপ শিশুর হাসিহীন নিথর মুখ
আমি দেখি সবুজের বুকে শুধু লাল পড়ে থাকতে, জমাট লাল।
প্রিয় ভূমি,
তুমি জানো ?
ঝরে পড়া রক্তকে আমি ভীষণ ভয় পাই
কারণ কী জানো ?
এই রক্তে বেঁচে থাকে হৃদয়
এই রক্তে বেঁচে থাকে নিরপরাধ স্বপ্ন
তাদের আমি ভাবতে পারি না এভাবে মরতে
অথচ ওই পিশাচগুলো, অবলীলায় ঝরিয়েছিলো সেই রক্ত !
আমার চক্ষু ঘৃণায় ক্ষত বিক্ষত হয়,
দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে নিভে থাকা সেই আগ্নেয়গিরি
তখন মন চায় বিজয়ের পদতলে তাদের আবারো পিষে দেই
আবারও তাদের প্রতিটি শিরায় বিজয়ের বিষ ঢুকিয়ে দেই।