পুরনো ঢাকার লক্ষ্মীবাজার,
নন্দলাল দত্ত লেনের ঠিক শেষ মাথার
দশ নম্বর বাড়ীটি কুসুমকলির দাদার;
দাদার নব্বই বছর জীবনে
প্রতিটি মুহূর্ত কাঁটিয়ে দিয়েছেন
দু'শত বছরের এই পুরনো বাড়ীতে।
দেয়ালের গায়ে শ্যাওলা জমে থাকা
বাড়ীর প্রতিটি ইটের কংক্রিটের সাথে দাদুর ছিলো
ভীষণ সখ্যতা ও ভালোবাসা!


কুসুমকলিরদের বাড়ীর ঠিক পিছনে
ইংরেজ পাদ্রীদের বাড়ী, গির্জা, হোস্টেল
এব্ং তার ভালোবাসার সেন্ট জেভিয়াস জেভিয়ার্স গার্লস হাই স্কুল।
ইংরেজী মাধ্যমের এই স্কুলেই কুসুমের হাতেখড়ি।


সেবারের দেশে খুব আকাল পড়েছিল
পেটের তাগিদে  বাবা বিনয় সামন্ত চলে গেছেন কলকাতা
কুসুমকলিরা সবাই এই পুরনো বাড়ীতে;
তাদের ছিল ছোটখাট ছাপা খানার ব্যবসা
এখানে নাকিবড় বড় কবি-সাহিত্যিকদের আসর বসতো প্রতিদিন,
তবে কারা আসতো জানা হয়নি তার,
ছাপা খানার সম্পত্তি বলতে পুরনো ধাচের ব্লক লেটারের ছাপা মেশিন,
প্রুফ দেখার জন্য একজন জায়গীর মাস্টার
সাথে কালিমাখা কিছু কাপড়।
এই মাস্টার মশাই তরুকে পড়াতেন।


সামনে কুসুমের ফাইনাল পরীক্ষা,
তৃতীয় শ্রেণীর কি-বা এতো পড়া?
একদিন কুসুম লক্ষ্য করল;
সবার মুখ কেমন যেন ফ্যাকাশে!
তার দাদু নারায়ণ রায়ের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ,
মা, বাবার সাথে ফিস ফিস করে কথা বলছে,
বাড়ীর গেটের বাইরে অচেনা লোকের আনাগোনা!
তখন ভয় কি  সে বুঝতো না,
তবে বুঝতে বাকী রইলো না
কিছু একটা হতে চলেছে;
এভাবে রাতে ঘুমিয়ে পড়ল।


সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখে
কুসুমকলি কলকাতা মাসির বাড়ী!


কুসুমের আর দেখা হয়নি,
নন্দলাল দত্ত লেনের দশ নম্বর বাড়ীটি!


সিলভার স্প্রিং, ম্যারিল্যান্ড
০৬/১৭/২০১৩