(প্রিয় কবি সাইদুর রহমান'কে ভালোবেসে)


ছোট্ট একটি টেবিল,
এক পাশে রাখাকয়েকটি ফাইল,
ফাইলের ভীতরে চাপা পড়ে আছে
জমে থেকে গল্প, কবিতা আর নানান
শিরোনামের কিছু প্রবন্ধ;
এই আমার  যুব-দৃষ্টির ছোট অফিস।
টেবিলের এক কোনায় একটি চায়ের কাপ
হাতল ভাংগা, একটি মাছি মরে শুকিয়ে গেছে।
কত দিন হবে কে জানে?
বরিশালের পল প্রায়ই চা দিয়ে যেত
কখনো চিনি ছাড়া, কখনো ঠান্ডা, কখনো টলটলে পানি।
তার পর অমৃত ভেবে পান করতে হতো।


উসকু-খুসকু চুলের ডেরিক
প্রায়ই আসতো, বসে থাকত দীর্ঘক্ষণ
পত্রিকার প্রুফ দেখে, অতঃপর এক কাপ ঠান্ডা চায়ের
বিনিময়ে রেল কলোনির বাসায় ফিরতো।


বেঞ্জামিন দা, এসেই তার লেখক হওয়ার কাহিনী শোনাতেন
তারপর একঘন্টা ঝিম মেরে বসে থেকে
হাটুতে ঝিম লেগেছে বলে
পা খোড়াতে খোড়াতে চলে যেতেন।


ভুরিওয়ালা আঁতেল জনি আসতো
একা বা কোন সঙ্গীনি নিয়ে।
বেশ রসিক, প্রায়ই ছন্দের তালে তালে কথা হতো
তার পর এক কাপ ঠান্ডা চা!


নারিন্দার মনির হোসেন লেন থেকে
বিপুল এলিট পায়ে হেটে
আসতে গিয়ে,প্রায়ই ছেঁড়া স্যান্ডেল
হাতে নিয়ে হাজিরা দিত;
পরবর্তী সম্পাদক হওয়ার আদম্য ইচ্ছা
তার ভীতরে ছিল,
পাকা হাত ছিল, লিখেও ভাল।
তার সাথে মাঝে মাঝে আসত
বিপুল দাস, মিল্টন হাল্দার, লিন্টু হালদার
সাহা জনি, ভিক্টর কে, দীপক পিয়াস
আশা দি ও রুবি দি।
দীপক দা, প্রায়ই গানের সাথে মন্দিরা না বাজিয়ে
ঘন্টা বাজাতেন! কেন? তা আজও জানা হলো না!


ভাদুনের আগুছালো ছেলে ফেরু
ভীষণ ছটফটে ভাব নিয়ে
গেটের সামনে অপেক্ষা করত দীর্ঘক্ষণ।
কবিতা লেখায় তেমন হাত না থাকলেও
টুকটাক লেখার আপ্রাণ ইচ্ছে তার মনি কোঠায়
বাসা বেঁধেছিল।
আজও তার কপালে একটি লেখা স্থান নিতে পারেনি।


তিন হালদার নামে পরিচিত
দীপক, মিল্টন ও লিন্টুকে পেয়েছি
সময়-অসময়ে।
মিল্টন অসাধারণ সনেট লেখায় পারদর্শী ছিল,
দীপক ছিল ছন্দের জাদুকর
আর লিন্টু বিরাট কবিতার জন্মদাতা।
আজও তারা আছে স্ব স্ব অবস্থানে।


চট্টগ্রামের লাভ লেইনের কবি সাইদুর রহমান
অসাধারণ কবিতার জালে সব সময় পাঠকদের
আকৃস্ট করে রাখতেন।
প্রতি মাসে একটি কবিতা না পেলে
মনে মনে বকতাম।
আবার পেতাম সময় মতনই।
ছাপা হতো প্রতি সংখ্যায়।
জানি না কবি সাইদুর রহমান এখন কোথায়,
কেমন আছে?


আজ কেউ কবি, কেউ গল্পকার
কেউবা কলাম লেখক-সম্পাদক;
নিজ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত, কাছে কিংবা দূরে!


আজও সেই টেবিলটা আছে
আছে নতুন চায়ের কাপ, ফাইল, লেখা।
নেই শুধু সেই মানুষগুলো,
নেই সেই পুরনো চায়ের কাপ, পল
আর হাসিভরা মুহূর্ত!
কবিতার আসর, আড্ডা, ভালোবাসা।