রাত্রি শেয প্রহর।
ভোরর ফিকে আকাশ এখন আলোর পথযাত্রী;
আনকোরা সূর্য্য নরম চোখ মেলে আলগোছে
আঙুল ছোঁয়াল অপেক্ষায় থাকা শিশিরের ফোটায়;
এইমাত্র ভোঁ বাজিয়ে স্টেশন ছেড়ে গেল প্রথম আপট্রেন-
চলে গেল কুয়াশার চাদর মোড়া ঘুমকাতর শহরটাকে ছেড়ে।


ট্রেনের আওয়াজে যাদের ঘুম ভাঙলো,
তাদের মধ্যে অনেকেই বিছানা ছাড়লেন দৈনন্দিন অভ্যাসে।
সকালের প্রথম আলো গায়ে মেখে হাটতে বেরোবেন কেউ,
বাজারের ব্যাগটা তিনি সংগে নিলেন;
ফেরার পথে বাজারটা সেরে নেওয়া যাবে।
কেউ প্রাতঃকৃত্য সেরে বসে গেলেন ধ্যানে,
কোলাহলমুক্ত শান্ত বাতাবরনে ঈশ্বরকে
প্রাণে প্রাণ অনুভব করতে চাইলেন।


কেউ কেউ লেগে গেলেন শরীরচর্চায়;
আবার এমনও কেউ আছেন, রুজি যার বিষম বালাই;
অনেক দূরের অফিসে হাজিরা দিতে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়া চাই।
আর যারা ছিঁড়ে যাওয়া ঘুমের
আমেজটাকে আরো কিছুক্ষণ বিলম্বিত করতে চাইলেন,
তারা ব্যস্ততার মুখের ওপর আলস্যের
পর্দা টেনে পাশ ফিরে শুলেন।
অল্পদিন আগে বিবাহিত কোনও যুবক, তার
নতুনগন্ধ বৌকে আঁকড়ে ঘুমচোখে দাম্পত্যের ওম পেতে চাইলো;


আর স্কুল কলেজের বড় পরীক্ষা যার দরজায় কড়া নাড়ছে,
সময়ের এই পালাবদল সে কিছুই টের পেল না;
সারারাত পড়ে অল্প সময় আগেই
সে আশ্রয় নিয়েছে ঘুমের কোলে।
সংবাদপত্র অফিসের সামনে এই মূহুর্তে প্রচন্ড ব্যস্ততা,
সকালের টাটকা খবর ভোর ভোর পৌঁছতে হবে পাঠকের হাতে।
গঙ্গার ঘাটে জবাকুসুম সূর্য্যকে স্বাগত
জানিয়ে দৈনিক পাপস্খালনের তাগিদে
পুন্যলোভাতুর কিছু মানুষের ভিড়।
কষাইখানায় অপ্রস্তুত  কোনও মোরগ হঠাৎ ডেকে উঠলো...


এইরকম এক ব্রাহ্ম মূহুর্তে
আমার বাবা আমাকে ছেড়ে কোথায় যে গেলেন!


-----------------------------------------
২৭ শে অগাস্ট ১৯৯৩, ভোর ৫ টার সময় আমার বাবা আমাকে ছেড়ে আলোর পথযাত্রী হন
আমার সেই পিতৃশোক আজ সাবালক হোল।।