প্রিয়  মেহেদী, তুমি আমায় লিখতে বলেছিলে,  
ধর্মীয় সহিংসতা নিয়ে লিখতে বলেছিলে।  
আমিও কথা দিয়েছিলাম লিখবো বলে,  
আজ লিখতে বসে থমকে গেছি বারবার,
কি লিখবো?
তুমি হয়তো বলবে, “মনের ভেতরে যে আকুলতা আছে তাই ঢেলে দাও অকপটে “!  
আমি বুকের ওপরে পাথর চেপে ধরে মৃদু হেসে বলবো,
“আজকাল যা মনে আসে  তাই কি লেখা যায়? যায় না।
কেউ হাত চেপে ধরে, কেউ মুখ চেপে ধরে,
কেউ গলা চেপে ধরে নয়তো গলা কেটেই ফেলে”!


লিখতে বসে থমকে গেছি বারবার
নৃশংসতার  ছবি দেখে, খবর শুনে  
শিউরে উঠতে ভুলে গেছি আজকাল।  
মিয়ানমারে টুকরো হয়ে পরে থাকা রক্তাক্ত শরীরের ভগ্নাংশ দেখলে টিভির চ্যানেল পাল্টে দেই
সিরিয়াতে এতিম বাচ্চাগুলোর নিস্পাপ অবয়ব আমার রাতের ঘুম কেড়ে নেয়।
নাসিরনগরে আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া প্রশ্ন বিদ্ধ মায়েদের মুখের দিকে তাকানো যায়না,
লজ্জায়, দুঃখে ফিরিয়ে নেই মুখ।
মানুষের ভেতরের মানুষগুলো হারিয়ে গেছে কোথাও, চারিদিকে শুধু অমানুষের চলাচল।    


এখনো কাঁদতে পারি বলে রক্ষা
গভীর রাতে লিখতে বসে চোখের কোল শুকিয়ে নেই নিভৃতে
দুদিন পরে হয়তো আমিও একা বাঁচতে শিখবো
শুধু নিজের স্বার্থ টা বুঝবো
নিজের মানুষটাকে ভালোবাসবো, অন্যকে নয়।
ভাই মেহেদী, আমি সেইদিনটা দেখতে চাইনা।
যতদিন অন্যের জন্যে কাঁদতে পারি ততদিনই বাঁচতে চাই।  
আমি তো সাম্যবাদে বিশ্বাস করেছি
সবাইকে ভালোবাসতে শিখেছি।  
সময়টা বড্ড খারাপ,
এই পৃথিবীতে, এই সময়টাতে বাঁচতে অনেক কষ্ট হচ্ছে, জানো?


আমি এই জাতি ধর্ম বর্ণ বৈষম্যের শেষ চাই,
এই নিষ্ঠুরতার অবসান চাই।    
এই ভেদাভেদকে ছাড়িয়ে আরও অনেক বড় মানুষ হতে চাই।
ভালোবাসা চাই, ভালোবাসতে চাই।
আমি এইসব অন্যায় অত্যাচারে অভ্যস্ত হয়ে যেতে চাইনা।  
এই পৃথিবীরই সন্তান আমি
সবাইকে নিয়ে আমার পরিবার
অন্য কোন পরিচয় নেই আমার।
সবাইকে নিয়েই হাসতে চাই  
বাঁচতে চাই
স্বপ্ন দেখি আমি !
তুমি দেখে নিও, একদিন আবার -
পৃথিবীটা সবার বাসযোগ্য হবে


সেদিন লিখবো  
কথা দিলাম।


~ মেহেদীকে লেখা চিঠি/ শিল্পী রহমান