চা টা দিয়ে গেছে বাবলুর মা
খেতে ইচ্ছে করছে না আমার
প্যাকেটের দুধ দিয়ে বানানো সস্তার চা
বাবলু আমার ছাত্র
বাবা মিলের শ্রমিক
কিন্তু ছেলেকে পড়ানোর উচ্চাশা আছে ভদ্রলোকের


আমার মন আজকে অন্য দিকে পড়ে আছে
বেকার নিস্তরঙ্গ জীবনে ঠিক সময়ে পৌঁছানোর তাড়া আছে


আমার আরো একটা টিউশন আছে আজকে
কামাই করলে চলবে না
আমার সংসারের অনেটাই নিভর করে
আমার এই ছেলে পড়ানোর টাকার উপর


বাবলুর মা খোঁজ নিচ্ছে ছেলের
ভালো লাগছে না আমার
মনের আজকে বাঁধন নেই একদম
আজকে যে চারটের মধ্যে
আমাকে পুরোনো চার্চ এর গেট এর সামনে পৌঁছতেই হবে


ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি এই সময়
ঠান্ডা আর তেমন না থাকলেও গরম পড়েনি তখনও
আমার গায়ের চাদরের ওপর রাখা
চকচকে কাগজে মোড়া একটা প্যাকেট


ঝড়ের মতো সাইকেল চালিয়ে
যখন পৌঁছলাম তুমি তখন
সেই সেদিনকার মতো হাত দিয়ে
চোখ টা রোদ্দুর আড়াল করে দাঁড়িয়ে


আমার বুক তখন স্টিম ইঞ্জিন
খানিক টা সাইকেল ছোটানোর জন্য
আর খানিক টা
তোমার সঙ্গে এই বিশেষ দিনে সাক্ষাত এর উত্তেজনায়


এক হাতে তোমার হাত ধরে বললাম
সরি দেরি হয়ে গেলো
অন্য হাতে সেই প্যাকেট টা
দিলাম তোমাকে ধরিয়ে


তোমার খুশির অবাক চোখের দিকে তাকিয়ে
বললাম দেখো তো


খরগোশ হাতে তুমি মোড়ক টা খুলে নিয়ে
বলে উঠলে
এ মা কি সুন্দর
আমি বললাম পরে দেখাও


আমার উপহার চোখে তুলে নিয়ে
আমার দিকে তাকিয়ে তুমি বললে কেমন দেখাচ্ছে
আমি তখন নিমেষ হারা
তুমি তাড়া দিয়ে বললে কৈ বললে না


আমি বললাম তোমার কেমন লাগছে
তুমি বললে এই আলোতেও চারদিক কেমন স্নিগ্ধ লাগছে
আমি বললাম তোমাকেও
স্নিগ্ধ লাগছে


জীবনের বেশ কিছু বসন্ত কাটিয়ে
এমনি এক দিনে রিক্সায় আমি
তাড়া লাগিয়েছি খুব
স্টেশন এ পৌঁছাতে হবে ঠিক সময়


হটাৎ চোখ আটকে গেলো
রাস্তার একপাশে দাঁড়ানো
বড়ো আর দামি একটা
বিদেশী গাড়ির ভেতরে সহযাত্রীর সিট এ তুমি


সেদিনএর মতোই একটা রোদচশমা চোখে
তবে মুখের হাসিটা আরো একটু চওড়া মনে হলো


আমি তাকিয়ে রইলাম
তুমি মনে হয় দেখতে পেলে না আমায়
নাকি চিনতে পারলেনা
নাকি চিনতে চাইলে না


আমার স্মৃতি মনে হয়
তোমার মনে
ওই রোদচশমার মতোই
ঘোলাটে হয়ে গেছে