********

কল্লোল যুগের পঞ্চপাণ্ডব কবিদের অন্যতম কবি বিষ্ণু দে । বাঙলা কবিতার আধুনিক ধারা সৃষ্টির অদম্য উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কবি বিষ্ণু দে কবিতার ভূমিতে বিপুল কাজ করেছেন। রবীন্দ্রবলয় থেকে আধুনিক কবিদের মুক্ত থাকার ব্যাপারে তিনিই প্রথম একেবারে খোলাখুলি কথা বলেছেন ।

তিনিই সরাসরি বলেছেন যে, রবীন্দ্র প্রভাব মুক্ত হতে না পারলে বাংলা কবিতার উত্তরণের কোন সম্ভাবনা নেই ।  কবি সুধীন্দ্রনাথের ‘পরিচয় পত্রিকার সাথে তিনি দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন, দুইজনের বন্ধুত্বও ছিল বেশ গাঢ় । পরে অবশ্য তিনি নিজ উদ্যোগে “ সাহিত্যপত্র’ নামে এক উন্নতমানের সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন ।

তিনি খুউব সমাজসচেতন একজন মানুষ ছিলেন এবং তাঁর এই সমাজ সচেতনতা তাঁর কবিতায়ও প্রভূত প্রভাব ফেলেছে । পরবর্ত্তীতে তিনি মার্কসবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন – ফলে তাঁকে অনেকে একপেশে মার্কসবাদী কবি হিসাবে চিহ্নিত করার প্রয়াসও পেয়েছেন । সমাজের প্রতি অঙ্গীকারের গভীর অনুভবের তাগিদেই কবি - লেখকদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘প্রগতি লেখক সংঘ’ ।

তাঁর লেখা আমার একটি প্রিয় কবিতা আসরের পাঠকদের জন্যে তুলে দিলামঃ

জল দাও
---------
কবি বিষ্ণু দে
----------
তোমার স্রোতের বুঝি শেষ নেই, জোয়ার ভাঁটায়
এ-দেশে ও-দেশে নিত্য ঊর্মিল কল্লোলে
পাড় গড়ে পাড় ভেঙে মিছিলে জাঠায়
মরিয়া বন্যায় যুদ্ধে কখনো-বা ফল্গু বা পল্বলে
কখনো নিভৃত মৌন বাগানের আত্মস্থ প্রসাদে
বিলাও বেগের আভা
আমি দূরে কখনো-বা কাছে পালে-পালে কখনো-বা হালে
তোমার স্রোতের সহযাত্রী চলি, ভোলো তুমি পাছে
তাই চলি সর্বদাই
যদি তুমি ম্লান অবসাদে
ক্লান্ত হও স্রোতস্বিনী অকর্মণ্য দূরের নির্ঝরে
জিয়াই তোমাকে পল্লবিত ছায়া বিছাই হৃদয়ে
তোমাতেই বাঁচি প্রিয়া
তোমারই ঘাটের কাছে
ফোটাই তোমারই ফুল ঘাটে-ঘাটে বাগানে-বাগানে।
জল দাও আমার শিকড়ে।।
                                    (চলবে)