***************

               কল্লোল যুগের পঞ্চপাণ্ডব কবিদের নিয়ে আলোচনার এই পর্যায়ে এই দলের সবচাইতে উজ্জ্বল তারকা কবি জীবনানন্দ দাশ এর সৃজন কর্ম নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছি । এই লেখায় নানাভাবে বারবার মুক্ত বিশ্বকোষ সহ অনলাইন ব্লগ ও বিশিষ্ট জীবনানন্দ গবেষকদের মতামতের দ্বারস্থ হয়েছি, মূলতঃ প্রবাসভূমিতে গবেষণামূলক রচনার জন্যে অপ্রতুল সুযোগের অভাবের কারণেই । কবি জীবনানন্দ দাশ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রগণ্য আধুনিক কবি। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন অধিকার করে আছেন।

            তিনি তাঁর জীবিতাবস্থায় অতি দারিদ্র্যতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়েছেন, পাননি যথাযোগ্য সম্মান, কতভাবে নানা সাহিত্য বিধায়কদের মুখাপেক্ষী হয়েছেন । তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধু কবি বুদ্ধদেব বসু তাঁকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন কোলকাতার সাহিত্যমণ্ডলে তাঁর পরিচিতির প্রসারের জন্যে ।

          মূলতঃ তাঁর মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে এসেই তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে সেই সময়ে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন, কিংবা বলা যায় এখনো জনপ্রিয় হয়েই চলেছেন।

         সাহিত্যের পটভূমিতে তাঁর প্রধানতম ভূমি কবিতা হলেও তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও গল্প- উপন্যাস রচনা করেছেন । অবশ্য তিনি ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে ১৪টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনার পাণ্ডুলিপি করে রেখেছিলেন একান্ত গোপনে যার একটিও তিনি তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশের সুযোগ পাননি বা তাঁর এইসব রচনাগুলো দিনের আলোও দেখেনি । তাঁর স্ত্রী হয়তো জানতেন ।
পরে জীবনানন্দ গবেষক কবি ভূমেন্দ্রনাথ গুহ তাঁর এইসকল রচনা উদ্ধার করে অনেক কায়ক্লেশে একে একে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন ।

        রবীন্দ্র পরবর্তীকালে এযাবৎ কালের সকল আধুনিক কবিদের মধ্যে একমাত্র তিনিই লাভ করেছেন  এক অখণ্ড জনপ্রিয়তা যা এখনো সমান ভাবে উত্তরোত্তর যেন বেড়েই চলেছে – এখনো তাঁর অপ্রকাশিত কবিতা বা রচনা পাওয়া যাচ্ছে – আর জীবনানন্দ পাগল পাঠকদের মধ্যে এক নবতর আগ্রহের সুনামী তুমুল প্রাবল্য সৃষ্টি করেই চলেছে ।

         এই আসরেও কবি জীবনানন্দ দাশ বিখ্যাত কবিদের আসরে আপন জায়গাটি সম্মানজনক অবস্থানে পেয়েছেন । এইজন্যে আসরের সকল সদস্যদের পক্ষ হতে এই লেখার সুবাধে এই আসরের কর্তা-কত্রীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানানো অবশ্য কর্তব্য বলেই মনে করছি ।  এ আসরে কবি জীবনানন্দ দাশের সুবিখ্যাত ১৮টি কবিতা সংযোজিত করা হয়েছে । চেষ্টা থাকবে, এই সংযোজিত কবিতাগুলোর বাইরে কবির বিভিন্ন স্বাদের কবিতা এই লেখার মাধ্যমে আসরে উপস্থাপন করার ।  তাঁর হাজারো অসাধারণ কবিতার একটি ‘ঘাস’ । তুলে দিলাম যারা আগে পড়ার সুযোগ পাননি তাঁদের জন্যে;


কবি জীবনানন্দ দাশ’ এর কবিতা
ঘাস

কচি লেবুপাতার মতো নরম সবুজ আলোয়


             পৃথিবী ভরে গিয়েছে এই ভোরের বেলা;


কাঁচা বাতাবীর মতো সবুজ ঘাস—তেমনি সুঘ্রাণ—


                 হরিণেরা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে!


আমারো ইচ্ছে করে এই ঘাসের এই ঘ্রাণ হরিৎ মদের মতো


                 গেলাসে-গেলাসে পান করি,


এই ঘাসের শরীর ছানি—চোখে ঘষি,


                 ঘাসের পাখনায় আমার পালক,


ঘাসের ভিতর ঘাস হ’য়ে জন্মাই কোনো এক নিবিড় ঘাস-মাতার


               শরীরের সুস্বাদ অন্ধকার থেকে নেমে।



            কী অসাধারণ কাব্যিকতা অতিসামান্য ঘাস’কে নিয়ে এবং ঠিক কোন মাত্রায় যে পৌঁছে দেয়া যায় মাত্র কয়েকটি শব্দে কবিতাকে – তা’ নবীন কবিদের জন্যে এক বিশেষ শেখার মতই আবশ্যিক পাঠ বৈকি ।
            
                                                   (চলবে)