বাংলা সাহিত্যের বিংশ শতাব্দীর ষাট দশকের অন্যতম প্রধান কবি; কবি আফজাল চৌধুরীর (আফম আফজালুর রহমান চৌধুরী) জন্ম ১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার খাগাউড়া গ্রামে। কবি আফজাল চৌধুরীর পিতা মাওলানা আব্দুল বসির চৌধুরী ও মাতা সৈয়দা ফয়জুন্নেসা খাতুন। তিন ভাইয়ের মধ্যে আফজাল চৌধুরী ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তাঁর বড় ভাই কমাণ্ড্যাণ্ট মানিক চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন ও অসাধারণ গুণাবলীর একজন প্রকৃত নেতা। অপর ভাই ইয়াকুত চৌধুরীও ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অমায়িক ব্যক্তি।


শিক্ষাজীবনঃ আফজাল চৌধুরী হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরবর্তীতে হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারী কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে তিনি ইণ্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ অনার্স ও ১৯৬৪ সালে এম এ সম্পন্ন করেন।


তাঁর লেখায় সত্তা-চিন্তা ছিল প্রখর। তিনি স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে এক ও অভিন্ন সম্পর্ক তৈরির প্রয়াস চালিয়েছিলেন। তিনি নিজের মধ্যেই স্রষ্টাকে উপলব্ধি করেন। তিনি আপনাকে একত্ববাদে আত্মসমর্পণ করেন। সেদিক দিয়ে তিনি আল্লামা ইকবালের চেতনার অনুসারী বলা চলে। আবার তাঁর লেখায় যখন মুসলিম পুনর্জাগরণের সুর ভেসে আসে তখন তাঁর মাঝে আমি ফররুখ আহমদকে দেখি। আবার বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে যখন তাঁর কলম সোচ্চার এবং তাঁদের বিজয় ছিনিয়ে আনতে তিনি উজ্জীবিত করেন আপনাকে ও গোটা মানবজাতিকে তখন তিনি কাজী নজরুলেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন বলে মনে হয়।


তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ কল্যাণব্রত ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁকে ‘কল্যাণব্রতের কবি’ বলেই অনেকে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু তিনি মূলতঃ বাংলা সাহিত্যের এক ধ্যানী কবি। তাঁর কবিতা পড়লেই মনে হবে তিনি ধ্যানমগ্ন অথবা তাঁর কবিতা হৃদয়ঙ্গম করতে হলে পাঠককেও ধ্যানমগ্ন হতে হবে। সর্বোপরি, তাঁর কবিতা বুঝতে পাঠকের মাঝেও দার্শনিক বোধ কাজ করতে হবে।


কল্যাণব্রতঃ ‘বলিও আমার প্রেম ঈশ্বরের ভষ্ম নয় ভূমা/ আলোকিত কোলাহলে সমতল আত্মার সঙ্গীত/ রাশি রাশি পুলকের বিন্দু বিন্দু বোধের অতীত/ অন্য এক বোধ আর স্পন্দমান আলোর উপমা/ আলোক সে নির্ভুলের আন্তরিক বলীয়ান ক্ষমা/ বলিও আমার প্রেম ঈশ্বরের ভষ্ম নয় - ভূমা।’ তাঁর ঈশ্বরপ্রেমের ব্যাপ্তি বা পরিসীমা নির্ণয়ে 'ভূমা'র সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন নয় কি?


তাঁর কবিতায় আবেগ-অনুভূতি সহজ কথা ও ছন্দে পরিস্ফুটিত। এর উচ্চারণ বলিষ্ঠ এবং প্রত্যয়ী। জীবন-বিশ্বাসের গভীর থেকে উত্থিত। কেননা, তিনি যে এভাবে লিখেনঃ
মৃত্যুর মোহন নৃত্য বার বার চোখ বুঁজে দেখি,/ পরলোকে ছায়া ফেলে এই কুঞ্জে দাঁড়াই যখনি/ খুলে দাও দাও খুলে রহস্যের নিখিল দরোজা,/ তোমার গৃহস্থ যারা তাদের স্বচ্ছন্দ বিচরণে/ নিভৃত এ কুঞ্জ হোক ওপারের বিমূর্ত আঙিনা/ শিরা উপশিরাগামী রক্তস্রোত নাশ করে স্নায়ু/ এবং গোগ্রাসে গিলে শতাব্দীর মস্ত অজগর’।


তাঁর একটি কবিতার নাম 'বিরুদ্ধ স্বর'। এটি আমি ১৯৮৯ সালে স্যারের কাছ থেকে সংগ্রহ করে একটি সাময়িকীতে প্রকাশ করেছিলাম। এখানে কবি বলেনঃ
গুণ বা নির্গুণ এই বিতর্কের নিরসক হয়ে/ তোমার আমার মাঝে মতভেদ দূর করে দেবো/ সৃষ্টিকে স্রষ্টার মাঝে বিলোপের জয়ে-পরাজয়ে/ ব্যক্তিকে বিশ্বের মাঝে ক্রমশই ব্যাপ্ত করে দেবো/ তোমার শক্তির কণা যখন অনুর প্রাণ হয়ে/ বস্তুকে জমাট করে আমি সে প্রক্রিয়া হয়ে যাবো/ নির্বাক প্রকৃতি পুঞ্জে ক্লোরোফিলে ধ্যানযোগী হয়ে/ হয়তো বীজের বুকে অঙ্কুরের ইচ্ছা হয়ে যাবো/ সমস্ত জগৎ প্রায় চেয়ে রইবে ভয়ে ও বিস্ময়ে/ সহসা বজ্রের ধ্বনি বুকে নিয়ে যখন দাঁড়াবো/ হয়তো বাতুল বলবে, তাই বলে সেই ভয়ে ভয়ে/ তোমার তৎসম থেকে দূরে রাখবো আমার তদ্ভব?
- একটু মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলেই বুঝা যাবে তাঁর এই বাৎচিত কার সঙ্গে, কী বিষয়ে হচ্ছে, এই তত্সম আর তদ্ভব এর সম্পর্ক কী।


তিনি তাঁর 'সসীম সংলাপ' নামের সনেটে তৌহিদ বা একত্ববাদের মন্ত্র উচ্চারণ করেন এভাবেঃ
..................... । অতঃপর বলে দিও প্রভু/ কোথায় অনলকুণ্ডে কীভাবে আমার মরদেহ/ ইব্রাহিম-রূপে ফের জলাঞ্জলি দিতে হবে, তবু/ কখনও একত্ববাদেকোনোরূপ মিথ্যা সন্দেহ/ জাগিয়ে করোনা এই অধমকে বুদ্ধিহীন গোবু।
- অসীম সত্তা আল্লাহ্‌র প্রতি সসীম সত্তা আফজালের বিশ্বাস কতটা দৃঢ় হলে এমনটা বলা সম্ভব তা আমরা ভেবে দেখেছি কী?


প্রসঙ্গত 'সহজিয়া' নামের তাঁর আরেকটি সনেট থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারি, যেখানে তিনি বলেনঃ
পুষ্পটি মোচন করো যদি পারো, চোখের সম্মুখে/ বৃন্তটি সহজ করো। শাখাটি দুলিয়ে দাও নিচে/ এই বৃক্ষফলটি পুঁতে দাও এ বান্দার বুকে/ জ্ঞান-ফল তুলে দাও ওষ্ঠের সোনালী পিরিচে/ ছায়াপথ হতে কায়াপথ অভিমুখে/ নেমে আসো, কেননা কর্তিত হচ্ছে ধাতব কিরীচে/ প্রতিদিন ........................
আমরা কী বুঝতে সক্ষম হচ্ছি কীসের বীজফল তিনি বান্দার বুকে পুঁতে দিতে চাচ্ছেন? এ নিশ্চয় গায়রুল্লাহর বীজফল নয়! স্রষ্টা ও সৃষ্টি প্রেমের বীজ কোথায় কীভাবে পুঁতলে একদিন তা মহীরুহ হয়ে ফলবতী হবে তাঁর নিশ্চয়ই ইঙ্গিত রয়েছে এখানে।  
(উপর্যুক্ত লেখা দুটি তিনি বৃন্দাবন সরকারী কলেজে অধ্যক্ষ থাকাকালীন কলেজ সাময়িকীতে প্রকাশ করি)।


বাংলা ভাষার অধ্যাপক হলেও অনেকেই ভাষার সাবলীল রূপটা আপনার মধ্যে বিকশিত করতে পারেন না, যা আফজাল চৌধুরী পেরেছিলেন। তাঁর দরাজ কণ্ঠে কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার আবৃত্তি আর ভরাট কণ্ঠের বক্তৃতা যে কাউকেই মুগ্ধ করতে সক্ষম। আমাদের প্রফেসর্স ক্লাবের অনুষ্ঠানে তিনি (সভাপতি ও অধ্যক্ষ, প্রফেসর্স ক্লাব, সরকারী বৃন্দাবন কলেজ, হবিগঞ্জ) আবৃত্তির মাধ্যমে আমাদের করতেন প্রাণিত। (উল্লেখ্য, আমি ছিলাম প্রফেসর্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক)।


স্মৃতিচারণঃ বৃন্দাবনে যোগ দেওয়ার পর সহকর্মীদের সঙ্গে অমায়িক আচরণ, ৬টি বিষয়ে অনার্স চালু, কলেজ মসজিদের উন্নয়ন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন ইত্যাদি কাজ তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে নিশ্চিত। আমি একজন সহকর্মী হলেও ছিলাম ছাত্রতুল্য কিন্তু তিনি তাঁর পেশাগত সম্বোধনটি কখনও পরিবর্তন করেন নি। আমার বিয়ের অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোঃ কায়সার সাহেব বলেছিলেন, ‘আফজাল দেখ আমি গত পরশু হবিগঞ্জ থেকে এসে গিয়েছি। আর কালকে তোমার ছাত্রের বিয়ের দাওয়াত পেয়ে আমাকে আজকে আবার ঢাকা থেকে আসতে হল। তিনি অমনি কায়সার সাহেবকে শুধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘না, না, ইকবাল সাহেব আমার ছাত্র নন; সহকর্মী’। দুঃখের বিষয় তাঁর ছাত্র হওয়ার মত সৌভাগ্য আমার হয় নি। একবার যখন এক অফিস আদেশে আমাকে কলেজ মসজিদের মোতাওয়াল্লী করে দিলেন তখন মৃদু আপত্তি জানিয়েছিলাম কিন্তু যখন তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা দেন, আমি তখন নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। এর কিছুদিন পর আবার আমাকে ‘বৃকসু’র ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক, সাহিত্য ও বিতর্ক বিভাগের দায়িত্ব দিলেন। তখন আমি প্রীত হলাম এবং বুঝতে পারলাম তিনি কোনো সিদ্ধান্ত না বুঝে নেন না। তাছাড়াও জেলা পর্যায়ে জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন সভায় তাঁর নির্দেশেই আমাকে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতে হয়েছে কিংবা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় আমাকেই প্রধান বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে।


জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তিনি ছিলেন অবহেলিত। এমনকি তিনি যখন বৃন্দাবন সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে হবিগঞ্জে অবস্থান করছিলেন তখনও তাঁকে কবি হিসেবে যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়নি। হবিগঞ্জের বিভিন্ন সাহিত্য সভায় দেশের খ্যাতনামা কবি, লেখক, দার্শনিক যারাই এসেছেন তাঁরাই জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আফজাল চৌঃ আসেন নি’? কেউ জবাব দিতে পারে নি। আমি তার সাহিত্য-ভক্ত ছিলাম বলে আমিও নানান কথা শুনেছি।  


কবি আল মাহমুদ ও আফজাল চৌঃ যেহেতু ইসলামিক ধ্যান-ধারণা সমৃদ্ধ ছিলেন, সেটি অনেকেরই পছন্দ হয় নি। তাঁর উপর একটি তকমা ছিল তিনি একজন রাজাকার। অথচ তিনি এ বিষয়ে প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং একজন সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন)'এ কোন দাগ ছিল না। আমার এক সহকর্মীকে আফজাল চৌঃ কবিসত্তা নিয়ে কথা বললে, সেও তা উড়িয়ে দেয় এই বলে যে, 'এগুলো কবিতা হলো কীকরে, এগুলো তো কতগুলো কঠিন শব্দ মাত্র'। আসলে তাঁর কবিতা বুঝার জন্য যে প্রজ্ঞা দরকার তা যাদের ছিল না, তাঁরাই তাঁকে মূল্যায়ন করতে পারেনি।


কর্মজীবনঃ  কবি আফজাল চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয় অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। তিনি প্রথমে দু বছর রাজশাহী ইণ্টারমিডিয়েট কলেজে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ইণ্টারমিডিয়েট কলেজ ও সিলেট সরকারী মহিলা কলেজেও দায়িত্ব পালন করেন। কবি আফজাল চৌধুরী সিলেট এম সি কলেজে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ খ্রিঃ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং এই পদে দায়িত্বরত অবস্থায় ১৯৯৯ সালের ৯ই মার্চ তিনি অবসরগ্রহণ করেন।


অধ্যাপনার পাশাপাশি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ ইং পর্যন্ত ইসলামিক ফাউণ্ডেশন, ঢাকা কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন কবি আফজাল চৌধুরী। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার 'ইন্সপেক্টর অব স্কুলস' ছিলেন তিনি।


ইসলামিক ফাউণ্ডেশন, ঢাকা কেন্দ্রের পরিচালক থাকাকালীন সাহিত্য পত্রিকা ‘ঐতিহ্য' প্রকাশ ও সম্পাদনা করে তিনি সবার প্রশংসা অর্জন করেন। ১৯৮৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত OIC’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন উপলক্ষে কবি আল মাহমুদ সহযোগে 'আফগানিস্তানঃ আমার ভালোবাসা' সংকলন প্রকাশ করে তাঁর অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দেন। কবি আফজাল চৌধুরী সিলেটের প্রাচীন সাহিত্য সংগঠন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ-এর সহ-সভাপতি ছিলেন।


বিদেশ-ভ্রমণঃ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ঢাকা কেন্দ্রের পরিচালক থাকাকালে ১৯৮৪ সালে আফজাল চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে ইণ্টারন্যাশনাল ভিজিটিং প্রোগ্রামের আওতায় মাসব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটটি অঙ্গরাজ্য সফর করেন। যাত্রাপথে ব্রিটেনে যাত্রাবিরতি এবং ফেরার পথে সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করেন। এ সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বেশকিছু কবিতা রচনা করেন যা তাঁর 'অন্য গোলার্ধে হৃদয়' এবং 'বিশ্বাসের দিওয়ান' শীর্ষক দুটি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেখানে 'মদীনাতুন্নবী' ও 'জাতিসংঘ ভবন'এর কাব্যিক বর্ণনা যে কোনো পাঠকহৃদয় ছুঁতে সক্ষম।


সাহিত্যকর্ম কাব্যগ্রন্থঃ
কল্যাণব্রত (১৯৬৯), হে পৃথিবী নিরাময় হও (১৯৭৯), শ্বেতপত্র (১৯৮৩), সামগীত দুঃসময়ের (১৯৯১), শবেমেহেরের ছুটি (২০০৫), নয়া পৃথিবীর জন্য (২০০৬), বিশ্বাসের দিওয়ান (২০০৭), এই ঢাকা এই জাহাঙ্গীরনগর (২০১১), বন্দী আরাকান ও অন্যান্য কবিতা (২০১৭, অন্য গোলার্ধে হৃদয় (অপ্রকাশিত) ইত্যাদি।


প্রবন্ধগ্রন্থঃ ঐতিহ্যচিন্তা ও রসুল প্রশস্তি (১৯৭৯), তাঁর কাব্যালোকে সৈয়দ আলী আহসান (২০১২), সিলেটে সুফি সাধনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১৩), মক্কার পথ: মোহাম্মদ আসাদের মহাজীবন (২০১৫), প্রতিশ্রুত কথকতা (অপ্রকাশিত), কবিতার সংসারে জটিলতা (অপ্রকাশিত), সমকালীন সাহিত্যের ধারা (অপ্রকাশিত), নান্দনিক ভুবন


অনুবাদঃ বার্নাবাসের বাইবেল (১৯৯৬), জালালুদ্দীন রুমির কবিতা (২০১৩), আলী শরীয়তির কবিতা ইত্যাদি।


নাটকঃ সিলেট বিজয় (২০০৫), বাঁশি
সম্পাদনাঃ আফগানিস্তানঃ আমার ভালোবাসা ( কবি আল মাহমুদ সহযোগে), ঐতিহ্য (ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা)।


আফজাল চৌধুরীর সর্বশেষ সুদীর্ঘ কবিতা ‘এই ঢাকা এই জাহাঙ্গীরনগর’এ ফুটে উঠেছে বাংলাদেশ ও এর অতীত ইতিহাসের এক সচিত্র রূপ। আফজাল চৌধুরী যে দেশ দেখতে চেয়েছিলেন এর নাম বাংলাদেশ নয়, তার নাম ‘বাংলাসাম’। তাঁর কবিতা ‘এই ঢাকা এই জাহাঙ্গীরনগর’ না পড়লে ধারণাটি কিছুতেই স্বচ্ছ হবে না।    


আফজাল চৌধুরীকে নিয়ে গবেষণাঃ
১. আফজাল চৌধুরীঃ কবি ও কবিতা — মুকুল চৌধুরী,
২. আফজাল চৌধুরীঃ জীবন ও সাহিত্য — নাসির হেলাল
৩. আফজাল চৌধুরীঃ ব্রতচারী ও বিশ্বকবি — আবদুল হাই জেহাদী ইত্যাদি।


তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে দেশের খ্যাতনামা কবি-লেখকগণ যেমনঃ আব্দুল মান্নান সৈয়দ, আল মাহমুদ, আল মুজাহিদী, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ আফজাল চৌধুরীর সাহিত্যকর্মের প্রশস্তি গেয়েছেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ ‘কল্যাণব্রত’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর ত্রৈমাসিক ‘কন্ঠস্বর’ (কবিতা সংখ্যা ১৯৭০)’এ লিখেছেন “আমাদের কাব্যক্ষেত্রে ষাটের অঙ্গন যেসব উদ্যোগী তরুণের আশান্বিত পদপাতে সরব হয়েছিল, আফজাল চৌধুরী তাদের অন্যতম।


পুরস্কার/সম্মাননাঃ মহাকবি সৈয়দ সুলতান সাহিত্য পুরস্কার, রাগীব রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার (২০০১), কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪), বিএনএসএ পুরস্কার ইত্যাদি।


নিজের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে তার প্রশ্ন, উপলব্ধি বা প্রত্যাশা ফুটে উঠে তাঁর কাব্যে এভাবেঃ
‘কি-রূপ নি:সঙ্গ আজ মনে হয় নিজেকে এ পার্থিব প্রবাসে/ চারপাশে এতো ভীড়, ক্রস্ত-চাপ, বিরতিবিহীন কর্মযোগে/ কোথায় আমার নিজ স্থায়ী কক্ষ, কোথায় সে অন্তিম শয়ান?/ কি আমার পরিণতি, বিজয়ী না শহীদের রক্তাপ্লুত লাশে/ যাত্রাশেষ? জানি না তা। বুঝি না এ ভঙ্গুর দেহটি চিররোগে/ ক্ষয়ে যাবে, নাকি হবে জনারণ্যে সমাদৃত নন্দিত প্রয়াণ?


পরলোকগমনঃ তাঁর সহযাত্রী কবি আল মাহমুদ লিখেন, “কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রি শেষে শুভ শুক্রবারে/ মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ/ অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে/ ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ”। কবি আফজাল চৌধুরীও বুঝিবা একই স্বপ্ন রচেছিলেন, তাই তো ২০০৪ সালের ৯ই জানুয়ারী শুক্রবারে তিনিও যাত্রা করেন পরলোকে।


কবর ফলকঃ আমি হতে ধরে নাও এই  একটি কথা/পরাজিত হই নি কখনও/ললাটে খচিত ছিল এই কথা, তথা/পরাজয় হবে না কখনও/ আমার শিয়রে পাতা শহীদি শিথান/ সত্যত্যাগ করিনি কখনও/ এখন শাশ্বতলোকে পুনরুত্থান/আফজাল-রাহমান/প্রতীক্ষায় আছি তাই/জাগ্রত এখনও ।


তথ্যসূত্রঃ
•  কবি আফজাল চৌধুরী কিছু স্মৃতি, কিছু কথা - মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ। দৈনিক সংগ্রাম
•  বাংলা সাহিত্যে কবি আফজাল চৌধুরী। দৈনিক সংগ্রাম
•  কবি আফজাল চৌধুরীর ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সিলেটের ডাক (ইংরেজী ভাষায়)।
•  কল্যাণব্রতের কবি আফজাল চৌধুরী। (দৈনিক নয়া দিগন্ত)
•  কল্যাণব্রতের কবি এবং কিছু স্মৃতি (দৈনিক নয়া দিগন্ত)  
•  কবি আফজাল চৌধুরী; (দৈনিক নয়া দিগন্ত)
•  আফজাল চৌধুরীর কবিতা প্রসঙ্গ “বিশ্বাসের দিওয়ান”; দৈনিক সংগ্রাম
•  আহমদ, জামিল (১ সেপ্টেম্বর ২০১৭); মানবতার কবি আফজাল চৌধুরী
•  কল্যাণব্রতের কবি আফজাল চৌধুরী; একটি নীরব আন্দোলন। দৈনিক জালালাবাদ (ইংরেজী ভাষায়), আমাদের পরিচিতি | কিশোরকণ্ঠ (ইংরেজী ভাষায়)।
•  আফজাল চৌধুরীঃ আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান এক কবি সত্তা - সৈয়দ ইকবাল (পায়রা - অনুপ্রাস সাময়িকী, জানুয়ারী ২০০৫ - বার্মিংহাম, ইউকে)
•  দুটো সনেট - আফজাল চৌধুরী (উদয়াচল, সরকারী বৃন্দাবন কলেজ সাময়িকী ১৯৯৬, হবিগঞ্জ)