লেখার সময় আমাদের ভাষাপ্রেম ধরে রাখতে হবে
সাইয়িদ রফিকুল হক


আমরা বলার সময় অনেক কথা বলি। আর হয়তো কথা শোনা ও বলার পরে তা একনিমিষে ভুলে যাই। আবার অনেকে হয়তো কিছুকথা মনে করেও রাখেন। কিন্তু শোনা ও বলা কথার পুরোটাই কারও মনে থাকে না। কিন্তু লেখার ভাষা ভিন্নরকম। আর আমরা এখন যা লিখছি তার কিন্তু প্রমাণ রয়ে যাচ্ছে। আমাদের ব্লগগুলো এখন দিনের-পর-দিন আরও আধুনিক আর ডিজিটাল হচ্ছে। আমাদের লেখাগুলো সেখানেও সংরক্ষিত রয়েছে। এভাবে, আমাদের লেখাগুলো পাঠকের কাছে চিরস্থায়ীভাবে রয়ে যাচ্ছে—আর তা গুগুলের কল্যাণে। তাই, আমাদের লেখার ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। ভুলেভরা লেখা আমাদের যে-কারও ইমেজবৃদ্ধিতে সংকটসৃষ্টি করবে। তাই, আমাদের মনে রাখতে হবে: বলা কথাগুলো বাতাসে ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের লিখিত বিষয়গুলো চিরস্থায়ীভাবে রয়ে যাচ্ছে। আর তা আগামীদিনের পাঠকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার অন্যতম-প্রধান শর্ত হলো: এর শুদ্ধতা। আর শুদ্ধ-লেখার কোনো বিকল্প নাই।


আমাদের ভাষা বাংলা। লেখার সময় আমাদের সবারই এই ভাষার প্রতি গভীর প্রেম ও শ্রদ্ধাবোধ রাখতে হবে। আর প্রতিটি বানানের প্রতি রাখতে হবে সজাগদৃষ্টি। আমরা যা লিখতে চাই—তা যেন অত্যন্ত শুদ্ধভাবে লিখি। বাক্যগুলোকে যত্নসহকারে করতে হবে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর আর পরিচ্ছন্ন। আর প্রতিটি শব্দকে সঠিক-বানানে বাক্যের সঙ্গে গেঁথে দিতে হবে। আরও বলতে চাই: প্রতিটি বর্ণকে ভালোবেসে আমাদের লেখার মধ্যে সাজাতে হবে।


বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। এই ভাষাকে কেন্দ্র করেই আমাদের একটি স্বাধীন-রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে। আর এই ভাষার জন্যই আমাদের পূর্বপুরুষেরা ১৯৫২ সালে হাসিমুখে-অকাতরচিত্তে জীবন দিয়েছেন। তাছাড়া, আমাদের বাঙালি-জনজীবনের সকল ধ্যান-ধারণাও এই ভাষাকেন্দ্রিক। আর তাই, এই ভাষার প্রতি আমাদের সর্বাপেক্ষা দরদপ্রকাশ করাটা খুবই জরুরি—আর সবার নৈতিক-দায়িত্বও বটে।


আমরা মুখে-মুখে অনেকে দেশপ্রেমের কথা বলে থাকি। কিন্তু বাস্তবে তা আর দেখতে পাওয়া যায় না। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা-জন্মভাষা আর রাষ্ট্রভাষা। সুতরাং, এই ভাষার প্রতি সবসময় অবিচল-আস্থা রেখে আমাদের সকল কাজে অগ্রসর হতে হবে। লেখার সময় আমাদের দেশকে সবার উপরে স্থান দিতে হবে। দেশের মঙ্গলের কথা বিবেচনা করেই আমাদের লেখনিশক্তিধারণ করা উচিত। আমাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস যার যেমনই হোক না কেন—লেখার সময় সাতবার চিন্তাভাবনা করে লেখার কাজে অগ্রসর হওয়া উচিত। নইলে, হঠাৎ করে অবিবেচকের মতো লেখার কাজে অগ্রসর হয়ে দেশের বিরুদ্ধে একটি কথাও আমাদের জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে লিখে ফেললে তার ক্ষমা পাওয়া দুষ্কর। কাজেকাজেই, সময় থাকতে নিজের অস্তিত্বের স্বার্থে সতর্ক হওয়াটা খুব জরুরি আর অত্যাবশ্যক। কোনো সাধারণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে লিখলে ক্ষমা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু নিজের বিপথগামী আবেগের তাড়নায় অসংযত হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বা রাষ্ট্রস্বীকৃত মহামানবোচিত জাতীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কিছু লেখার চেয়ে নিজের গালে চপোটাঘাত করা অনেক ভালো। এতে নিজের সাদামাটা অস্তিত্ব-বিলোপের সম্ভাবনা কম।


আমাদের ভাষা ও দেশ অনেক সংগ্রামের ফসল। এর পিছনে কিছুসংখ্যক মহামানবের অবদান রযেছে। বিশেষ করে জাতির নেতৃত্বদানে যে-সব মহামানব তাঁদের তেজস্বীভূমিকার জন্য জাতির ইতিহাসে স্মরণীয়—তাঁদের বিরুদ্ধে লেখা আর দেশের বিরুদ্ধে কিছু লেখা বা বলা একই কথা। জাতি তার সূর্যসন্তানদের অবজ্ঞাকারীদের কখনও ক্ষমা করবে না। কারণ, এঁরা আজ এই দেশ ও জাতিরই অংশ। অতএব, সময় থাকতে নিজের স্বার্থে বা আত্মরক্ষার্থে সতর্ক হওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। আর সবসময় মনে রাখতে হবে: আবোলতাবোল, উদ্ভট, আলতুফালতু, আজেবাজে, ভুলেভরা আর মিথ্যা কিছু লিখে এই জগতে চিরস্থায়ীভাবে মানবহৃদয়ে আসনলাভ করাটা একেবারেই অসম্ভব। আর তাই, আমাদের সুন্দর একটি আগামীর জন্য নির্ভুল, শুদ্ধ আর গ্রহণযোগ্য ভাষায় লেখার জন্য সবসময় সচেষ্ট হতে হবে। আজ থেকে আমাদের ভাষা হোক বন্ধুত্বের আলিঙ্গন।


সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
২৯/০১/২০১৭