তুমি কেমন আছো সুলেখা?
সাইয়িদ রফিকুল হক


তোমাদের বাড়ির ঠিকানাটা মনে ছিল
কিন্তু কী আশ্চর্য—ভুলে গেছি রাস্তাটা!
কত অলিগলি পেরিয়ে অনেক আশায়
একদিন গিয়েছিলাম তোমাদের বাড়িতে,
কত আশা ছিল মনে—আসবো প্রায় প্রতিদিন...।


তা আর হয়ে উঠলো না আমার জীবনে,
তোমার বড়ভাই তখন খুব অস্থির হয়ে উঠলেন!
যুদ্ধের আগেই তিনি তোমাকে দিবেন বিবাহ,
সৎপাত্রের সন্ধানে তার তখন গোরু-খোঁজার মতো
খুব ভয়ানক দুরাবস্থা! তা আজ আর কাউকে
বলে বোঝানো যাবে না।
আমার তখন করার কিছুই ছিল না,
হঠাৎ শুরু হয়ে গেল আমাদের বেঁচে থাকার যুদ্ধ,
এর মধ্যে বিবাহের প্রশ্নই আসতে পারে না।
তবুও তোমার বাবা-বড়ভাই লেগে পড়লো
শুধু তোমার একটা বিবাহের কাজে!
আর এদিকে দেশমাতার আহ্বানে আমি সদাপ্রস্তুত,
হাতে তুলে নিলাম একদিন গুলিভর্তি একখানা রাইফেল।
আরও কত গুলি গুঁজে রেখেছিলাম কোমরের ভাঁজে-ভাঁজে।
তারপর দেশমাতার সৈনিক হয়ে নিয়মিত যুদ্ধ করেছি
দেশের জন্য—মুক্তিযুদ্ধ করেছি আমাদের সবার জন্য।


আমি তখন মুক্তিযুদ্ধে—আর দেশ নিয়ে খুব ব্যস্ত,
তোমার কথা ভাবার আর কোনো সুযোগ পাইনি,
ভেবেছিলাম, আমাদের পবিত্র মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে
আবার একদিন তোমাদের সেই বাড়িতে যাবো,
তারপর খুব ধীরেসুস্থে তোমার বড়ভাইকে সবকিছু খুলে...।
কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না, আমি পড়ে রইলাম
সকলকিছু ত্যাগ করে শুধু দেশমাতার পবিত্র কাজে।


একদিন শুনলাম, দূরে কোথাও তোমার বিয়ে হয়ে গেছে!
অমনি ভুলে যেতে থাকলাম তোমাদের সেই বাড়িটার কথা,
আর মন থেকে মুছে যেতে লাগলো সেই অলিগলি, চেনা পথটা!
কিন্তু তোমাদের বাড়ির ঠিকানাটা এখনও যে মনে আছে!
মাঝে-মাঝে তোমাকে মনে পড়ে—তাই শুধু একটু ভাবি:
তুমি কেমন আছো সুলেখা?
তুমি কোথায় আছো সুলেখা?
আর তুমি কোথায়-কেমন আছো সুলেখা?



সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১৬/১১/২০১৭